১ মাস ৯ দিন শুরু হলো টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রয়, ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি
Published: 10th, February 2025 GMT
রাজধানীর কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন গৃহিণী রাজিয়া সুলতানাসহ প্রায় ১৫ জন নারী। একটু দূরে ছয়জন পুরুষকেও দাঁড়িয়ে। তাঁদের সবার অপেক্ষা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের জন্য।
ঠিক সকাল ১১টা ২৯ মিনিটে টিসিবির পণ্য বোঝাই ট্রাকটি আসে সেখানে। ট্রাক দেখেই হুড়মুড় করে ছুটতে শুরু করেন উপস্থিত নারী-পুরুষেরা। তাঁদের দেখাদেখি আশপাশ থেকে আরও মানুষ আসতে শুরু করেন। মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে টিসিবির ওই ট্রাকটির পেছনে দুই শতাধিক মানুষের সারি তৈরি হয়ে যায়। টিসিবির ট্রাকে ২৫০ মানুষের জন্য পণ্য থাকে। অর্থাৎ আরেকটু সময় পরেই যেসব মানুষ লাইনে দাঁড়াবেন, তাদের অনেকে শেষ পর্যন্ত পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন না। এই ভিড়ের কারণ হলো, টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনলে ৪০০ টাকার মতো বাঁচবে।
১ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবারও ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে সরকারি সংস্থা টিসিবি। ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি করছে সংস্থাটি।
এ দফায় টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও আধা কেজি খেজুর ১৫৫ টাকায় বিক্রি করছে সংস্থাটি। মূলত আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে।
টিসিবির ট্রাকের পেছনে অপেক্ষায় থাকা গৃহিণী রাজিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল খবরে দেখেছি, আজ থেকে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হবে। তাই সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করেছি।’
কাজী পাড়াতেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে টিসিবির ট্রাক দেখে তার পেছনে দাঁড়িয়ে যান। শফিকুল বলেন, ‘আজ যে পাঁচটি পণ্য দেওয়া হচ্ছে, সবগুলোই জরুরি। বাইরে থেকে কিনতে গেলে অন্তত ৩৫০-৪০০ টাকা বেশি লাগবে। তাই টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে গেছি। অফিসে জানিয়েছি-ফিরতে কিছুক্ষণ দেরি হবে।’
টিসিবির ট্রাক থেকে সবগুলো (পাঁচটি) পণ্য কিনতে একজন ভোক্তার ব্যয় হবে ৫৮৮ টাকা। বাজার থেকে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে ভোক্তাদের প্রায় ১০০০ টাকা ব্যয় হবে।
নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। ৩১ ডিসেম্বরের পর এই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর স্বল্প বিরতি দিয়ে আজ থেকে পুনরায় এই কার্যক্রম শুরু করছে টিসিবি।
টিসিবির এই ট্রাকে পণ্য বিক্রি নিয়েও সাধারণ মানুষের কিছু অভিযোগ আছে। যেমন, কাজীপাড়ায় টিসিবির পণ্য নিতে আসা রাফায়েত চৌধুরী বলেন, ‘টিসিবির ট্রাকসেল সরকারের লস প্রজেক্ট; এটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’
তাঁর এই কথার কারণ জানতে চাইলে রাফায়েত বলেন, স্থানীয় দোকানদার ও আশপাশে থাকা লোকেরা প্রতিদিনই ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে পণ্য নেয়। এই পণ্য নেওয়ার জন্য একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গেছে। তাঁরা একে অপরকে খবর দিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের মতো নিম্ন আয়ের ও ছোট চাকরি করা মানুষেরা লাইনে ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জানতেই পারি না, কোথায় ও কবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। সরকার এনআইডি কার্ড ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে এই পণ্য বিতরণ কার্যক্রম করলে একই লোক বারে বারে পণ্য নেওয়ার সুযোগ পাবেন না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আগের ছন্দে বোলিং করতে পারছি’
ছন্দে থাকা বোলার এবাদত হোসেন দুর্ভাগ্যক্রমে চোটে পড়েছিলেন ২০২৩ সালে। ইংল্যান্ডে অস্ত্রোপচার করা, ১৫ মাস চোট পরিচর্যা, লড়াই করার মানসিকতায় ফেরার সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। জাতীয় লিগ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন। খেলেছেন এনসিএল টি২০ টুর্নামেন্টে, বিপিএলে পাঁচ ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষায় আছেন এবাদত। দেড় বছরের সংগ্রাম, নিজেকে ছন্দে ফিরে পাওয়া ও জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষা নিয়ে সেকান্দার আলীর কাছে মন খুলে কথা বলেছেন এবাদত হোসেন।
সমকাল : বিপিএলের লিগ পর্বে ৯ ম্যাচ বসে ছিলেন। ওই সময়ের অনুভূতি কেমন ছিল?
