অপরাধী ধরতে অভিযানে নেমে শান্তিতে নেই পুলিশ। কোথাও হচ্ছে হামলা, কোথাও পড়তে হচ্ছে বাধার মুখে। ঘেরাও করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া, থানা ভাঙচুরের উদাহরণও আছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন ঘটনা ঘটছে একের পর এক। এসব কারণে অপরাধ দমনে কঠোর হতে পারছে না এ বাহিনী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কোনো কোনো সময় বনে যাচ্ছে নীরব দর্শক। আবার কখনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর ঘটনাস্থলে ছুটছেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের যখন এ পরিস্থিতি, তখন সেবাপ্রার্থীরাও পড়ছেন দোটানায়। জনমনে দেখা দিচ্ছে নানা প্রশ্ন। সব মিলিয়ে পুলিশ যেন এখন ‘শাঁখের করাত’!
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখনও জনমনে উদ্বেগ রয়ে গেছে। এ পটভূমিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে আক্রমণের শিকার হওয়ার পর সংকট কাটিয়ে উঠতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ‘দলবদ্ধ রোষ’-এর নামে যারা আইন প্রয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের। 

মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারও কারও মধ্যে আইনকে তাচ্ছিল্য করার যে প্রবণতা, এটি কাটিয়ে উঠতে না পারলে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন। আবার অনেক পুলিশ সদস্য আইনি কাঠামোর মধ্যে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধায় থাকেন। তাদের মধ্যে শঙ্কা হলো, এ পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে তাদের কোনো প্রশাসনিক জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হতে পারে। আবার কেউ কেউ ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ে ভীত। কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল আতঙ্কে থাকেন।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক সময় পরিস্থিতি সামলাতে তাড়াহুড়ো করে তাৎক্ষণিক অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এতে মাঠ পর্যায়ে ভুল বার্তা যাচ্ছে। থানাসহ অপারেশনাল ইউনিটে যারা রয়েছেন, তাদের অনেকের মধ্যে নিরাপত্তা ও যখন-তখন শাস্তির মুখে পড়ার শঙ্কা আছে। তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে তদন্ত করে প্রকৃত অর্থে যারা সম্পৃক্ত, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পরিস্থিতির কারণে নিরপরাধ কারও ঘাড়ে শাস্তির খড়্গ পড়লে বাহিনীতে ভীতি তৈরি হবে। 

ঘটনার পরম্পরা
গেল বুধবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল মনসুরকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে স্থানীয়দের হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। 
চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন শিক্ষার্থীকে আটক করায় গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরা-পশ্চিম থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে তারা উত্তরা-পূর্ব থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। আন্দোলনের মুখে আটক তিনজনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। একই সঙ্গে উত্তরা-পশ্চিম থানার এসআই আবু সাঈদকে প্রত্যাহার করা হয়। 
থানায় ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার আহম্মদ আলী সমকালকে বলেন, হামলার তেমন ঘটনা ঘটেনি। গেট ধাক্কাধাক্কি করেছিল। এতে মামলা হওয়ার কিছু নেই। 

গত ১৬ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালায় ট্রাফিক পুলিশ। এ সময় শহরের বাড়বাড়ি এলাকায় মেঘনা সড়কে কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি অটোরিকশা জব্দ করা হয়। এর জেরে অটোরিকশা চালকরা ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ট্রাফিক পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। পরে চালকরা অভিযানের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করে। হামলার ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশ লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুর সদর থানার এসআই ফজলুল করিম সমকালকে বলেন, এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপর আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

