মাংসসহ মৃত হরিণ ও ৪৮০টি ফাঁদ উদ্ধার
Published: 10th, February 2025 GMT
সুন্দরবনে শিকারিদের পেতে রাখা ফাঁদে আটকে মারা যাওয়া একটি হরিণ ও প্রায় ১৬ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। একই অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৮০টি হরিণ শিকারের ফাঁদ।
রোববার বিকেলে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কদমতলা স্টেশনের পাশে এই উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন কদমতলা স্টেশন অফিসার সোলায়মান হোসেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত টহলের সময় বনরক্ষীরা সুন্দরবনের কদমতলা স্টেশনের এক কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় হরিণের মাংস উদ্ধার করেন। পাশের এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ফাঁদে আটকে মৃত একটি হরিণও পাওয়া যায়। এরপর আরও ৪৮০টি নাইলনের দড়ি দিয়ে তৈরি দামন ফাঁদ উদ্ধার করা হয়।
স্টেশন অফিসার সোলায়মান হোসেন জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃত মাংসসহ মৃত হরিণ আদালতে পাঠানো হয়েছে। শিকার চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করতে স্থানীয়দের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। বন আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি পশ্চিম সুন্দরবনের চুনকুড়ি ও মীরগাং টহল ফাঁড়ির সদস্যরা পৃথক দুটি অভিযানে একটি জীবিত ও একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছিল। শিকারিরা ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করলেও বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গোলপাতা আহরণে ডাকাত, সমন্বয়ক, সাংবাদিকদের নামেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
সুন্দরবনে চলতি মৌসুমে গোলপাতা আহরণে পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ বাওয়ালিদের। তাঁদের দাবি, বন কর্মকর্তাদের তো বটেই, ডাকাত দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাংবাদিকদের নামেও ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। গোলপাতা আহরণের জন্য নৌকাপ্রতি সরকারকে যে টাকা রাজস্ব দিতে হয়, ঘুষ দিতে হচ্ছে এর কয়েক গুণ বেশি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাওয়ালিরা লোকসান বাঁচাতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত গোলপাতা নৌকায় করে আনছেন। গোলপাতার আড়ালে আনছেন বিভিন্ন গাছের খণ্ড। এতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়ছে সুন্দরবন। অনেক বাওয়ালি লোকসানে পড়ে তাঁদের গোলপাতার ব্যবসা বন্ধ করার ঘোষণাও দিয়েছেন।
কয়রা নদীর তীরে বাঁধা নৌকা থেকে গোলপাতা নামানোর ফাঁকে বাওয়ালি খলিলুর রহমান বলেন, ‘যে ভাত খায়, সে ঘুষও খায়। বনে ঢুকলি ফরেস্টারগে ঘুষ দিতিই হবে। না হলি নানান হয়রানি। জরিমানা তো গুনতি হবে। যাঁরা এখন নতুন করি দেশ আরেকবার স্বাধীন করিছে, তাঁরাও টাকা খায়। আগের চাইতে এখন আরও বেশি ঘুষ দিতি হচ্ছে।’
বাওয়ালিদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলার সংগঠক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাওয়ালিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় আমাদের স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এমন কোনো কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন–সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে এমন কোনো কর্মকাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তি প্রদানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমন্বয়কদের নামে যাঁরা চাঁদাবাজি করছেন, তাঁদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
নির্ধারিত রাজস্বের বাইরে বাওয়ালীদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান। গোলপাতার সঙ্গে বন থেকে গাছ কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গোলপাতার সঙ্গে বন থেকে কোনো গাছ কাটতে পারবেন না বাওয়ালিরা। এমনকি নৌকায় ঝুল হিসেবেও কাঠ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা কাটার মৌসুম শুরু হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। শেষ হবে ৩১ মার্চ। প্রথম দফায় ২৮ দিনের অনুমতি পেয়ে ৮৯টি নৌকায় গোলপাতা কেটে লোকালয়ে ফিরছেন বাওয়ালিরা। একেকটি নৌকায় সর্বোচ্চ ১৮৬ কুইন্টাল অর্থাৎ প্রায় ৫০০ মণ গোলপাতা বহনের অনুমতি দেয় বন বিভাগ। আহরণ করা প্রতি কুইন্টাল গোলপাতার জন্য বন বিভাগকে ৬০ টাকা করে রাজস্ব দিতে হয়।
মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবনসংলগ্ন শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাওয়ালিরা নদীর বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে স্তূপ আকারে কেটে আনা গোলপাতা সাজিয়ে রাখছেন। নদীর পাড়ে বাঁধা রয়েছে গোলপাতাবোঝাই বড় বড় নৌকা। এসব নৌকায় ৫০০ মণ গোলপাতা বোঝাইয়ের মাত্রা বেঁধে দেওয়া হলেও একেকটি নৌকায় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মণ পাতা বোঝাই করা। নৌকার চারপাশে গাছের বড় বড় গুঁড়ি ঝুলিয়ে রাখা। গোলপাতার ঝাঁপির নিচে সুন্দরী, পশুরসহ মূল্যবান গাছের খণ্ড।
নৌকা থেকে গোলপাতা নামাচ্ছেন বাওয়ালিরা। মঙ্গলবার সকালে কয়রা উপজেলার কয়রা নদীর তীরে