সংস্কার নির্বাচনের অন্তরায় হলে বাধা দেবে বিএনপি
Published: 10th, February 2025 GMT
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হলে বাধা দেবে বিএনপি। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এ সময় তিনি জানান, নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের ক্ষমতা ইসির নেই। তবে ইসির সঙ্গে তাদের আলাপে মনে হয়েছে, আগামী মে-জুনের মধ্যে ইসি পরিপূর্ণভাবে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হবে। আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়েও তারা কথা বলবেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
গতকাল বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টায় নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে, সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো.
বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা নজরুল ইসলাম খানকে প্রশ্ন করেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর আগে বলেছেন সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা খর্ব হবে। এ বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো তাদের ব্যাপার, তারা বলবে। আমরাও যদি মনে করি সংস্কার কমিশনের কোনো প্রস্তাব সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায়, ওটা নির্বাচন কমিশন কেন, আমরাও বাধা দেব।’
এক ঘণ্টার এই বৈঠক থেকে বেরিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সরকারের আলোচনা শেষে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। সে অনুযায়ী যদি আইন ও বিধির পরিবর্তন হয়, নির্বাচন কমিশনকে তা মানতে হবে। তবে সেগুলো এখনও হয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন, সেটি জানতে চাওয়া হয়েছিল। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রচলিত সংবিধান ও আইন অনুযায়ী, সরকার পদত্যাগ করলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়– এ প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, এখন তো ওই আইনে দেশ চলছে না। কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় মনে হয়েছে, আগামী মে-জুনের মধ্যে তারা হালনাগাদ ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুত থাকবেন। তবে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন কমিশনের নেই। রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে সরকারের অনুরোধ সাপেক্ষে কমিশন নির্বাচন আয়োজন করবে। আরও কিছু প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকলেও সেটা দূর করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব।
ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন এবং সেটি নিয়ে বিএনপি সন্তুষ্ট কিনা– এ প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ওয়েল। আমরা বুঝতে পারছি, আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, আমার মনে হয়, তারা সঠিকভাবেই সেটা নিচ্ছে।’
বিএনপি কত দিনের মধ্যে নির্বাচন চায়– এমন প্রশ্নে এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, যেহেতু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার দায়িত্ব সরকারের, তাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির একটি আলোচনা রয়েছে। সেখানে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৩০ লাখ নতুন ভোটার আগামী দিনে যুক্ত হবে, যারা অতীতে বাদ পড়েছিলেন। আর এই সময়ে নতুন ভোটার যারা হবেন, তাদের ১৮ বছর হবে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি। কাজেই ওটা হিসাব না। ১৫ লাখ মারা গেছেন, তারা বাদ পড়বেন। তবে এর পরও কিছু যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত নভেম্বরে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই বিএনপির সঙ্গে প্রথম বৈঠক। এর মাধ্যমে ছয় বছর পর ইসিতে এলেন বিএনপি নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক আজ
নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবে বিএনপি প্রতিনিধি দল। আগামী মে মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকার কাজ শেষ হলে এই বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমস্যা দেখছে না বিএনপি। দলটির প্রত্যাশা, নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেবে সরকার। আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার কথা সরকারপ্রধানের। তাই জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান ও স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে চাইতে পারে দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি প্রতিনিধি দল দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ ছাড়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে তুলে ধরা হবে বিএনপির অবস্থান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ইতিবাচক সাড়া না পেলে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ইতোমধ্যেই তারা বিভাগীয় সমাবেশ ও জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ নজর ল ইসল ম খ ন সরক র র ব এনপ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সচিবালয়-শাহবাগসহ কয়েক এলাকায় সভা–সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ
রাজধানীতে বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পাশের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মোড় ও মিন্টো রোডে সব ধরনের সভা-সমাবেশ গণজমায়েত, মিছিল এবং শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
আজ ডিএমপি সদর দপ্তরের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সানা আলী ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন। সেখানে বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পাশার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মোড় ও মিন্টো রোডে যে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হলো।