পেন্টাগনের অপ্রকাশিত একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্ব সিরিয়া থেকে দুই হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে খবরটি খুব বেশি আলোচনা পায়নি। কারণ, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা-সংক্রান্ত বিতর্ক মিডিয়ার মূল কেন্দ্রে ছিল। মার্কিন সেনারা মূলত সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীকে সহায়তা করছিল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বেঁচে থাকা যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার আইএস যোদ্ধা সিরিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক রয়েছেন। কিন্তু সেনা প্রত্যাহারের কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্দিশিবির থেকে জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়ে ইউরোপ, ব্রিটেন এবং অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য নতুন সন্ত্রাসী হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এই পরিকল্পনা সিরিয়ার জটিল পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত হিসাব-নিকাশ রয়েছে। তবে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক শক্তির ভূমিকা এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ডিসেম্বরে আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়া একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে। তুরস্ক, সৌদি আরব এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো সিরিয়ায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চায় এবং সেখানে আরও সক্রিয় হতে চায়। তাদের লক্ষ্য, নতুন সরকারের কাছে নিজেদের স্বার্থের সুবিধা আদায় করা।

অন্যদিকে ইউরোপ চায় সিরিয়া একটি স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হোক, যাতে চলমান অস্থিরতা কমে এবং শরণার্থীরা নিরাপদে দেশে ফিরে যেতে পারেন। ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা সিরিয়ার দুর্বল অবস্থাকে বজায় রাখতে চায়। কারণ, এটি তাদের গোলান মালভূমির দখল আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।

সিরিয়ার নতুন নেতা হিসেবে আহমেদ আল-শারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে কথা বললেও, ইসরায়েল এবং তুরস্ক তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখে। বিশেষত তাঁর হামাস সমর্থন ও কুর্দি বাহিনীর বিষয়ে অবস্থান নিয়ে তাঁর ওপর দেশ দুটি ভরসা করতে পারছে না।

এখন সিরিয়ার ভবিষ্যৎ অনেকটাই আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। তিনি একসময় আল-কায়েদার যোদ্ধা ছিলেন এবং বর্তমানে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে পরিচিত ইসলামপন্থী মিলিশিয়ার নেতা। এই গোষ্ঠীই বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে।

শারা এখন সিরিয়ার নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর নেতৃত্বের ওপর দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তবে অনেকেই সন্দেহ করছেন, তিনি এখনো তাঁর অতীতের উগ্র মতাদর্শ পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি।

আসাদের সাবেক মিত্র ইরান ও রাশিয়া সিরিয়ায় নিজেদের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে চায়। ইরান গোপন নেটওয়ার্ক ও ‘প্রতিরোধ সেল’ ব্যবহার করে প্রভাব ফিরে পেতে চাইছে এবং রাশিয়া সিরিয়ায় তাদের দুটি সামরিক ঘাঁটি রাখতে চাইছে। শারা রাশিয়াকে ‘আগের ভুলগুলো ঠিক করতে’ এবং আসাদকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেছেন। তবে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চান না।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সিরিয়ায় তাঁর প্রভাব ধরে রাখতে চান। তিনি চান, সিরিয়ায় থাকা ৩০ লাখ শরণার্থী দেশে ফিরে যাক এবং পুনর্গঠনের বড় প্রকল্পগুলো তুর্কি কোম্পানির হাতে আসুক। শারা সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) যোদ্ধাদের তাঁর নতুন জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। এটি তুরস্কের স্বার্থের সঙ্গে মিলে যায়। কারণ, তুরস্ক এসডিএফ ও পিকেকেকে এক মনে করে এবং তারা সিরিয়ার কুর্দি গোষ্ঠীকে দমন করতে আগ্রহী। ফলে শারার পরিকল্পনা তুরস্কের জন্য লাভজনক হতে পারে। কারণ, এতে কুর্দি বাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এবং তাদের স্বাধীনভাবে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ কমে যাবে।

কিন্তু সিরিয়ার কুর্দিরা তাঁদের রোজাভা (কুর্দি অঞ্চল) অঞ্চলের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চান এবং তাঁরা শারার বাহিনীতে যোগ দিতে চান না। কারণ, একসময় তাঁরা শারার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাঁরা তুরস্কের সহযোগিতায় কুর্দি স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন দমন করতে সাহায্য করতে চান না।

তুরস্ক দাবি করে, তারা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম, তাই সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীর মার্কিন সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। তবে এই ধারণা ট্রাম্পের কাছে গ্রহণযোগ্য। কারণ, তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সিরিয়ার কুর্দিরা নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চান এবং শারার বাহিনীতে যোগদান করতে চান না।

ইসরায়েল সিরিয়ার দুর্বলতা বজায় রাখতে চায়। কারণ, এটি তাদের গোলান মালভূমির দখল আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। শারা সিরিয়ার নতুন নেতা হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে কথা বললেও, তাঁর অবস্থান নিয়ে ইসরায়েল সন্দিহান। এরদোয়ানও ইসরায়েলের জন্য সম্ভাব্য বিপদ। কারণ, তিনি হামাসের সমর্থক। শারা সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে থাকলেও ইসরায়েল তাঁর প্রতি সন্দিহান।

আসাদের সাবেক মিত্র ইরান ও রাশিয়া সিরিয়ায় নিজেদের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে চায়। ইরান গোপন নেটওয়ার্ক ও ‘প্রতিরোধ সেল’ ব্যবহার করে প্রভাব ফিরে পেতে চাইছে এবং রাশিয়া সিরিয়ায় তাদের দুটি সামরিক ঘাঁটি রাখতে চাইছে। শারা রাশিয়াকে ‘আগের ভুলগুলো ঠিক করতে’ এবং আসাদকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেছেন। তবে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চান না।

শারা ‘জাতীয় সংলাপ’ শুরু করা, নির্বাচনের দিকে এগোনো, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা, জাতীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করাসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি। তবে তাঁর নিয়ন্ত্রণে সিরিয়ার বেশির ভাগ এলাকা নেই। এটি তাঁর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শারা এবং সিরিয়ার জনগণের সাহায্য প্রয়োজন। কারণ, তিনি যদি সরকার পরিচালনায় ব্যর্থ হন, তবে সিরিয়ায় বিশাল অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।

অথচ সিরিয়ার পুনর্গঠনের জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তোলার বিলম্ব অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা এখনই সাহায্য ও পুনর্গঠন তহবিল খুলে দিলে সিরিয়ার একটি সফল, গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠন সম্ভব। এটি পশ্চিমা স্বার্থে উপকারী এবং সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে।

এটি একটি বিরল সুযোগ। এ সুযোগ হয়তো আর পাওয়া যাবে না।

সাইমন টিসডাল অবজারভার পত্রিকার পররাষ্ট্রবিষয়ক ধারাভাষ্যকার।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ বছরের নিচে কেউ হজে যেতে পারবে না

আগামী বছর হজে যেতে ইচ্ছুকদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে ১৫ বছরের কম বয়সীরা হজে যেতে পারবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সৌদি সরকারের হজ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে এ কথা জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মামুন আল ফারুকের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় শিশুদের সুস্থতা ও নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে ২০২৫ সালে হজ পালনে আগ্রহীদের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ১৫ বছর নির্ধারণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমে নিবন্ধিত হজযাত্রী, হজ এজেন্সি, হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা মানতে হবে। 

উপসচিব মামুন আল ফারুক সমকালকে বলেন, সৌদি সরকারের নির্দেশনা আমাদের মানতে হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