বিছানার ম্যাট্রেস নিয়মিত পরিষ্কার না করলে যা হয়
Published: 10th, February 2025 GMT
শহুরে জীবনে ম্যাট্রেসের চাহিদা বাড়ছে। ভালো মানের ম্যাট্রেস বেছে নেওয়ার পাশাপাশি তার ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি। বিছানার চাদর যেভাবে নিয়মিত বদলানো হয়, সেভাবে ম্যাট্রেস কি পরিষ্কার করা হয়? কী হয় ম্যাট্রেস নিয়মিত পরিষ্কার না করলে?
হতে পারে জীবাণুর কারখানাঅপরিচ্ছন্ন ম্যাট্রেসের উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ হয়ে উঠতে পারে জীবাণুদের কারখানা। বিশেষ করে উপদ্রব হতে পারে ডাস্ট মাইটের মতো আণুবীক্ষণিক কীটের। এসব কীট মানুষের শরীরের মৃত কোষ খেয়ে বেঁচে থাকে। আর ওদের শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি। শুরুতে বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে অ্যালার্জির লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে শরীরে। হাঁচি–কাশি তো আছেই, হাঁপানির সমস্যাও জটিল করে তুলতে পারে এই কীট।
আরও পড়ুনযে কারণে সকালবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠা দুঃসাধ্য মনে হয়০২ মার্চ ২০২১প্রভাব পড়তে পারে ত্বকেডাস্ট মাইট ত্বকেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ম্যাট্রেসে বাসা বাঁধা ডাস্ট মাইটের আক্রমণ থেকে শরীরে ছোট ছোট র্যাশ দেখা দিতে পারে। নোংরা ম্যাট্রেসে ডাস্ট মাইট দু–তিন দিন বেঁচে থাকতে পারে। ফলে র্যাশ ছড়ানো এদের জন্য তুলনামূলক সহজ।
ছড়াতে পারে দুর্গন্ধদীর্ঘদিনের নোংরা ম্যাট্রেস থেকে ছড়াতে পারে দুর্গন্ধ। বিশেষ করে শরীরের যত ঘাম, ময়লা, আবর্জনা সবকিছুর স্থান হয় বিছানায়। শরীরের মৃত কোষগুলোও ঝড়ে পড়ে বিছানায়। সব মিলিয়ে একটা উটকো দুর্গন্ধের সৃষ্টি করতে পারে নোংরা ম্যাট্রেস।
আরও পড়ুনকোমরব্যথায় চাই যেমন বিছানা ২৬ জানুয়ারি ২০২৩দীর্ঘদিন পরিষ্কার রাখতে চাইলেম্যাট্রেস পরিষ্কার করার চেয়ে পরিষ্কার রাখা তুলনামূলক সহজ। ভারী বলে ম্যাট্রেস সহজে টানাহেঁচড়া করাও কঠিন। ফলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে সহজেই ম্যাট্রেস পরিষ্কার রাখা সম্ভব।
বিছানায় খাবেন না: বিছানায় বসে খাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। শুধু ম্যাট্রেসের ওপর খাওয়াদাওয়া না করাই ভালো। এতে দুর্ঘটনাবশত ম্যাট্রেসে খাবার বা পানীয় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
আবরণ ব্যবহার করুন: ম্যাট্রেসের ওপর পানিরোধী হালকা আবরণ ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত বিরতিতে আবরণ পরিষ্কার করলেই ম্যাট্রেস পরিষ্কার থাকবে।
ভ্যাকুয়াম ক্লিন করুন: কয়েক মাস পরপর ম্যাট্রেস ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে ক্ষুদ্র ময়লা যেমন পরিষ্কার হবে, তেমনই চোখে দেখতে না পাওয়া জীবাণু বা কীট থেকে ম্যাট্রেস থাকবে পরিষ্কার।
খোলা হাওয়ায় রাখুন: টানা ব্যবহারের ফলে ম্যাট্রেস উষ্ণ ও আর্দ্র হয়ে ওঠে। এই আর্দ্রতা দূর করতে ম্যাট্রেসটা বিছিয়ে রাখুন খোলা হাওয়ায়। আলো-বাতাসের সংস্পর্শে ম্যাট্রেসে নতুন করে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারবে না।
বিছানা পরিষ্কার রাখুন: ম্যাট্রেস পরিষ্কার রাখতে বিছানা পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই। বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কম্বল–জাতীয় বিভিন্ন অনুষঙ্গ প্রতি দুই সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করুন। এতে বিছানা অপরিষ্কার হবে কম।
বিছানার ফ্রেম বা কাঠামো পরিষ্কার রাখুন: অনেকে ম্যাট্রেস ও বিছানা পরিষ্কার করলেও বিছানার ফ্রেম বা কাঠামোতে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে ভুলে যান। দীর্ঘদিন অপরিষ্কার থাকলে তাতে জমতে পারে ময়লার আস্তরণ।
নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে একটা ম্যাট্রেস ১০ থেকে ১৫ বছর অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। তবে ম্যাট্রেসে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত পরিবর্তন করাই শ্রেয়। তা না হলে তা হয়ে উঠতে পারে শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
আরও পড়ুনবিছানা–বালিশ কেমন হলে ঘুম ভালো হবে০৪ জুলাই ২০২৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম য ট র স পর ষ ক র পর ষ ক র র খ ড স ট ম ইট ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
