গাজীপুর শহর থেকে ঢাকা-জয়দেবপুর রেল সড়কের পূর্ব পাশে ৪-৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ধীরাশ্রমের দাক্ষিণখান। ওই এলাকাতেই সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি। গতকাল রোববার দুপুরে সেখানে দেখা যায়, দোতলা বাড়ির প্রধান ফটকে দুটি তালা ঝুলছে। আশপাশে স্থানীয় ৪০ থেকে ৫০টি বাড়ির প্রায় প্রতিটিই ফাঁকা। ওইসব বাড়ির ফটকেও তালা ঝুলছে। সড়কে তেমন মানুষ বা যানবাহন নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে দাক্ষিণখান এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেই রাত থেকে আটকের ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন এলাকার অনেক বাসিন্দা। এ কারণে অধিকাংশ বাড়িতে তালা ঝুলছে। সড়কেও লোকজনের তেমন চলাচল দেখা যাচ্ছে না। দু-চারজনকে এলাকায় দেখা গেলেও তাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তারা স্থানীয় নয়; চাকরির প্রয়োজনে ওই এলাকায় বসবাস করেন।
আব্দুস সামাদ নামে একজন বলেন, ‘আমি এ এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়ায় থাকি। পুলিশের ভয়ে বাড়ির সবাই বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। আমাকেও আটক করেছিল। কিন্তু আমার পায়ে সমস্যা দেখে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।’
স্থানীয় এক নারীর ভাষ্য, স্বাভাবিক সময়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের হাঁটাচলায় সরগরম থাকত এলাকা। এমন জনশূন্য অবস্থা আগে কখনও দেখেননি। হামলার পর থেকেই পরিস্থিতি থমথমে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, যারা মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে, তাদের কি আর এখন এলাকায় থাকার কথা? তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছে। অথচ পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। নিরীহ মানুষকে আটক করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আবু তাহের নামে একজন বলেন, ‘পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ভয়ে সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। আমার দুই ছেলে ও এক বোনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তবুও পুলিশ আমার ছেলে হৃদয় ও ফাহাদকে ধরে নিয়ে গেছে। এক বোনকেও আটক করেছে। ঘটনায় জড়িতদের আটক করা হোক, এটা আমরাও চাই। কিন্তু নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়।’
শুক্রবার সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলায় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন। প্রতিবাদে শনিবার দিনভর গাজীপুরে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মহানগর পুলিশ কমিশনারের ক্ষমা প্রার্থনা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় আন্দোলন স্থগিত করেন। জানা গেছে, এর আগেই দক্ষিণখান এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্য ১১ জন সরাসরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান।
সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) সিদ্দিক হোসেন জানান, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে রোববার একটি মামলা করেছেন। আর শনিবার সন্ধ্যায় গুলি ছোড়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিরপরাধ কাউকে ধরার সুযোগ নেই। এ রকম হয়ে থাকলে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালিয়াকৈর প্রতিনিধি জানান, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও শনিবার শিক্ষার্থীকে গুলি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে তারা কালিয়াকৈর উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন। কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ জানান, শিক্ষার্থীরা বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম জ ম ম ল হক র ব ড় ত এল ক য় ন এল ক ঘটন য় র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
দুপুরে হাত–পা বেঁধে হত্যার পর ডাকাতি
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় পল মজুমদার খোকন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ডাকাতরা তার ছেলে পিয়াস মজুমদারকে হাত–পা বেঁধে হত্যার পর নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের লাকিরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পল মজুমদার খোকন একজন দন্তচিকিৎসক ও তার স্ত্রী অনিতা বৈদ্য একজন নার্স। প্রতিদিনের মধ্যে আজ সকালে তারা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। দুপুরে পল মজুমদার বাড়িতে এসে তার ছেলে পিয়াস মজুমদারকে (২২) হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাটের ওপর দেখতে পেয়ে চিৎকার দেন। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পিয়াস মজুমদারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডাকাতরা পিয়াস মজুমদারকে হত্যার পর নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পল মজুমদার খোকনের প্রতিবেশী সলমন মজুমদার। তিনি বলেন, পল মজুমদারের চিৎকার শুনে তারা বাড়িতে গিয়ে পিয়াস মজুমদারকে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় দেখে হাসপাতালে পাঠান। খোকন মজুমদারের ঘরের সব আসবাবপত্র ভাঙচুর ও এলোমেলো অবস্থায় পাওয়া গেছে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।