বানরের ‘হানায়’ শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যত আলোচনা
Published: 10th, February 2025 GMT
একটি বানর, আর সেটিকে ঘিরে তোলপাড় পুরো শ্রীলঙ্কায়। গতকাল রোববার দেশটির একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ‘হানা’ দেয় একটি বানর। তাতেই পুরো শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। দেশজুড়ে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ।
এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কুমারা জয়াকোদি। ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যেই শোরগোল ফেলে দেয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঘটনাটি নিয়ে ব্যঙ্গ ও সমালোচনা করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাজধানী কলম্বোর দক্ষিণে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ‘হানা’ দেয় একটি বানর। এতে পুরো দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা যায়।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার চালু করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য কলম্বো পোস্ট জানায়, পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ–সংযোগ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আর পানি পরিশোধন কেন্দ্রগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কুমারা জয়াকোদি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ট্রান্সফরমারের সংস্পর্শে আসে একটি বানর। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।’
ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। কেউ কেউ কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও করছেন।
এক্স পোস্টে মারিও নাওফেল নামের একজন লেখেন, ‘কলম্বোয় একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে বিপর্যয় সৃষ্টির পর পাজি বানরটি দেশের পুরো গ্রিডে ধস নামিয়েছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘একটি বানর পূর্ণাঙ্গ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। অবকাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে?’
শ্রীনি আর নামের আরেকজন ব্যবহারকারী এক্সে লেখেন, ‘অতীতে বানরের ব্যবসার অভিজ্ঞতা রয়েছে শ্রীলঙ্কার।’ পোস্টে তিনি একটি হনুমানের ছবিও যুক্ত করে দেন।
স্থানীয় পত্রিকা ডেইলি মিররের প্রধান সম্পাদক জামিলা হুসেইন বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে বানরের দলের লড়াই হওয়ায় পুরো দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা শুধু শ্রীলঙ্কাতেই ঘটতে পারে।’
আরও পড়ুনএক বানরের কাণ্ডে অন্ধকার পুরো শ্রীলঙ্কা৪ ঘণ্টা আগেআজ সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডেইলি মিরর বলছে, প্রকৌশলীরা ‘বছরের পর বছর ধরে’ সরকারগুলোকে বিদ্যুৎ গ্রিড হালনাগাদ করার জন্য সতর্ক করে আসছেন। এমনটা করা না হলে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তাঁদের।
এর আগে ২০২২ সালে অর্থনৈতিক সংকট চলার সময় শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক পরিসরে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা গিয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষক অবহেলিত কেন?
দীর্ঘকাল ধরে কৃষকসমাজ অবহেলিত। তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদিত হয়, কিন্তু রাষ্ট্র তাদের যথাযথ মূল্য ও স্বীকৃতি দেয় না। অনেক কৃষক এখনও আধুনিক প্রযুক্তি, ভালো বীমা এবং সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত।
সরকার কিছু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিলেও মূল সমস্যাগুলো এখনও রয়ে গেছে। কৃষকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকরী সহায়তা, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং সঠিক মনোযোগ তাদের নাজুক অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। তাদের স্বার্থরক্ষা এবং তাদের উন্নয়ন অবশ্যই দেশের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। তারা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, কিন্তু তাদের পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি। আমাদের দেশে কৃষকদের যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো ঋণের বোঝা, মূল্যহীন ফসলের দাম, অভ্যন্তরীণ বাজারে তাদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির অভাব, প্রশিক্ষণের স্বল্পতা এবং দুর্বল বীমা ব্যবস্থা ইত্যাদি। সরকার ভর্তুকি মূল্যে সার, কীটনাশক ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সরবরাহ, কৃষি তথ্যসেবা এবং সেচ ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তাদের জন্য কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করছে। এই উদ্যোগগুলো আরও উন্নত এবং ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে কৃষকরা প্রকৃত সুবিধা পান।
একই সঙ্গে কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি। প্রয়োজন কৃষকদের জন্য আরও সমন্বিত পরিকল্পনা এবং তাদের জীবিকার উন্নয়নের জন্য প্রকৃত নীতি গ্রহণ করতে হবে। কৃষি খাতের প্রতিটি স্তরে প্রয়োগযোগ্য সঠিক নীতি এবং সমর্থন কৃষককে তাদের অবহেলা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
দেশের মানুষকে কৃষকদের প্রতি আরও সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কারণ তারাই আমাদের খাবার সরবরাহের প্রধান অবলম্বন। কৃষকদের প্রতি অবহেলা এবং তাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। শুধু সরকারি নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের সবারই এই সমস্যার প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। কৃষকদের সঠিক মূল্য ও সম্মান দেওয়া, তাদের জীবিকা নিশ্চিত করা এবং তাদের খাদ্য নিরাপত্তা ঠিক রাখতে বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার।
প্রথমত, কৃষির আধুনিকীকরণ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। অনেক কৃষক এখনও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন, যা তাদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। আধুনিক প্রযুক্তির প্রবর্তন, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার কৃষকদের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে। এগুলোর উপযোগিতা এবং ব্যবহার সবার কাছে নিশ্চিত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। ঋণের চাপ ও বঞ্চনা, অস্বচ্ছ কৃষিবাজার, প্রকৃত দামে ফসল বিক্রি করতে না পারা– এই সমস্যাগুলোর সমাধান ছাড়া তাদের জীবনমান উন্নত করা সম্ভব নয়। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি, বেসরকারি খাতেরও এই বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত। এ ছাড়া কৃষকদের জন্য স্থায়ী সুদহীন ঋণ, অর্থনৈতিক সুরক্ষা এবং সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা জরুরি।
তৃতীয়ত, একটি কার্যকর এবং স্বচ্ছ কৃষিবাজার ব্যবস্থা তৈরি করা দরকার। এখনও অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাযন না, যেহেতু মধ্যস্বত্বভোগীরা অধিকাংশ লাভ নিয়ে যায়। ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে আধুনিক বাজার ব্যবস্থা, সরাসরি কৃষক-বাজার লিঙ্ক এবং সরবরাহ চেইন উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া, কৃষকদের সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক পরিবারের সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা তাদের উন্নয়নে সহায়ক হবে।
তবে, সব সমস্যার মূলে রয়েছে কৃষি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন এবং কৃষকদের উন্নতির জন্য সঠিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা। একমাত্র তখনই তারা তাদের মেধা ও পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পাবেন এবং তারা দেশের উন্নয়নে সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারবেন।
আক্তার মনি
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
aktermonia031@gmail.com