একবার হজরত সোলায়মান (আ.) আল্লাহর কাছে একটি দোয়া করেছিলেন। দোয়াটি আল্লাহর কাছে এত ভালো লেগেছিল যে তিনি দোয়াটি কবুল করে নিয়ে তার মনের আশা পূরণ করে দেন। দোয়াটি কোরআনেও আছে, ‘রাব্বিগ ফিরলি ওয়াহাবলি মুলকাল্ লায়ামবাগি লিআহাদিম মিন বাদি, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।’ মানে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো, আর এমন এক রাজ্য আমাকে দান করো, আমি ছাড়া কেউ যার অধিকারী হতে পারবে না; তুমি তো মহাদাতা। (সুরা সাদ, আয়াত: ৩৫)

হজরত সোলায়মান (আ.

)–কে নিয়ে আরেকটি দোয়া কোরআনে আছে, ‘রাব্বি আওজিনি আনআশকুরা নিমাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়া ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা, ওয়া আন আমালা সালিহান তারদ্বাহু, ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’ মানে, ‘সোলায়মান ওর কথায় মুচকি হাসল আর বলল, হে আমার প্রতিপালক তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার কাছ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আমার ওপর ও আমার পিতা মাতার ওপর তুমি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আর যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো, আর তোমার অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ দাসদের শামিল করো।’ (সুরা নামল, আয়াত: ১৯)

আরও পড়ুননামাজে অন্য চিন্তা আসবে না অর্থ বুঝে পড়লে১৯ জানুয়ারি ২০২৪

সোলায়মান (আ.)–এর দোয়া কবুলের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ‘তখন আমি বায়ুকে তার অধীন করে দিলাম, সে যেখানে ইচ্ছা সেখানে তাকে বয়ে নিয়ে যেত; আমি আরও অধীন করে দিলাম জিনকে, যারা সকলেই ছিল স্থপতি ও ডুবুরি। এবং আরও অনেককে জোড়া শিকল পরিয়ে।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ৩৬-৩৮)

আল্লাহর প্রতি সর্বোচ্চ সুধারণা রেখে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আর সে চাওয়া যত কঠিন কিংবা অসম্ভবই হোক না কেন তবু্ও চাইতে হবে। কোনো কিছু চাওয়ার সময় চিন্তায় আনতে হবে আল্লাহ এই চাওয়া কবুল করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত কামনা করবে, তখন বড়ো জিনিস অর্থাৎ জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৭৯০)

আল্লাহ বলেছেন, বান্দা আমার সম্পর্কে যে রকম ধারণা পোষণ করে, আমি তার সঙ্গে সে অনুযায়ী আচরণ করি। (সে যদি ধারণা রাখে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, তার তাওবাহ কবুল করবেন, বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে তাই করি।) (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮৮)

আরও পড়ুননামাজ পড়ার সময় সুরা আগে-পরে হলে কী করবেন২১ জানুয়ারি ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

রমজানে তাকওয়ার শিক্ষা

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আগমন পবিত্র রমজান মাসের, যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। রহমতের ১০ দিন শেষ; শুরু হয়েছে মাগফেরাতের দিন। রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস, ধৈর্যের মাস ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। যে মাস থেকে আমরা অনেকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। 

তাকওয়া বা আল্লাহভীতি: আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সব ধরনের অবাধ্যতা ও পাপাচার থেকে দূরে থাকার নামই তাকওয়া। আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ব উম্মতদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’

কোরআনের আলোকে জীবন গঠন: কোরআন নাজিলের মাসে রোজা কোরআনের আলোকে জীবন গঠনের শিক্ষা দেয়। আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘রমজান মাস, ইহাতেই কোরআন নাজিল হয়েছে। যা গোটা মানব জাতির জীবনযাপনের বিধান এবং তা এমন সুস্পষ্ট উপদেশাবলিতে পরিপূর্ণ, যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিষ্কাররূপে তুলে ধরে।’

সুন্দর আচরণ: রোজা মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে শেখায়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত– রাসুল (স.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনোদিন রোজা রাখলে তার মুখ থেকে যেন খারাপ কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে বা বিবাদে প্ররোচিত করতে চায়, সে যেন বলে– আমি রোজাদার।’ (বুখারি: ১৮৯৪)
মিথ্যা পরিত্যাগ: মিথ্যা সব পাপের মূল। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত– রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে পারল না, তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি-১৯০৩)

সংযম: রমজান মানুষকে অশ্লীল ও অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার মধ্য দিয়ে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
হালাল রুজি: রমজান হালাল রুজি অর্জনের শিক্ষা দেয়। কারণ বৈধ উপার্জনে আহার ব্যতীত জান্নাত পাওয়া সম্ভব নয়।
ধৈর্য ধারণ: হাদিসে রমজান মাসকে ধৈর্য ধারণের মাস বলা হয়েছে। আর কোরআনে আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
ইখলাস বা একনিষ্ঠতা: রোজা রাখা হয় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই। সে জন্য ইসলামে ইখলাসের গুরুত্ব অপরিসীম।
ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব: রমজানে ধনী-গরিব, সাদা-কালো একসঙ্গে তারাবির নামাজ, একই সঙ্গে ইফতার, জাকাত ও ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে এই ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধ তৈরি হয়। 
সহমর্মিতা: রমজান মানুষকে অসহায় ও গরিবদের পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্পর্ক সুদৃঢ় করার শিক্ষা দেয়।

এগুলো ছাড়াও রমজান থেকে আমরা আরও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। পরনিন্দা পরিহার, পাপমুক্ত জীবনযাপন, দোয়া কবুলের ক্ষেত্র, অহেতুক কাজ বর্জন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত ইত্যাদি। যদি আমরা এগুলো যথাযথভাবে পালন করতে পারি তাহলে আমাদের পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত– রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশা নিয়ে রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (বুখারি-৩৭, মুসলিম-১৮১৭)।
তাই কোরআন নাজিলের এ মাসে আল্লাহর কাছে কোরআনকে অনুধাবন করে তা থেকে হেদায়েত নিয়ে রমজানের শিক্ষার আলোকে জীবন গঠন করে সব কল্যাণ অর্জন করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তির তৌফিক কামনা করি।

কেরামত আলী: প্রভাষক, রোভারপল্লী ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
keramotali2004@gmail.com 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রমজানে তাকওয়ার শিক্ষা
  • আল্লাহকে যে পাইতে চায়
  • ঈদের ফিতরা কাকে দেব, কীভাবে দেব