এবাদত : একজন খেলোয়াড় ম্যাচ খেলার জন্য সব সময় উন্মুখ থাকে। আমারও আকাঙ্ক্ষা ছিল। বিপিএলে খেলার জন্য সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। সব সময় চেয়েছি সুযোগ পেলেই নিজেকে মেলে ধরতে। এমনভাবে খেলতে চাইনি, যেন টিম ম্যানেজমেন্ট বলে– ‘তোমাকে সুযোগ দিলাম, অথচ প্রতিদান দিতে পারলে না।’ বরং আমি চেয়েছি এমনভাবে খেলব, যেন ম্যানেজমেন্ট আফসোস করে আরও আগে কেন সুযোগ দিলাম না। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত রেখেছি। সুযোগ পাওয়ার পর আমাকে কিন্তু আর বসে থাকতে হয়নি।
সমকাল : মিরপুরে খুলনার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলার সময় মনের ভেতরে কী কাজ করেছে?
এবাদত : বিপিএলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি। ১৭ মাস পর হাইভোল্টেজ টি২০ লিগে ম্যাচে খেলতে নামার পর একটু নার্ভাস ছিলাম। এক-দুটি বল যাওয়ার পর জড়তা কেটে গেছে। যেটা করতে চেয়েছি, সেটা হচ্ছিল। মুশফিক ভাই বলছিলেন, তুই যেভাবে বলছিস সেটাই করতে থাক। উইকেট পাওয়ার পর চাঙ্গা হয়ে উঠি। আগের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। প্রথম ম্যাচে ৪৫ রান দিয়ে একটি উইকেট পেয়েছি। ওই ম্যাচের পর ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর আস্থা রেখেছে; প্লে-অফের কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল ম্যাচ খেলেছি।
সমকাল : জিমি নিশামের মতো অলরাউন্ডার থাকার পরও ফাইনালে খেলার সুযোগ পাওয়া কতটা সম্মানের?
এবাদত : আমি ও আলি পেস বোলার হিসেবে খেলছিলাম। মুশফিক ভাই বল হাতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোরা দুইজন ছন্দে আছিস। বোলিং ভালো হচ্ছে। ছন্দটা ধরে রাখ।’ মুশফিক ভাই বা তামিম ভাইয়ের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ওই রকম কথা শোনার পর ভালো না করে থাকা যায় না। আমরা ভালো করাতেই শেষ চার ওভারে আমি, মায়ার্স ও আলি ৩১ রান দিয়েছি। স্লগে রান চেক দেওয়া সম্ভব না হলে চিটাগংয়ের রান দুইশ ছাড়িয়ে যেত। ওটা হতে না দেওয়ায় মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা ছিল।
সমকাল : চোট পরিচর্যা করার সময় মনোযোগ ধরে রাখা কতটা কঠিন ছিল?
এবাদত : অনেক কঠিন ছিল। কিছু করারও ছিল না। পেশাদার খেলাধুলায় আবেগের কোনো মূল্য নেই। আমি জানতাম, আমাকে পুরোপুরি ফিট হয়ে ম্যাচে ফিরতে হবে। জাতীয় লিগ দিয়ে শুরু করি। এনসিএল টি২০তে পাঁচ ম্যাচ খেলে ১০ উইকেট নিই। ওই টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স করায় বিপিএলে দল পেয়েছি। প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে। ধৈর্য, একাগ্রতা না থাকলে যে কোনো ইনজুরি থেকে ফেরা কঠিন।
সমকাল : ইনজুরির কারণে দুটি বিশ্বকাপ ও একটি এশিয়া কাপে ছিলেন না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও মিস করবেন। এই টুর্নামেন্টগুলোতে দল আপনাকে কতটা মিস করেছে?
