পুরো শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ এক বানর
Published: 10th, February 2025 GMT
শ্রীলঙ্কার একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে বানরের ‘অনুপ্রবেশে’ পুরো দেশ অন্ধকারে পতিত হয়েছিল। গতকাল রোববার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানান, রাজধানী কলম্বোর দক্ষিণে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হানা দেয় একটি বানর। এতে পুরো দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা যায়। এর তিন ঘণ্টা পার হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কুমারা জয়াকোদি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ট্রান্সফরমারের সংস্পর্শে আসে একটি বানর। এতে করে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর প্রকৌশলীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করেছেন। শিগগিরই বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের অবস্থায় ফিরবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
রমজানে দ্রব্যমূল্য: জাপানের সততা বনাম আমাদের বাস্তবতা
পবিত্র রমজান সংযমের মাস, আত্মশুদ্ধির মাস। অথচ বাংলাদেশে এ মাস এলেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায়। বেগুন, লেবু, ছোলা, চিনি, ভোজ্যতেল—ইত্যাদি পণ্যের মূল্য যেন হঠাৎ আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে।
এই লেখক দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে জাপানে অবস্থান করেছেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, জাপানে কোনো ধর্মীয় উৎসবের সময়ও বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করে না; বরং দাম থাকে স্বাভাবিক। সেখানে তারা সৎভাবে চলার চেষ্টা করে, আইন মানে, মানুষ ঠকায় না। নৈতিকতা ও সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা জাপানের জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি।
অন্যদিকে বাংলাদেশে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। তাহলে আমাদের দেশে কেন এই মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা? এর পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
জাপানের সততা ও আইনের কঠোরতা: জাপানে ব্যবসার নীতিমালা অত্যন্ত স্বচ্ছ, আর আইনের প্রয়োগও কঠোর। কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বা অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা অনৈতিকভাবে মুনাফা করার চিন্তাই করে না।
বাংলাদেশের অনিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থা: বাংলাদেশে পবিত্র রমজানের শুরুতে অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যপণ্য মজুত করে বাজারে সংকট তৈরি করে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম দেখা যায়, আর এতে দাম বেড়ে যায়। তদারকির অভাব, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণে সাধারণ মানুষকে বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয়।
ভোক্তাদের অসচেতনতা ও মূল্যবোধের অভাব: পবিত্র রমজান সংযমের মাস হলেও বাস্তবে আমরা সংযমের চেয়ে মুনাফার প্রতিযোগিতা দেখি। অনেক ক্রেতা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য কিনে থাকেন, যা বাজারে চাহিদা আরও বাড়িয়ে তোলে। আবার অনেক ব্যবসায়ী মূল্যবোধ ভুলে গিয়ে অধিক মুনাফার লোভে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা ভাবে না।
ব্যবস্থার স্বচ্ছতা: জাপানে ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা রয়েছে। এখানে যদি কেউ বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়ায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা অসাধু উপায়ে দাম বাড়ানোর সাহস পায় না। বাংলাদেশে আইন থাকলেও তা প্রয়োগে অনেক দুর্বলতা আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের মনিটরিং কার্যকর হয় না, যার ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়।
নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা: জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সততা, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ শেখায়। সেখানে প্রতারণা, মিথ্যা বা দুর্নীতি করা খুবই লজ্জার ব্যাপার। মানুষকে ঠকানো সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় বেশি মুনাফার আশায় ক্রেতাদের অসুবিধার কথা চিন্তা না করেই দাম বাড়িয়ে দেয়। অনেকে এটাকে স্বাভাবিক ব্যাপার মনে করে। কারণ, তারা মনে করে, ‘সবাই তো একই কাজ করছে’!
কৃত্রিম সংকট ও মজুতদারি: বাংলাদেশে পবিত্র রমজানের শুরুতেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যপণ্য গুদামজাত করে মজুতদারি শুরু করে, যাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। এ কারণে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম দেখা যায়, আর এতে দাম বেড়ে যায়। জাপানে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানে বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকারের নজরদারি থাকে, আর জনগণেরও সচেতনতা বেশি।
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য: বাংলাদেশে কৃষকেরা কম দামে পণ্য বিক্রি করে, কিন্তু ভোক্তারা সেটা অনেক চড়া দামে কেনে। এর মূল কারণ হলো মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালেরা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনে পরে বাজারে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। জাপানে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরাসরি পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা কার্যকর, ফলে দামের ওপর দালালদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
ভোক্তাদের অসচেতনতা ও অসহযোগিতা: বাংলাদেশে অনেক সময় ভোক্তারাও দায়ী। অনেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য কিনেন, ফলে চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায় এবং দামও বেড়ে যায়। জাপানে মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কেনে না, তাই বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় না।
মূল্যবোধ বাস্তবায়নের অভাব: পবিত্র রমজান মানে সংযমের মাস, কিন্তু বাংলাদেশে অনেকের জন্য এটি লাভ করার সময়। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও রাষ্ট্রীয় আইন মেনে ন্যায্য দামে ব্যবসা করা উচিত, কিন্তু বাস্তবে অনেক ব্যবসায়ী এই নীতিগুলো মেনে চলে না। জাপানে নৈতিকতার কারণে মানুষ সৎভাবে ব্যবসা করে। তারা নিজেদের দায়িত্ব বোঝে এবং লোভের কারণে অন্যের ক্ষতি করতে চায় না।
জাপানে সুশৃঙ্খল সমাজ, কঠোর আইন, নৈতিক শিক্ষা ও জনগণের সচেতনতা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে আমরা নৈতিকতা নিয়ে এত উচ্চকিত থেকেও একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ করতে পারিনি। আমাদের প্রয়োগে সমস্যা। ব্যবস্থার সমস্যা। সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতা। আইনের প্রয়োগে সমস্যা। নৈতিক শিক্ষার অভাব। আমাদের নিশ্চয়ই বিশাল গলদ রয়েছে। সেই গলদ কোথায়, গভীরভাবে ভাবা দরকার।
যদি আমরা সবাই সচেতন হই, আইন মেনে চলি এবং নৈতিক মূল্যবোধ অনুসরণ করি, তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব। পবিত্র রমজানে যদি ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও প্রশাসন—সবাই সচেতন হয়, নৈতিকতা মেনে চলে এবং আইন কঠোরভাবে কার্যকর হয়, তাহলে আমাদের দেশেও নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (ডেইরি অ্যান্ড পোলট্রি সায়েন্স) এবং পরিচালক, পোলট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
[email protected]