ভুঁইফোড় সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন: টার্গেট চাঁদাবাজি
Published: 10th, February 2025 GMT
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নামে-বেনামের সংগঠন ও অধিকার আন্দোলন ব্যানারে চলছে সভা-সেমিনার ও মানববন্ধন। খোলা চোখে তাদের পেছনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা না গেলেও মূলত ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেই এসব আন্দোলন বা সভা সেমিনার হচ্ছে। তাদের টার্গেটে পড়ে কেউ হচ্ছেন সর্বস্বান্ত; আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী বা কোম্পানির সুনাম প্রশ্নের মুখে ফেলে আদায় হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ‘অধিকার আদায়ের’ নামে বিভিন্ন ব্যানার ব্যবহার হচ্ছে হরদম। এ ধরনের ডজনখানেক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
`ক্ষতিগ্রস্ত ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’ এমনই এক ভুঁইফোড় সংগঠন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি চিঠি বিলি করা হয়। তাতে বলা হয়, ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন হবে। তবে মজার বিষয় হলো চিঠির তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি উল্লেখ থাকলেও গণমাধ্যমে পাঠানো হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রেরকের ঠিকানা না থাকলেও বাইপাল, আশুলিয়া, সাভারের ঠিকানায় চিঠি ছেড়েছে এই নামসর্বস্ব সংগঠন।
বিষয়টি জানতে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন প্রেরকের সঙ্গে। তিনি জানান, তাকে ওপর থেকে যেভাবে বলা হয়েছে তিনি সেটিই করেছেন। প্রশ্ন করা হয়, “আপনি চিঠির তারিখ উল্লেখ করেছেন ১০ ফেব্রুয়ারি, তাহলে ৮ ফেব্রুয়ারি অগ্রিম তারিখ দিয়ে কীভাবে স্বাক্ষর করলেন?”
জবাবে জাহাঙ্গীর আলম রাজীব নামের এই চিঠি প্রেরক বলেন, তাকে যেভাবে বলা হয়েছে তিনি সেটিই করেছেন, আর কিছু জানেন না।
যে সংগঠনের ব্যানারে চিঠি পাঠিয়েছেন, সেটির নিবন্ধন আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না নেই।” তবে তাকে এই চিঠি পাঠানোর জন্য ঢাকা থেকে জনৈক এক ব্যক্তি পরামর্শ দিয়েছেন, তাই তিনি স্বাক্ষর করে সেটি পাঠিয়েছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম রাজীব।
শুধু একটি বা দুটি নয়, জানা গেছে এমন ডজনখানেক সংগঠনের খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দারা। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজির স্বার্থে এসব সংগঠনের নাম ব্যবহার করে থাকে।
জাহাঙ্গীর আলম রাজীবের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি গত এক দশক ধরে সাভারের বাইপালে স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বেক্সিমকো গ্রুপে কাজ করতেন। মূলত বেক্সিমকো গ্রুপের অর্থায়নে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছেন যুবলীগের এই কর্মী।
বাইপালের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল চৌধুরী। ৫ আগস্টের পর তিনি এখন অধিকার আন্দোলনের নেতা বনে গেছেন। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে লোক জড়ো করে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে শিল্পকারখানায় অস্থিরতার নেপেথ্যওে একই ধরনরে ভুঁইফোড় সংগঠন জড়িত বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স গঠন র ব য ন র
এছাড়াও পড়ুন:
নূর মোস্তফার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে মানববন্ধন
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় গুলিতে নিহত নূর মোস্তফাকে শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং শহীদ পরিবারকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে দুটি সংগঠন। স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (এসএডি) ও জুলাই রেকর্ডস নামে দুটি সংগঠন আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
জুলাই রেকর্ডসের সদস্য ইব্রাহিম মাহমুদ বলেন, নূর মোস্তফা গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন দুপুরে হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বাবা শফিউল আলম আর মা নূর বেগম।
ইব্রাহিম মাহমুদ বলেন, নূর মোস্তফার মা–বাবা ১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন এবং ঈদগাঁও এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। নূর মোস্তফার জন্ম ও শিক্ষাজীবন বাংলাদেশে হলেও মা–বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তাঁর নাম জুলাই শহীদের রাষ্ট্রীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাঁর পরিবার কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বা সহায়তা পায়নি।
মানববন্ধনে ইব্রাহিম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এখানে খুব বেশি কিছুর জন্য দাঁড়াইনি। আমরা দাঁড়িয়েছি ইনসাফের জন্য। সরকারে থাকা ছাত্র উপদেষ্টাকে জানানোর পর, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পরও যদি নূর মোস্তফাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তাহলে এটা হবে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় লজ্জার।’
মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমরা আগেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে শহীদ নূর মোস্তফার স্বীকৃতির জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। এ ছাড়া তাঁর পরিবারকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। জুলাই শহীদদের এবং আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, ‘নূর মোস্তফা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হয়েছেন। অবিলম্বে তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।’
জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভের সদস্য হাসান ইনাম বলেন, ‘একজন শহীদের স্বীকৃতি আমরা আদায় করতে পারছি না। নূর মোস্তফার স্বীকৃতির দাবিতে আমরা অনলাইনে অ্যাক্টিভিজম করলে সেখানে যাঁরা জুলাইকে উপজীব্য করে রাজনীতি করে, তাঁরা সংহতি জানাননি। নিজ দলের কর্মীদের নিয়ে কথা বললেও নূর মোস্তফাকে নিয়ে কথা বলেন না।’