দেয়ালের সুরক্ষায় রং
রং যে কেবল দেয়ালকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে, তা কিন্তু নয়; বরং দেয়ালের সুরক্ষার জন্য চাই রং। মনের মতো রঙে আপনি অন্দর-বাইরের দেয়াল রাঙিয়ে নেবেন নিশ্চয়ই। তবে রং করানোর আগেই আপনাকে দেয়ালের সুরক্ষার দিকটি মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় মেনে চলা হলে বছরের পর বছর ধরে দেয়াল থাকবে অক্ষত। দেখাবেও চমৎকার।
মানবদেহের ভেতরটাকে সুরক্ষিত রাখতে আবরণ হিসেবে যেমন কাজ করে ত্বক, তেমনি দেয়ালের আবরণ হিসেবেও প্রয়োজন রং। দেয়ালের গড়ন সুরক্ষিত রাখতে ঠিকঠাক রং বেছে নিতে হবে আপনাকে। পরিবেশের স্বাভাবিক কিছু উপাদানের কারণে দেয়ালের ক্ষতি হতেই পারে। এই যেমন বাড়ির বাইরের দেয়ালে রোদ, বৃষ্টি ও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা অন্দরের দেয়ালের জন্যও ক্ষতিকর। ভালো মানের রঙের প্রলেপ না থাকলে বাহির ও অন্দর—দুই জায়গার দেয়ালেই ছত্রাক জন্মাতে পারে। শৈবালও জন্মায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। নানান রকম দাগছোপ পড়েও দেয়াল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এত সব দিক সামলাতে দেয়ালের রং কেমন হতে হবে, এ প্রসঙ্গে নানান পরামর্শ দিলেন সৃষ্টি আর্কিটেকচার অ্যান্ড কনসালট্যান্সির প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি তাসনিম তূর্যি।
রং করানোর আগে
* যে দেয়ালে আগে কোনো রং ছিল, নতুন রং করানোর আগে তা পুরোপুরি তুলে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
* নতুন-পুরোনো যেকোনো দেয়ালে রং করার আগে তা সিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষে ঘষে মসৃণ করে তুলতে হবে।
* প্রয়োজনে পুরোনো প্লাস্টারের প্রলেপ সরিয়ে দিয়ে নতুনভাবে প্লাস্টার করিয়েও নিতে হবে। দেয়ালের কোনো অংশ আর্দ্রতার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে অবশ্যই সেটির প্রতিকার করতে হবে রং করার আগে। এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নেওয়া ভালো। দেয়ালের ক্ষতির ধরন এবং মাত্রা অনুযায়ী তিনি পরামর্শ দেবেন।
* ভবিষ্যতে দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব প্রতিরোধ করার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত রং করানোর আগেই। রঙের আগে দেয়ালে প্রাইমার এবং সিলার ব্যবহার করলে তা স্যাঁতসেঁতে ভাব প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হলে দেয়ালে রং বসে যায় মসৃণভাবে। আর দেয়াল ভালোও থাকে দীর্ঘদিন।
কোন ধরনের রং বেছে নেবেন
* মানসম্মত, টেকসই রং ব্যবহার করুন বাড়ির বাহির এবং অন্দর দুই জায়গাতেই। তাহলে রং করানোর পর দেয়ালের যত্ন নেওয়ার জন্য বাড়তি ঝক্কি থাকবে না।
* বাইরের দেয়ালের জন্য এমন রং বেছে নিন, যা দেয়ালকে রোদ, বৃষ্টি, আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষিত রাখবে। আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষা দেবে এমন রং অন্দরের জন্যও ভালো।
* দাগছোপ বসে যায় না, এমন রং বেছে নিতে পারেন অন্দরের দেয়ালের জন্য। ময়লা লেগে গেলে সহজে পরিষ্কার করা যায়, এমন রং অন্দরের জন্য সুবিধাজনক। অ্যাক্রিলিক ইমালসন রং করানো হলে প্রয়োজনে দেয়াল পানি দিয়ে ধুয়েমুছেও নেওয়া যায়।
* মানবদেহের জন্য নিরাপদ রংও পাওয়া যায় এখন, যা শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি করে না। বিশেষত রং করানোর সময় বাড়িতে শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি থাকলে এ ধরনের রং বেছে নেওয়া ভালো।
* রান্নাঘরের জন্য আগুনপ্রতিরোধী রং বেছে নিতে পারেন, দুর্ঘটনায় আগুন লেগে গেলেও তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম থাকবে।
রং করানোর পর
* একেবারে দেয়াল ঘেঁষে আসবাব না রাখাই ভালো।
* দেয়াল মোছার প্রয়োজন হলে পাতলা, সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।
* দেয়ালসজ্জায় এমন কোনো অনুষঙ্গ ব্যবহার করবেন না, যাতে পানি রয়েছে। দেয়ালসজ্জায় ব্যবহৃত সব অনুষঙ্গ নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
* রঙের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দেয়াল স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়তে থাকে। দেয়ালের রং নষ্ট হতে শুরু করলে কিংবা স্যাঁতসেঁতে ভাব দেখা গেলে অবশ্যই নতুনভাবে রং করিয়ে নিন।