রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবর রহমানের ভাঙ্গা বাড়ি থেকে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে হাড়গোড় মানুষের নাকি অন্য কোনো প্রাণীর তা ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হবে বলেও জানানো হয়েছে। 

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টার পর আলামত সংগ্রহ করে ক্রাইম সিন।

ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, “৩২ নম্বরে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে, এখন সেগুলো মানুষের নাকি অন্য কোনো প্রাণীর, সেটি নিশ্চিত হতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহ করেছে।”

এর আগে সকাল ৯ টায় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শেখ মুজিবর রহমানের ভাঙ্গা বাড়িতে যায় সিআইডি ক্রাইমের সিনের একটি দল যায়।

এ বিষয়ে সিআইডির মুখপাত্র বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বলেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সিআইডির ক্রাইম সিনের একটি দল আজ সকালে গিয়েছে। সিআইডির ক্রাইম সিন অপরাধের আলামত সংগ্রহের দক্ষ একটি দল। তারা সেখানে অপরাধ সংক্রান্ত আলামত সংগ্রহ করছে। 

এর আগে গতকাল আয়নাঘর' বা গোপন বন্দিশালা আছে কিনা এমন সন্দেহে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির বেজমেন্ট থেকে পানি সরানোর কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। পর সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স আইড র ধ নমন ড

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবিতে শিশুটির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনায় নিহত শিশুর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতাকর্মীসহ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজার নামাজ পড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেকুল ইসলাম। এরপর কফিন নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে আসেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর অনুষ্ঠান শেষ হয়। 'ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ' এ গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। 

আজ বেলা একটার দিকে ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আট বছরের শিশুটি।

জানাজা শেষে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, শিশুটির মৃত্যু আমাদের নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে এই ভয়াবহ হত্যার বিচার হবে, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। শিশুটির জন্য পুরো জাতি দোয়া করছেন। তার মৃত্যু এই ক্রান্তিকালে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এটা এই মুহূর্তে প্রয়োজন। আর কোনো শিশু যেন হারিয়ে না যায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থা আইন ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। তার মতো আর কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন এমন না ঘটে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমাদের বোনের হত্যার ন্যায়বিচার আমরা প্রতিষ্ঠা করবো। তার ধর্ষণ ও খুনের বিচার মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষকের সাহায্যকারীদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে ধর্ষণকে কেবল শারীরিক শ্লীলতাহানি হিসেবে নয়, হত্যার সমপরিমাণ নিকৃষ্ট অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, যে পরিমাণ নিপীড়ন শিশুটির উপর হয়েছে, তাতে তার বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ হয়েছে শিশুটিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করা। ইতোমধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে এ ঘটনার বিচার হতে হবে। আমরা এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ সময় ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- 

১. শিশুটির মামলার ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা এবং এক মাসের মধ্যে তার ধর্ষকের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন নিহতের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

২. প্রত্যেক ধর্ষণ মামলার বিচারে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৩. তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।


৪. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে।

৫. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন ও সেলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।

এ দিকে দেশব্যাপী লাগাতার ধর্ষণের বিচার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ, আছিয়া হত্যার বিচারসহ একাধিক দাবিতে মশাল মিছিল করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এই মশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি নীলক্ষেত হয়ে হলপাড়া ঘুরে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়। মশাল মিছিলের পুর্বে তারা শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন।

মশাল মিছিলে লড়াই লড়াই লড়াই চাই- লড়াই করে বাঁচতে চাই, শিশু হত্যাকারীদের- বিচার করো করতে হবে, খুন ধর্ষণ হয়নি শেষ- রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, আমার বোন মরলো কেন- রাষ্ট্র জবাব চাই, ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার- অপসারণ করতে হবে, খুন ধর্ষণ যেখানে- লড়াই হবে সেখানে, খুন ধর্ষণ নিপীড়ন- রুখে দাও জনগন, হামলা মামলা হুলিয়া- নিতে হবে তুলিয়াসহ একাধিক স্লোগান দিতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের।

মিছিল শুরুর পূর্বে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আজ শিকার হয়ে আমাদের বোনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর সাথে আমরা কেউ প্রতারণা করবো না। এই স্বরাষ্ট্র পদত্যাগ করিয়েই আমরা আমাদের আন্দোলন শেষ করবো। একথা বলছি এজন্য যে, যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এদেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না তার এই পদে থাকার কোনো দরকার নেই। 

প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ ৮ বছরের শিশুটি মাগুরায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বোনের শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শিশুটির বোনের স্বামী, স্বামীর ভাই এবং স্বামীর মায়ের পাশবিক নির্যাতনের শিকার ৭ দিন হাসপাতালের বিছানায় বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পর ১৩ মার্চ সম্মিলিত সামরিক হাসতাপালে মৃত্যবরণ করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