যে কারণে সিরিয়ার বিপ্লব এখনো অনিশ্চয়তায়
Published: 10th, February 2025 GMT
পেন্টাগনের অপ্রকাশিত একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্ব সিরিয়া থেকে দুই হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে খবরটি খুব বেশি আলোচনা পায়নি। কারণ, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা-সংক্রান্ত বিতর্ক মিডিয়ার মূল কেন্দ্রে ছিল। মার্কিন সেনারা মূলত সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীকে সহায়তা করছিল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বেঁচে থাকা যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার আইএস যোদ্ধা সিরিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক রয়েছেন। কিন্তু সেনা প্রত্যাহারের কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্দিশিবির থেকে জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়ে ইউরোপ, ব্রিটেন এবং অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য নতুন সন্ত্রাসী হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এই পরিকল্পনা সিরিয়ার জটিল পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ রয়েছে। তবে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক শক্তির ভূমিকা এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ডিসেম্বরে আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়া একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে। তুরস্ক, সৌদি আরব এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো সিরিয়ায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চায় এবং সেখানে আরও সক্রিয় হতে চায়। তাদের লক্ষ্য, নতুন সরকারের কাছে নিজেদের স্বার্থের সুবিধা আদায় করা।
অন্যদিকে ইউরোপ চায় সিরিয়া একটি স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হোক, যাতে চলমান অস্থিরতা কমে এবং শরণার্থীরা নিরাপদে দেশে ফিরে যেতে পারেন। ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা সিরিয়ার দুর্বল অবস্থাকে বজায় রাখতে চায়। কারণ, এটি তাদের গোলান মালভূমির দখল আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
সিরিয়ার নতুন নেতা হিসেবে আহমেদ আল-শারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে কথা বললেও, ইসরায়েল এবং তুরস্ক তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখে। বিশেষত তাঁর হামাস সমর্থন ও কুর্দি বাহিনীর বিষয়ে অবস্থান নিয়ে তাঁর ওপর দেশ দুটি ভরসা করতে পারছে না।
এখন সিরিয়ার ভবিষ্যৎ অনেকটাই আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। তিনি একসময় আল-কায়েদার যোদ্ধা ছিলেন এবং বর্তমানে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে পরিচিত ইসলামপন্থী মিলিশিয়ার নেতা। এই গোষ্ঠীই বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে।
শারা এখন সিরিয়ার নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর নেতৃত্বের ওপর দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তবে অনেকেই সন্দেহ করছেন, তিনি এখনো তাঁর অতীতের উগ্র মতাদর্শ পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি।
আসাদের সাবেক মিত্র ইরান ও রাশিয়া সিরিয়ায় নিজেদের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে চায়। ইরান গোপন নেটওয়ার্ক ও ‘প্রতিরোধ সেল’ ব্যবহার করে প্রভাব ফিরে পেতে চাইছে এবং রাশিয়া সিরিয়ায় তাদের দুটি সামরিক ঘাঁটি রাখতে চাইছে। শারা রাশিয়াকে ‘আগের ভুলগুলো ঠিক করতে’ এবং আসাদকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেছেন। তবে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চান না।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সিরিয়ায় তাঁর প্রভাব ধরে রাখতে চান। তিনি চান, সিরিয়ায় থাকা ৩০ লাখ শরণার্থী দেশে ফিরে যাক এবং পুনর্গঠনের বড় প্রকল্পগুলো তুর্কি কোম্পানির হাতে আসুক। শারা সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) যোদ্ধাদের তাঁর নতুন জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। এটি তুরস্কের স্বার্থের সঙ্গে মিলে যায়। কারণ, তুরস্ক এসডিএফ ও পিকেকেকে এক মনে করে এবং তারা সিরিয়ার কুর্দি গোষ্ঠীকে দমন করতে আগ্রহী। ফলে শারার পরিকল্পনা তুরস্কের জন্য লাভজনক হতে পারে। কারণ, এতে কুর্দি বাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এবং তাদের স্বাধীনভাবে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ কমে যাবে।
