নতুন বাণিজ্য শুল্ক ঘোষণা করবেন ট্রাম্প
Published: 10th, February 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সমস্ত স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ঘোষণা করবেন।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্ট থেকে নিউ অরলিন্সে এনএফএল সুপার বোলে যাওয়ার পথে এই পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই নতুন ঘোষণা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে কানাডায়।
আরো পড়ুন:
মার্কিন পেমেন্ট সিস্টেমে ইলন মাস্কের ডজের প্রবেশাধিকার স্থগিত
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সহায়তা বন্ধ
ট্রাম্প আরো জানান, যেসব দেশ মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে, তাদের জন্য পাল্টা শুল্কের ঘোষণা আসছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি কোন দেশগুলো টার্গেট হবে বা কোনো ছাড় দেওয়া হবে কিনা।
ট্রাম্প বলেন, যদি তারা আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করে, আমরাও তাদের ওপর পাল্টা ব্যবস্থা নিব।
কানাডা এবং মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ স্টিল বাণিজ্য অংশীদার। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহকারী দেশ।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে, কানাডা, মেক্সিকো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানিকৃত স্টিলের ওপর ২৫ শতাংশ এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
কিন্তু এক বছর পর কানাডা ও মেক্সিকো এই শুল্ক বাতিল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক ২০২১ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল।
আর এবার দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় কানাডার অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘নিয়ম পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ করার অভিযোগ এনেছেন। কানাডার স্টিল উৎপাদন প্রধানত অন্টারিওতে কেন্দ্রীভূত।
ট্রাম্পের মন্তব্যের ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার স্টিল এবং গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও কমেছে। দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে স্টিলের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক।
স্টিল কোম্পানি পসকোর শেয়ারের দাম ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে, হুন্ডাই স্টিলের শেয়ারের দাম ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে।
গাড়ি নির্মাতা কিয়া কর্পোরেশনের শেয়ারের দামও সকালের লেনদেনের সময় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ল ক আর প র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
আদানির কাছে থেকে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ চেয়েছে বাংলাদেশ
গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। খবর রয়টার্সের।
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গোষ্ঠীর কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। নভেম্বর থেকে একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ। এখন আবার দুটি ইউনিট থেকেই উৎপাদিত সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম ছিল। এ ছাড়া বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ নিয়ে বিরোধের কারণে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছিল। সরবরাহ এখন আগের পর্যায়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে ক্রয় চুক্তি করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারে নির্মিত ওই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর কিনবে বাংলাদেশ। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে।
রয়টার্স বলেছে, বাংলাদেশ ডলার–সংকটে আছে। সে কারণে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারায় গত ৩১ অক্টোবর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামে। এরপর শীতে চাহিদা কম থাকায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও অর্ধেক (একটি ইউনিট থেকে) বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করা হয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রয়টার্সকে জানায়, তারা আদানির কোম্পানিকে মাসে ৮৫ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার করে পরিশোধ করছে। এখন চাহিদা বাড়ায় দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে বলেছে।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের বর্তমান চাহিদা অনুসারে দ্বিতীয় ইউনিটটি চালুর পরিকল্পনা করেছিল আদানির প্রতিষ্ঠান। তবে উচ্চ কম্পন ও কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা মাসে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিচ্ছি। আমরা আরও বেশি অর্থ পরিশোধের চেষ্টা করছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বকেয়া কমিয়ে আনা। ফলে এখন আদানির সঙ্গে কোনো বড় সমস্যা নেই।’
আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের আহ্বানে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি। যদিও গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানিয়েছিল, বিপিডিবির কাছে তাদের প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি ডলার বাকি আছে। ওই সময় বিপিডিবি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, এই বকেয়ার পরিমাণ ৬৫ কোটি ডলার।
বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে আদানির সঙ্গে বিরোধ আছে বাংলাদেশের। রয়টার্সের হিসাবে, অন্যান্য ভারতীয় বিদ্যুতের চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি অর্থে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এদিকে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। ওই কমিটির প্রতিবেদন এ মাসে সামনে আসতে পারে। তখন আদানির সঙ্গে চুক্তিটি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানায় রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যান হাসিনা। এরপর গত সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার সময়ে স্বাক্ষরিত প্রধান জ্বালানি চুক্তিগুলো পরীক্ষা করার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্যানেল নিয়োগ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
অন্যদিকে আদানির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তোলে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বলা হয়, ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য আদানি দিল্লি থেকে যে কর–সুবিধা পেয়েছিল, তা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি। গত ডিসেম্বরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এরপর বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা চুক্তিটি পর্যালোচনা করছেন। যদিও আদানির একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সব দায়বদ্ধতা পালন করেছে। বাংলাদেশ চুক্তিটি পর্যালোচনা করছে, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
দুই পক্ষের বিরোধ মিটমাট হয়েছে কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেননি।