আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। ভোজ্যতেল পরিশোধনকরী দেশীয় কারখানাগুলোর মালিকেরাও সরকারকে জানিয়েছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর আমদানি পরিস্থিতি ভালো। তারপরও বোতলজাত ভোজ্যতেলের সংকট চলছে। কিন্তু কেন তা হচ্ছে, সেটি তাঁরা জানেন না। এদিকে পরিশোধন কারখানার মালিকেরা অন্য পণ্য কেনার শর্তে ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন তা–ও সত্য।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) কার্যালয়ে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত ভোজ্যতেলের সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক এক বৈঠকে এসব তথ্য উঠে আসে। এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তাতে ভাসা ভাসা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও যথাযথ কোনো সমাধান হয়নি। ফলে ভোজ্যতেল নিয়ে মূল সংকট থেকেই যাচ্ছে।

বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি। দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।

বৈঠক শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিটিটিসি জানায়, বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম সংকট এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে তা সৃষ্ট। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। ঋণপত্রও (এলসি) বেড়েছে একই হারে। শুধু তা–ই নয়, বিশ্ববাজারেও এখন পণ্যটির মূল্য স্থিতিশীল।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে বাজার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

কেউ কেউ অন্যান্য পণ্য কেনার শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করছে, এমন তথ্য উঠে আসে বৈঠকে। এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎপাদক বা কোনো পর্যায়ে এ ধরনের শর্তযুক্ত বিক্রি বা বাজারজাত করা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই ভোজ্যতেল নিয়ে সমস্যা চলছে। কিন্তু বাজার তদারকিতে তা ধরা পড়ে না। পড়লেও সেটি চেপে যাওয়া হয়। ছদ্মবেশে বা ক্রেতা সেজে বাজারে ঢুকলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। যারা এটি করছে, তারা সরকারের বাজার তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে অর্থাৎ আইনানুগ ব্যবস্থার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

নতুন একটি বিষয় উঠে আসে বৈঠকে, আর সেটি হচ্ছে ভোজ্যতেল পাচার বা এর অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য। প্রতিবেশী দেশে মূল্য বেশি হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে কি না, সীমান্তসংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সংস্থাগুলোকে তা খতিয়ে দেখতে এবং তা প্রতিরোধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, নিজেদের পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করা ভোজ্যতেল ভোক্তারা সব সময় নির্ধারিত দামে কিনতে পারছেন কি না, তা ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই তদারক করবে।

পরিশোধন কোম্পানিগুলো যা বলেছে

বিটিটিসি জানায়, সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি (উপদেষ্টা) অমিতাভ চক্রবর্তী বৈঠকে জানান, তাঁরা গত জানুয়ারিতে মোট ৫০ হাজার ৭০০ টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করেছেন। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত। এর আগের মাস ডিসেম্বরে তাঁরা ১৪ হাজার ২৬২ টন বোতলজাত ভোজ্যতেল সরবরাহ করেছিলেন।

এ ছাড়া মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি জি এম তসলিম শাহরিয়ার জানান, জানুয়ারিতে তাঁরা মোট ৪৭ হাজার ৬৬৮ হাজার টন সরবরাহ করেন। এর মধ্যে ১৫ হাজার টন বোতলজাত। আগের মাসের ২৫ হাজার টনের মধ্যে ১২ হাজার টন ছিল বোতলজাত।

টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম জানান, জানুয়ারিতে তাঁরা ১১ হাজার ৮১০ টন বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করেন, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯ হাজার ৫০০ টন।

অন্যান্য উৎপাদনকারীরাও জানান, তাঁরাও আগের মাসগুলোর তুলনায় সম্প্রতি বেশি তেল সরবরাহ করেছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষে এখন পাইপলাইনে প্রায় দেড় লাখ টন ভোজ্যতেল ভর্তি জাহাজ চট্টগ্রামের বন্দরে নোঙর করার অপেক্ষায় আছে। এই তেল শিগগিরই সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত হবে।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, মাঠপর্যায়ে কেউ অতিরিক্ত মজুত করে থাকতে পারেন। আবার কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেলে পরিণত করে তা বিক্রি করতে পারেন।

বিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। তবে রমজানের চাহিদা বেশি, ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ টন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ভ জ যত ল র হ জ র টন ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ইসরায়েলের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের প্রভাব কী হতে পারে

ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এতে গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এটিকে জানুয়ারিতে সম্মত যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো সংশোধনে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে চাপ দিতে ইসরায়েলের আরেকটি চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে এবং আরও বন্দীকে মুক্তি দিতে হামাসকে চাপ দিতে মার্চ মাসের শুরুর দিকে গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের ওপর অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি এড়াতে তারা এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি হলে গাজায় যুদ্ধের স্থায়ী অবসান হতে পারে।

মানবিক সহায়তা সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, ইসরায়েলের কিছু মিত্রদেশসহ বিভিন্ন দেশ এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।

আরও পড়ুনত্রাণের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল১০ মার্চ ২০২৫

ইসরায়েলের ঘোষণাটি আসলে কী ছিল

ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজায় যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে, তার পুরোটাই বন্ধ করে দেবে।

গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন বলেন, তিনি ‘তাৎক্ষণিকভাবে গাজা উপত্যকার বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন’।

দোহায় আরেকটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার আগের দিন কোহেন বলেছিলেন, ‘কথা তো যথেষ্ট হলো, এখন পদক্ষেপ নেওয়ার সময়!’

তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলছে, ঘোষণাটিকে যতটা নাটকীয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এটি সম্ভবত অতটা নয়।

যুদ্ধে গাজার বেশির ভাগ এলাকাই এমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুরস্ক পুনরুদ্ধার রাশিয়ার
  • শিল্প ও অবকাঠামোর জন্য রং তৈরি করি
  • বাংলাদেশ ও আরাকান আর্মিকে করিডোর দিতে বলল ফোর্টিফাই রাইটস
  • রাখাইনে মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে বাংলাদেশকে করিডোর দিতে বলল ফোর্টিফাই রাইটস
  • ঢাকার যেসব এলাকায় আগামীকাল ১০ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে
  • বৃহস্পতিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
  • পানির দাবিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা ঘেরাও
  • এবার ১৬ মার্চের মধ্যে সব পাঠ্যবই দেওয়ার আশা এনসিটিবি চেয়ারম্যানের
  • স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুই প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে অনুমোদন
  • গাজায় ইসরায়েলের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের প্রভাব কী হতে পারে