আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ভোজ্যতেলের দাম পড়তির দিকে, তখন বাংলাদেশে দাম বেড়ে চলেছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের কারণে এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে পাঁচ থেকে সাত টাকা।
বাংলাদেশ ট্রেড আন্ড ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার বেশির ভাগই আমদানি করতে হয়। দেশীয় কয়েকটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও বীজ আমদানি করে এবং তা থেকে উৎপাদিত ও পরিশোধিত তেল বাজারে বিক্রি করে।
গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৯ শতাংশ বেশি। এরপরও সয়াবিনের এই সংকট কেন?
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র বহদ্দারহাটে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে ৩০টি দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়। কিন্তু শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্র একটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন মিলেছে। ঢাকার চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। আগে যেখানে পাঁচ লিটারের বোতল কিনলে দামে ছাড় পাওয়া যেত, এখন সেখানে নির্ধারিত দরের বাড়তি মূল্য গুনতে হয় ক্রেতাদের।
পবিত্র রমজান সামনে রেখে ভোজ্যতেলের বাজারের এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনকই বটে। এর আগে আমদানিকারকেরা লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে লিটারপ্রতি আট টাকা বাড়িয়ে নেন।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আরও অনেক আমদানি পণ্যের মতো ভোজ্যতেল বা সয়াবিনের বাজারও কয়েকটি বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি। কোনো কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বলেছে, তারা নিয়মিত বাজারে সয়াবিন সরবরাহ করছে। তাহলে এই কৃত্রিম সংকটের কারণ কী? বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮৫০ টাকা। যদি পণ্য বাজারে না–ই পাওয়া যায়, তাহলে দামের বিষয়টিই অপ্রাসঙ্গিক।
অন্য একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টানা দুই মাস বাড়ার পর গত নভেম্বরের পর নিম্নমুখী হয়ে ওঠে সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে টনে ৮৪ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমছে আর দেশীয় বাজারে সেটা বেড়ে যাওয়া কিংবা সরবরাহে ঘাটতি থাকা রহস্যজনক।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেছেন, ‘ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধের বিষয়ে সরকারের অনতিবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’ কিন্তু অন্যান্য বিষয়ের মতো বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা বলে হাওয়ায় ছড়ি ঘোরাচ্ছেন; যদিও সেই সিন্ডিকেটকে দৃশ্যমান করার কোনো উদ্যোগ নেই।
কয়েক দিন আগে প্রথম আলোয় খবর বের হয়েছিল, পবিত্র রমজান সমানে রেখে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে। এতে সরকার একধরনের নিশ্চিন্ত ছিল। কিন্তু ভোজ্যতেল তথা সয়াবিনের বাজার দেখলে মনে হয় নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর খবরদারি করতে পারছে না। ব্যবসায়ীরাই নানা অজুহাত দেখিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন এবং সরকারকে তা হজমও করতে হচ্ছে। রোজা সামনে রেখে সয়াবিনের ঘাটতি বাড়ার আগেই সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে একটি উপায় খুঁজে বের করা। কোনো অবস্থায় ভোক্তাদের জিম্মি করা যাবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ জ যত ল র সরক র র ব যবস আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আমিনবাজার পাওয়ার গ্রিডে অগ্নিকাণ্ড, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন গোটা এলাকা
সাভারের আমিনবাজারে অবস্থিত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ৪০০/১৩২ কেবি গ্রিড সাবষ্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল সোয়া ৭টার দিকে সেখানে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল সোয়া ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, আগুন লাগার কারণে সাভারের আমিনবাজার থেকে শিমুলতলা এলাকা পর্যন্ত গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
আরো পড়ুন:
কাশিয়ানীতে ৫ মাসে ২৩ ট্রান্সফরমার চুরি, সেচ ব্যাহত
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালু
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিদর্শক (মিডিয়া সেল) মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে আমরা আগুনের খবর পাই। ফায়ার সার্ভিসের মোট ৯টি ইউনিট সকাল ৭ টা ২০মিনিট থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি।”
পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স) সিজান আহমেদ বলেন, “আগুন লাগার কারণে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিট থেকে আমিনবাজার থেকে শুরু করে হেমায়েতপুর চামড়া শিল্প নগরীসহ সাভারের শিমুলতলা এলাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।”
কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে সেটি জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