চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে পরিকল্পনাহীন বিসিবি
Published: 10th, February 2025 GMT
বিপিএল শেষ হওয়ার পরদিনই মাঠে নেমে পড়েছে বাংলাদেশ দল। এর পরও গত শনিবার দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া অনুশীলন দেখে অনেকেই বাঁকা হাসি হেসেছেন। এই বিদ্রুপের কারণটা বুঝতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। টি২০ থেকে এক লাফে ওয়ানডেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ এক ফরম্যাট থেকে অন্য ফরম্যাটে মানিয়ে নিতে বাংলাদেশ দলের যে কিছুটা সময় লাগে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরিকল্পনার সময় সেটা হয়তো মাথাই ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ১০ দিন আগে অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ। ভ্রমণ ও নানা আনুষ্ঠানিকতার কারণে সর্বোচ্চ সপ্তাহখানেক অনুশীলনের সুযোগ শান্ত-সৌম্যরা পাবেন কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশ দল সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিল গত ১২ ডিসেম্বর উইন্ডিজে। ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করবে তারা। ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আড়াই মাস ওয়ানডে না খেলা আবার অজুহাত হয়ে দাঁড়াবে না তো?
বিসিবির এক কর্তা অবশ্য বলেছেন, বিপিএলের জন্য উইন্ডো অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত। তাই এখানে বিশেষ কিছু করার ছিল না। আর বিপিএলে তো ক্রিকেটাররা খেলার মধ্যেই ছিলেন। তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া টি২০ ও ওয়ানডে একই ধরনের বলে (সাদা বল) খেলা হয়। ওয়ানডে হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাট। এখানে অনভ্যস্ততার প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলেও জানালেন ওই বিসিবি কর্তা।
তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাকি দলগুলোর দিকে তাকালেই বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনার দীনতা ফুটে ওঠে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে আসরের স্বাগতিক পাকিস্তান ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলছে। তিন দেশই যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি হিসেবে এই টুর্নামেন্টকে নিয়েছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
চলমান ভারত-ইংল্যান্ড তিন ওয়ানডের সিরিজও যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মহড়া, সেটা দুই দলের ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই পরিষ্কার বোঝা যায়। আসরের আরেক হট ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষ করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির জন্য অসিরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২টি ওয়ানডেও খেলবে।
আফগানিস্তান কেবল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল দেড় মাস আগে। তারাও বাংলাদেশের মতোই মাঠে নামছে। তারা জিম্বাবুয়ে সফর শেষ করেছে গত ৬ জানুয়ারি। এর পর থেকে তাদের ক্রিকেটাররা বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়াচ্ছেন। অবশ্য আফগানরা মানিয়ে নেওয়ায় বেশ পটু।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম য সরক র ল দ শ দল
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরার সেই শিশুটি কী বলে গেল
বারবার হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে যেতে চাইছে। বন্ধ হওয়া হৃদয়টাকে প্রচণ্ড শক্তিকে ধাক্কা দিয়ে আবারও চালু হতে বলছে গোটা দেশ। পারছে না শিশুটি। আট বছরের ছোট্ট শরীরে বেঁচে থাকার কোনো শক্তি আর অবশিষ্ট নেই যে!
কেন বেঁচে থাকবে? কেউ কি তাকে বাঁচাত, যদি আবারও সে কেঁদে বলত, ‘মা, আমি ঘরে ফিরে যেতে চাই!’ নাকি আরও লাখো শিশুর মতো তাকেও আবার বলা হতো, ‘সব ভুলে যা মা, এসব কথা কাউকে বলতে নেই!’
শিশুটি আর কোনো অভিযোগ করবে না। ছোট্ট সাদা কাফনে মোড়ানো শিশুটিকে আজকে যখন তার মা শেষবারের মতো ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন, তখন হয়তো তাঁর বারবার একটি কথাই মনে পড়বে, ‘ইশ! ক্যান যে পাঠাইছিলাম!’ কিন্তু সময় কেবল সামনেই বয়ে চলে।
আজকে দেশজুড়ে অনেক নিন্দা, অনেক প্রতিবাদ। খুব ভালো। কিন্তু শুধু দোষীদের ফাঁসি চাইলেই কি শিশুরা নিরাপদ হবে? কে অপরাধী? শুধু কি তারাই যারা ধর্ষণ করে, নাকি পুরো সমাজ, যারা এখনো মনে করে কোনো নারীর ওপর কোনো পুরুষ বিকৃত যৌনাচার চালালে নারীর শ্লীলতা বা সম্ভ্রমহানি হয়?
মাগুরার শিশুটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল নীরব অভিমানে। হয়তো তার শেষ প্রশ্ন ছিল, মা কেন তার কথা শুনলেন না? কেন তার নিরাপত্তার কথা ভাবলেন না? সে দোষ কি একা তার মায়ের, নাকি আমরা সবাই মিলে আমাদের মায়েদের শিখিয়েছি, ঘরের কিংবা বাইরের পুরুষ আমার সন্তানের গায়ে হাত দিলে, সে দোষ আমার সন্তানের। এতে নারী অপবিত্র হয়, বিকৃত পুরুষ নয়। তাই নারীর এ ‘লজ্জা’ লুকিয়ে ফেলাই শ্রেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে আরও অনেক শিশুর অশ্রু দেখার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
পরিবারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে, মায়েদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে যৌনতা নিয়ে কথা বলতে হবে। তারা যদি না–ই জানে, বিকৃত যৌনাচার কী, কীভাবে তারা এর শিকার হতে পারে, তাহলে তারা নিজেদের রক্ষা করবে কীভাবে?
সবচেয়ে জরুরি পরিবারের মধ্যে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে একটি শিশু নির্দ্বিধায় তার আপনজনকে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারবে। তার মধ্যে এই ধারণা গড়ে দিতে হবে, বিকৃত যৌনাচারের দায় তার নয়; বরং দায় সেই অমানুষটির, যে শিশু কিংবা নারীর শরীরে আপত্তিকরভাবে হাত দেয়।
ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন এমন একটি ব্যাধি, যেটি শুধু আদালত কিংবা পুলিশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে জড়িত নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। আর তা পরিবর্তনের পথ হলো শিক্ষা এবং সচেতনতা। অনেকে বলতে পারেন শিশুদের কেন আমরা যৌনতা সম্পর্কে পড়াব? উত্তর সহজ, মাগুরার ঘটনায় ধর্ষক ভেবে দেখেনি শিশুর বয়স তো মাত্র ৮। তাই ধর্ষণের বিরুদ্ধে লড়াই এই শিশুদের অন্ধকারে রেখে করা সম্ভব নয়।আমাদের সন্তানেরা তাদের সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোর কাছে এই বিকৃতির শিকার হয়। এরা কেউ মামা, কেউ চাচা, কেউ বড় ভাই, কেউ গৃহশিক্ষক। কিন্তু তাদের একমাত্র পরিচয় হওয়া উচিত তারা বিকৃত রুচির মানুষ। এদের বিরুদ্ধে কথা বলার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। চুপ করে থাকাটা কোনো সমাধান নয়।
যখন পরিবারের কেউ এ ধরনের আচরণ করে, পরিবারের সম্মানহানি করে সেই মানুষটিই। যে এই আচরণের শিকার, সে নয়। এই সহজ কথাটা আমাদের বাবা–মায়েদের বুঝতে হবে। বোঝাতে হবে আমাদের সন্তানদের। পোশাক বা বয়স নির্বিশেষে নারী ও শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হন। বিকৃতির হাত বাইরের চেয়ে ঘরের ভেতরে অনেক বেশি প্রকট। তাই প্রতিরোধ শুরু হতে হবে ঘরের ভেতর থেকে।
ধর্ষণের ও নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে সাজার হার এ দেশে বরাবরই লজ্জাজনক। এখানে একদিকে বিচার চাইতে এসে নারীরা যেমন নানা রকম হয়রানির শিকার হন, তেমনি আছে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবণতা। আইন পরিবর্তন করে ২০২০ সালেই ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাতেই কি ধর্ষণের সংখ্যা কমেছে?
আরও পড়ুনবাড়ির বাইরে, বাড়ির ভেতরে—নিরাপত্তা নিয়ে ভীত আমরা০৯ মার্চ ২০২৫এখানে সর্বোচ্চ শাস্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার চেয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করায়। গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বিচারপ্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ওপর। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিচার চাইতে এসে পদে পদে হয়রানি বন্ধ করা। সেখানে বিচারক এবং আইনজীবী উভয়েরই দায় রয়েছে।
ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন এমন একটি ব্যাধি, যেটি শুধু আদালত কিংবা পুলিশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে জড়িত নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। আর তা পরিবর্তনের পথ হলো শিক্ষা এবং সচেতনতা। অনেকে বলতে পারেন শিশুদের কেন আমরা যৌনতা সম্পর্কে পড়াব? উত্তর সহজ, মাগুরার ঘটনায় ধর্ষক ভেবে দেখেনি শিশুর বয়স তো মাত্র ৮। তাই ধর্ষণের বিরুদ্ধে লড়াই এই শিশুদের অন্ধকারে রেখে করা সম্ভব নয়।
বাবা–মায়েদের বলব, আজই আপনার সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন, সে হোক ছেলে বা মেয়ে। তার শরীরের কোন কোন অংশ অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারে না, তা তাকে জানান। সে এমন কোনো অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে কি না, যা তার ভালো লাগেনি, তা তার কাছে জানতে চান। যদি এমন কিছু হয়েই থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আওয়াজ তুলুন। আপনার সন্তান চিরতরে হারিয়ে গেলে, পরিবারের ‘সম্মান’ আপনার কাছে অর্থহীন ঠেকবে।
মানজুর–আল-মতিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী