পথে হঠাৎ বিকল হলো ট্রেনের ইঞ্জিন। আশপাশে স্টেশন বা খাবারের দোকান নেই। বিকল্প আরেকটি ইঞ্জিন এনে ট্রেন সচল করতে লাগবে অনেক সময়। এই দীর্ঘ সময় ট্রেনে বসে থাকতে গিয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে পড়েন যাত্রী ও ট্রেনের স্টাফরা। বিশেষ করে, শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েন মহাবিপাকে। তাদের এমন পরিস্থিতি দেখে এগিয়ে আসেন ঘটনাস্থলের পাশের গ্রামের বাসিন্দারা। ঘরে থাকা খাবার ও পানি এনে ট্রেনের যাত্রীদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের চেষ্টা করেন তারা।

এ অবিস্মরণীয় মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার তাঁতীবন্ধ এলাকার বাসিন্দারা। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়।

পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ের টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু বলেছেন, “পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচল করে ঢালারচর এক্সপ্রেস। রোববার সকাল ৭টার দিকে ট্রেনটি ঢালারচর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। আমি ওই ট্রেনে দায়িত্ব পালন করছিলাম। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রাজাপুর স্টেশন পার হওয়ার পরে হঠাৎ করেই ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ঈশ্বরদী থেকে বিকল্প ইঞ্জিন এনে পুনরায় ট্রেনটি চালু করতে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট বেজে যায়। মাঝখানে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় ট্রেনে বসে থাকতে গিয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। বিশেষ করে, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েন স্বজনরা। আশপাশে স্টেশন বা দোকান কিছু ছিল না।”

তিনি বলেন, “ট্রেনের যাত্রী ও স্টাফদের এমন করুণ অবস্থা দেখে এগিয়ে আসেন রেললাইন থেকে কিছু দূরে বসবাসকারী মানুষগুলো। যার যা সামর্থ্য ছিল, যার ঘরে যা রান্না করা খাবার ছিল, তা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তারা।”

আব্দুল আলিম মিঠু জানান, পাশের গ্রামের নারীরা বাড়ি থেকে খাবার ও পানি নিয়ে ট্রেনের কাছে পৌঁছান। কারো হাতে ছিল ভাত-ডাল, কারো হাতে খিচুড়ি, কারো হাতে রুটি-সবজি, আবার কারো হাতে পানি। কেউবা আরো কিছু রান্না করে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন। বৃদ্ধ এবং শিশুদের প্রতি তাদের নজর ছিল বেশি। 

রেলের ওই কর্মকর্তা বলেন, “পাবনাবাসীর এমন মানবিক দৃষ্টান্ত আমি কোথাও দেখিনি। এসব মানুষকে দেখে মনে হয়েছে, তারা বিত্তবান নন। অথচ, কীভাবে তারা মানুষের কষ্ট দেখে পাশে দাঁড়ালেন। পাবনার মানুষ যে কতটা মানবিক আর অতিথিপরায়ন তা আবারো প্রমাণ হলো।”

ঘটনাস্থল তাঁতীবন্দ গ্রামের বাসিন্দা আবেদ আলী বলেন, “আমি দেখলাম, স্টেশনের বাইরে ট্রেনটা অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি, অনেকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কষ্ট পাচ্ছেন। আশপাশে কোনো দোকানপাট ছিল না। তখন আশপাশের সবাইকে সাধ্যমতো খাবার ও পানি নিয়ে আসতে বলি।”

হালিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, “মানুষের কষ্ট দেখলি ভালো লাগে না? যেহেনে টেরেন থামিছিল, সেহান থেনে কিছু দূরে আমার বাড়ি। মেলাক্ষণ টেরেন দাঁড়ায়া ছিল। মেলা মানুষ। আগা যায়ে দেহি, কেউ পানি খুঁজতিছে, কেউ খাবার খুঁজতিছে। তহন বাড়িত যায়া পানি আর ভাত-ডাইল লিয়ে এনে দিছি। আমার নিজেরও ভালো লাগিছে।”

মানিক হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, “চিকিৎসার কাজে রাজশাহীতে যাচ্ছিলাম ওই ট্রেনে। হঠাৎ ইঞ্জিন খারাপ হওয়ায় ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। সকালে রওনা হয়েছিলাম ট্রেন ধরতে। তারপর বেলা গড়াতে গড়াতে প্রচণ্ড ক্ষুধা আর তৃষ্ণায় অস্থির লাগতে শুরু করে। রেললাইনের আশপাশের মানুষগুলো যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, তা সত্যি অভূতপূর্ব।”

ঢাকা/শাহীন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প বন র আশপ শ

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে নববর্ষকে বরণ, শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা ভাস্কর শামীমকে সংবর্ধনা

যশোরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মাধ্যমে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কালেক্টরেট চত্বর থেকে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা বের হয়।

এর আগে দেশব্যাপী বর্ষবরণ শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীমকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীমের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন।

অনুভূতি ব্যক্তকালে ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম বলেন, এই সম্মাননা শুধু আমার একার নয়। যশোরের সব সাংস্কৃতিক কর্মী, সামাজিক ও রাজনীতিক সর্বোপরি গোটা দেশবাসীর। যশোর থেকে শুরু হওয়া পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা আজ প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাঙালিরা সাড়ম্বরে পালন করছে। এই আনন্দ আজ সবার। আজকের এই সম্মাননায় আমি আপ্লুত, খুশি।

অনুষ্ঠানে যশোর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ৩২টির অধিক সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যশোর কালেক্টরেট চত্বরে সমবেত হয়।

জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ এসো এসো গান গেয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। সম্মাননা অনুষ্ঠানের পরপরই দেশবাসীর কল্যাণ কামনায় শহরে একটি বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

শোভাযাত্রাটি যশোর কালেক্টরেট চত্বর থেকে বেরিয়ে বকুলতলা, দড়াটানা, চৌরাস্তা, কেশবলাল সড়ক হয়ে যশোর ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়। এবারের শোভাযাত্রায় সুন্দরবন রক্ষায় বিভিন্ন প্রাণ প্রকৃতি পাখ পাখালির মোটিফ, ঘোড়ারগাড়িসহ গ্রামবাংলার চিরায়ত বিভিন্ন সামগ্রী বহন করা হয় ও র‍্যালি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। এসময় বিভিন্ন পেশার মানুষ নববর্ষের বাহারি রঙিন পোশাক পরিধান করে তাদের নিজস্ব বাদ্য বাজিয়ে নেচে গেয়ে তারা নববর্ষকে বরণ করে নেয়।

এদিকে, সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে যশোর পৌরপার্কে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যশোর উদীচী, নবকিশলয় স্কুলে বিবর্তন যশোর ও সুরধুনী ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন তাদের নিজ নিজ ভেন্যুতে কবিগান, পালাগান, পঞ্চকবির গান, আধুনিক গান, লোকসংগীত, লোকনৃত্য, বাউল গান পরিবেশন করা হয়।

বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠান সব বয়সের নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। এ উৎসব দেশে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করবে এমন আশা তাদের।

অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার রওনক জাহান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