এবাদত : অনেক মিস করেছে। কারণ আমি পুরোনো বলের বোলার। বিশ্বকাপে পুরোনো বলে বল করার মতো কেউ ছিল না। এ কারণে কোচ, অধিনায়ক বারবার আমার কথা বলেছেন। একটি দলে সব ধরনের বোলার থাকলে অধিনায়ক পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলার পরিবর্তন করতে পারেন। আমার চেষ্টা থাকে ব্রেক থ্রু দেওয়া। সেট জুটি ভেঙে দেওয়া। বিপিএলেও তাই করেছি।
সমকাল : বিপিএলে যখন ম্যাচ পাচ্ছিলেন না, আপনাকে প্রতিদিন জিমে দেখা যেত। নেটে বোলিং করতেন নিয়মিত। এগুলো কি রুটিন কাজ ছিল?
এবাদত : হ্যাঁ, রুটিন কাজ ছিল। ফিজিও নাথান যে রুটিন দিয়েছিলেন, সেটি অনুসরণ করেছিলাম। পেশির শক্তি বাড়াচ্ছিলাম। পুরো ছন্দে বোলিং করতে পেরেছি পুনর্বাসন ভালো হওয়াতে। সামনে আরও ভালো হবে। এক-দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারলে আরও নিখুঁত হবে বোলিং।
সমকাল : প্রধান কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে? তারা আপনার বোলিং দেখে কী বলেছেন?
এবাদত : আমাদের অধিনায়ক শান্ত ভাই খুব প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, টেস্ট খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ আছে। ইনশাআল্লাহ সেখানে খেলব। কোচও বলেছেন, ভালো হচ্ছে। ট্রেনার নাথান বলেছেন, ১৪২ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করতে পারছে মানে ফিট। যে কোনো সংস্করণে খেলতে পারবে।
সমকাল : চোট পরিচর্যার লম্বা সময়ে সবার কাছ থেকে কেমন সাপোর্ট পেয়েছেন?
এবাদত : বিসিবি আমাকে সর্বাত্মক সাপোর্ট দিয়েছে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ, মেডিকেল বিভাগ সব সময় পাশে ছিল। জাতীয় দলের সঙ্গে ভারতে নিয়ে গেছে নেটে অনুশীলন করার জন্য। এই যে জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া, তা মেন্টাল গেম। একজন খেলোয়াড়ের জন্য যেটা বিরাট সাপোর্ট। কারণ আমি ভাবতে পেরেছি, আমাকে দল নিজেদের একজন মনে করছে। আমাকে তারা দলে চায়। এর বাইরে যেটা আছে, আমার ছোট ভাই খুব যত্ন নিয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম করে পা ম্যাসাজ করে দিত। ওকে ধন্যবাদ।
সমকাল : টেস্ট দিয়ে শুরু করে তিন সংস্করণের নিয়মিত বোলার হয়ে উঠেছিলেন। পুরোনো জায়গা ফিরে পেতে কতটা সময় লাগতে পারে?
এবাদত : খুব বেশি সময় লাগার কথা না। ওয়ার্ক লোড ম্যানেজ করে, কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে দ্রুত পুরোনো জায়গায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।
সমকাল : কোন সংস্করণ বেশি উপভোগ করেন?
এবাদত : টেস্ট। কারণ, যে টেস্টে ভালো করবে, সে বাকি দুই সংস্করণ অটো খেলতে পারবে। টেস্টের বোলিং নিখুঁত হতে হয়। বাজে বল পেলে ব্যাটার মেরে দেবে। এ কারণে বোলারদের টেস্ট খেলা উচিত। আমি তিন সংস্করণের বোলার হতে পেরেছি টেস্টে ভালো করার কারণে।
সমকাল : সামনে তো লাল বলের খেলা নেই, কীভাবে টেস্টের প্রস্তুতি নেবেন?
এবাদত : সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলব। লিগের খেলা খেলতে খেলতেই লাল বলে প্র্যাকটিস করব। প্রসেস অনুসরণ করতে পারলে কোনো সমস্যা হবে না।
সমকাল : শেষ প্রশ্ন, বিপিএলে ফিরেই চ্যাম্পিয়ন হলেন, কেমন লাগছে?
এবাদত : এটা দারুণ একটা ব্যাপার। আমাদের দলটি সেরা ছিল। জাতীয় দলের ক্রিকেটারে ঠাসা। সেখানে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া কঠিন। আমি জায়গা করে নিতে পেরেছি এবং ফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা দারুণ একটা ব্যাপার। ২০১৭ সালে রংপুরের হয়ে জিতেছি, এবার বরিশালের হয়ে।