কিন্তু সিরিয়ার কুর্দিরা তাঁদের রোজাভা (কুর্দি অঞ্চল) অঞ্চলের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চান এবং তাঁরা শারার বাহিনীতে যোগ দিতে চান না। কারণ, একসময় তাঁরা শারার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাঁরা তুরস্কের সহযোগিতায় কুর্দি স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন দমন করতে সাহায্য করতে চান না।
তুরস্ক দাবি করে, তারা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম, তাই সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীর মার্কিন সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। তবে এই ধারণা ট্রাম্পের কাছে গ্রহণযোগ্য। কারণ, তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সিরিয়ার কুর্দিরা নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চান এবং শারার বাহিনীতে যোগদান করতে চান না।
ইসরায়েল সিরিয়ার দুর্বলতা বজায় রাখতে চায়। কারণ, এটি তাদের গোলান মালভূমির দখল আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। শারা সিরিয়ার নতুন নেতা হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে কথা বললেও, তাঁর অবস্থান নিয়ে ইসরায়েল সন্দিহান। এরদোয়ানও ইসরায়েলের জন্য সম্ভাব্য বিপদ। কারণ, তিনি হামাসের সমর্থক। শারা সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে থাকলেও ইসরায়েল তাঁর প্রতি সন্দিহান।
আসাদের সাবেক মিত্র ইরান ও রাশিয়া সিরিয়ায় নিজেদের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে চায়। ইরান গোপন নেটওয়ার্ক ও ‘প্রতিরোধ সেল’ ব্যবহার করে প্রভাব ফিরে পেতে চাইছে এবং রাশিয়া সিরিয়ায় তাদের দুটি সামরিক ঘাঁটি রাখতে চাইছে। শারা রাশিয়াকে ‘আগের ভুলগুলো ঠিক করতে’ এবং আসাদকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেছেন। তবে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চান না।
শারা ‘জাতীয় সংলাপ’ শুরু করা, নির্বাচনের দিকে এগোনো, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা, জাতীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করাসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি। তবে তাঁর নিয়ন্ত্রণে সিরিয়ার বেশির ভাগ এলাকা নেই। এটি তাঁর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শারা এবং সিরিয়ার জনগণের সাহায্য প্রয়োজন। কারণ, তিনি যদি সরকার পরিচালনায় ব্যর্থ হন, তবে সিরিয়ায় বিশাল অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।
অথচ সিরিয়ার পুনর্গঠনের জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তোলার বিলম্ব অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা এখনই সাহায্য ও পুনর্গঠন তহবিল খুলে দিলে সিরিয়ার একটি সফল, গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠন সম্ভব। এটি পশ্চিমা স্বার্থে উপকারী এবং সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে।
এটি একটি বিরল সুযোগ। এ সুযোগ হয়তো আর পাওয়া যাবে না।
সাইমন টিসডাল অবজারভার পত্রিকার পররাষ্ট্রবিষয়ক ধারাভাষ্যকার।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মে মাসের মাঝামাঝিতে ডাকসুর নির্বাচন কমিশন গঠন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন মনে করে, ডাকসু প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীদেরও ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ আছে। সে কারণেই বর্তমান প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুচারুভাবে আয়োজনের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ এবং অগ্রগতিসংবলিত পথনকশা প্রকাশ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা করা হয়, ডাকসু নিয়ে অংশীজনদের আলোচনা শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। একই মাসে ডাকসু সংশোধিত গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করে তা ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়। এর আগে এ বিষয়ে ছয়টি সভা করা হয়। এই গঠনতন্ত্র এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে অনুমোদন হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়, গত জানুয়ারি মাসে ‘ডাকসু ইলেকশন কোড অব কনডাক্ট রিভিউ কমিটি’ করা হয়। তারা সাতটি সভা করে। এটিও চূড়ান্ত হওয়ার পর এখন তা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, মে মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। একই সঙ্গে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। একই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটার তালিকা প্রস্তুত করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। তবে কবে এই তফসিল ঘোষণা করা হবে, সে ব্যাপারে রোডম্যাপে কিছু বলা হয়নি।