৩০ ডিসেম্বর নরসিংদীর ডাকাতি মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে মাধবদী থানায় হামলা ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মামলা করে পুলিশ। মাধবদী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবদী এলাকা থেকে তেলবোঝাই একটি গাড়িতে ডাকাতি হয়। ওই ঘটনায় তেলের মালিক থানায় মামলা করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মাধবদী টাটাপাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক পৌর কমিশনার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে তানভীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর জেরে দেলোয়ারের লোকজন থানায় ভাঙচুর চালায়। হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এই মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করছিলেন দলটির কর্মীরা। এ সময় পুলিশ এক কর্মীকে আটক করে গাড়িতে তোলে। তাঁকে ছিনিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের গাড়ির গতিরোধ করে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তারা আটক হওয়া কর্মীকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন পাঁচ পুলিশ সদস্য। এক পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন হামলাকারীরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যকে ছাড়িয়ে নেন। টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম বলেন, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়। এই মামলায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২৬ ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার পশ্চিম হাজীপুরে দ্বীন ইসলাম নামে এক মাদক মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেন দুর্বৃত্তরা। হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। ঘটনার পর পরই হামলায় জড়িত চারজনকে আটক করে পুলিশ। বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, দ্বীন ইসলাম ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিল। ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলাটি তদন্তাধীন। 
১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ বাংলাবাজার এলাকায় দিনদুপুরে পুলিশের ওপর হামলা করে বিস্ফোরক মামলার আসামি রায়হান উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। আসামি গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়ার সময় পথে গাড়ির গতিরোধ করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের এক কনস্টেবল আহত হন। 
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ের কাপ্তাই রাস্তার মাথায় গত ১৪ জানুয়ারি চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। অটোরিকশায় তল্লাশির সময় কয়েকজন ব্যক্তি পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ায়। এক পর্যায়ে তারা চিৎকার করে পুলিশের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে।

১ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর একটি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ফখরুল আনোয়ারের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। ‘ছাত্র পরিচয়ে’ একদল ব্যক্তি অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে ফেলে স্লোগান দিতে থাকে। এর পর ফখরুলকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁকে কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সামাজিক অনুষ্ঠানে এভাবে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে ঘেরাও করার বিষয়কে নৈরাজ্যকর বলছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বলছেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এটি এতদূর গড়িয়েছে। তবে ব্যর্থতা মানতে নারাজ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।

সামাজিক অনুষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন– জানতে চাইলে খুলশী থানার ওসি মজিবুর রহমান কোনো মন্তব্য করেননি। 
টিআইবি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, কোনো ওয়ান্টেড ব্যক্তিকে পুলিশ কোথা থেকে কীভাবে গ্রেপ্তার করবে, সেটি একান্তই পুলিশের ব্যাপার। কিন্তু এভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানে মব জাস্টিসের মাধ্যমে কাউকে ঘেরাও করে আটক করা আদিম বর্বরতা। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সাগর হত্যা মামলার আসামি শফিকুল ইসলাম মিন্টু গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই তাঁকে ছাড়াতে থানায় যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী পরিচয়ে একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ওই কাউন্সিলরকে ছাড়তে পুলিশকে চাপ দেন। তবে গ্রেপ্তার হওয়া কাউন্সিলর মিন্টু সাগর হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ায় তাঁকে ছাড়তে পুলিশ অপারগতা প্রকাশ করায় তারা ক্ষুব্ধ হন। মূলত ওই ঘটনার জেরেই পরদিন ওই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ডিআইজি অফিসে গিয়ে তাণ্ডব চালায়। 
৩০ আগস্ট বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানায় ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা। পুলিশ জানায়, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শহীদ আরজু মনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নগরীর রাখাল বাবুর পুকুরপাড়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে এক পক্ষ থানায় এসে গাড়ি ভাঙচুর করে। 

২৩ জানুয়ারি রাজধানীর নিউমার্কেট থানার সামনে পুলিশের ওপর হামলা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মিথুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান তাঁর সমর্থকরা। হামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার তারিক লতিফসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। 

৬ জানুয়ারি ভোলার বোরহানউদ্দিনে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন পুলিশের অতিরিক্ত উপপরিদর্শক আলমাস ও নুরুল ইসলাম। তাদের এলোপাতাড়ি মারধর এবং ছুরি দিয়ে মাথা, হাত ও পিঠে আঘাত করা হয়। 
৭ ডিসেম্বর নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় হত্যা মামলার আসামি ছাব্বির শেখকে পুলিশের কাছ থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ৫ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে হাতকড়াসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগীরা। 

বিশ্লেষকরা যা বলছেন
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ড.

ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, পুলিশ একটা বাহিনী হিসেবে তার নৈতিক ও পেশাগত অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে মনোবল হারিয়েছে তারা। পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। অনেকে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। অতি ক্ষমতার চর্চাও করছেন কেউ কেউ। বাস্তবভিত্তিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। প্রত্যাশিত অগ্রগতির জন্য বৃহত্তর স্বার্থে সব অংশীজন নিয়ে আলোচনা দরকার। যৌথ কমান্ড সেন্টার করা হয়েছে, যেটা ইতিবাচক। 
এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, আইন অমান্যের ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এসব ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। পুলিশ যদি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ভুল করে, তাহলে আদালত রয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা রয়েছেন। তারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। হইচই ও বিক্ষোভ দেখালেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। 

পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, পেশাগত দায়িত্ব আইনানুগভাবে পালনে পুলিশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে বাধা এলে কোনো ছাড় নয়। 
এ ব্যাপারে অপরাধ ও সমাজ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক সমকালকে বলেন, আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ব্যাপারে জোরালো প্রতিরোধ না করতে পারলে সমস্যা বাড়বে। মনোবল ও নৈতিক সংকট এখনও পুলিশ পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আবার কেউ অভিযোগ তুললেই মাঠ পর্যায়ের কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আলোচনা-সমালোচনা হলেই ব্যক্তির ওপর দায় চাপানো যাবে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে পুলিশ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। 

তিনি আরও বলেন, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো প্রবণতা তখনই দেখা যায়, যখন জড়িতরা মনে করেন, এ জন্য তাদের তেমন কিছু হবে না। ‘মব ভায়োলেন্স’ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। 

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া প্রতিনিধি)

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর প ল শ সদস য পর স থ ত র ঘ র ও কর র ঘটন য় ব যবস থ ল ইসল ম এ ঘটন য় পর য য় চ র কর এল ক য় দর থ ন আওয় ম বলছ ন নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রীকে বিয়ে না করা নোবিপ্রবি সেই শিক্ষককে শোকজ

ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক করার পরও অন্যত্র বিয়ে করায় প্রতারণার অভিযোগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তাকে এ নোটিস দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, নোবিপ্রবির বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানের (সাময়িক বরখাস্তকৃত) বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ দেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা,  সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আইন অনুযায়ী কেন আপনাকে চাকরিচ্যুত/চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না, তা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার  বরাবর প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। একইসঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থনে যদি কোন বক্তব্য থাকে তাও অত্র কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে লিখিত আকারে উপস্থাপনের বিষয়ে বলা হয়েছে। 

নোটিশে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারণা করে অসদাচরণ করেছেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন। তিনি বিয়ের দুইদিন আগে (৯ অক্টোবর, ২০২৪) প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী লিখেছিলেন, “২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ মাস তিনি আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করেন। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না চাইলে এবং সব জায়গা থেকে ব্লক দিলে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে বলতেন আমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন।”

অভিযোগপত্রে আরো লিখেছিলেন, “২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন, ‘আমার আশেপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন। আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানা বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকায় আমি তার সঙ্গে সম্পর্কে যেতে রাজি হই।  আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে।”

তিনি বলেন, “এর মধ্যে কয়েক দফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন। তার পরিবারকে আমি জানাতে বলি। ২০২৪ সালের কুরবানির ঈদের পর তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এরই মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সবাই সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত তিনি আমাকে বুঝাতে থাকেন, পরিবার থেকে অন্যত্র তার জন্য পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।”

তিনি আরো বলেন, “গত ৮ ও ৯ অক্টোবর আমার খালামনিকে মোস্তাফিজ জানান, ‘তিনি তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন। আমাকে আগামী ২/৩ বছর স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায়, আমাকে আয় করে তাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন। আমাকে কাজী অফিসে যেতে হবে। আমার পরিবারের কেউ যেতে পারবে না।’ আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়।”

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, “পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে তড়িঘড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে আমার থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রবিবার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন, যার সঙ্গে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।”

ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে আরও লিখেন, “তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ অক্টোবর আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং তার স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে দেখা করি। পরদিন সকাল থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং তার স্ত্রীকে কল দিয়ে ডিভোর্স দিতে বলি। কিন্তু তারা জানান, তারা কেউ কাউকে ছাড়বে না। দুপুর দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।”

নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছর ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