সম্প্রতি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ-সংঘাত অনেকটা থেমেছে। সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পালিয়ে যাওয়ায় দেশটিতে অবসান হয়েছে ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পরিবর্তন নতুনভাবে আগ্রহী করে তুলছে বিনিয়োগকারীদের। দীর্ঘ অস্থিরতার পর এখন অঞ্চলটিতে শান্তি ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। 

গতকাল রোববার প্রকাশিত রয়টার্সের বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘গাজা দখলের’ প্রস্তাব যদিও নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন এবং লেবাননের নতুন সরকার বিনিয়োগকারীদের নতুন আশা দেখাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক শান্তি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা মিসর দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার বন্ড বিক্রি করেছে। কয়েক বছর আগেই চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটির অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে, লেবাননের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির ফলে বিনিয়োগকারীরা আবারও দেশটির বন্ড কিনতে শুরু করেছেন। ফলে দেশটির বন্ডের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বৈরুতের নতুন সরকার গঠন দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রথম ধাপ বলেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এফআইএম পার্টনার্সের বিনিয়োগ বিশ্লেষক চার্লি রবার্টসন বলেন, ‘গত কয়েক মাসে এ অঞ্চলের চেহারা বদলে গেছে এবং বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে এটি এক নতুন গতিশীলতা তৈরি করেছে।’ তবে ট্রাম্পের নতুন গাজা পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আমুন্দির উদীয়মান বাজার বিভাগের প্রধান ইয়ারলান সিজদিকভ জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি মিসরের বন্ড কিনছিল। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনার পর তারা এখন সতর্ক অবস্থান নিচ্ছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিবর্তন বিনিয়োগের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। তবে কিছুটা রাজনৈতিক ঝুঁকি এখনও আছে। বিশেষত ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ও হুতিদের আক্রমণের মতো বিষয়গুলো ঘুরে দাঁড়ানোর পথে থাকা এ অঞ্চলের বাজারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র বন ড

এছাড়াও পড়ুন:

পূরণ হলো না স্বপ্ন, আহত রিয়ালে দুঃখী এমবাপ্পে

টিম বাসের সামনে পেছনে প্যারেড ঘোড়ার কুচকাওয়াজ। রাস্তার দুধারে সমর্থকের হাতে রাখা রংমশাল থেকে মায়াবী ধোঁয়া, যেন রাজার আগমন ঘটছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দুর্গে! ম্যাচের আগে এমবাপ্পেদের প্রবেশপথের এই দৃশ্য ফেসবুক ‘রিল’-এ ভাইরাল হয়েছিল! সেই সঙ্গে বেলিংহামের ‘প্রত্যাবর্তনের’ হুঙ্কার কিংবা সমর্থকদের ‘আর্সেনালকে দেখিয়ে দেওয়ার’ বিভিন্ন পোস্ট– সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা গর্জে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, বাস্তবের ম্যাচে বর্ষেনি ততটা! 

বরং ঘরের উঠোনে ৮০ হাজার দর্শকের সামনে আর্সেনালের কাছে ১-২ গোলে কঠিনভাবে আহত হয়েছে লা ব্ল্যাঙ্কোসরা। পনেরোবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী স্প্যানিশ ক্লাবটি এবার আটকে গেল কোয়ার্টারেই। সেখানে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের অগ্রগামিতায় ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল ১৬ বছর পর সেমিতে। যেখানে তাদের মোকাবিলা এখন প্যারিসের দল পিএসজির সঙ্গে।

অথচ এই পিএসজি ছেড়েই ইউরোপের কিং হতে মাদ্রিদে এসেছিলেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল মাদ্রিদে গেলেই শুধুই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের ইচ্ছাপূরণ হবে– এমন অন্ধ আকাঙ্ক্ষা তাড়া করেছিল তাঁকে। এই মুহূর্তে আহত রিয়ালে তাই সবচেয়ে দুঃখী এই মানুষটিই। বুধবার রাতে আর্সেনালের বিপক্ষে অফসাইডের একটি গোলের মিথ্যা হুল্লোড় ছাড়া কিছুই করতে পারেননি তিনি। 

ব্রাজিলিয়ান যে তারকাকে নিয়ে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার বয়কট করেছিল রিয়াল, সেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই বা কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। ৬৭ মিনিটে যে গোলটি তিনি করেছেন, সেটাতেও আর্সেনালের ডিফেন্ডারের স্পষ্ট ভুল ছিল। এমবাপ্পেকে ফাউল করার কারণে যে পেনাল্টি ভিএআর করে দিয়েছে বলে মাদ্রিদ সমর্থকরা অভিমান করেছেন, এর বাইরে আর ক’টা সুযোগই বা তারা তৈরি করতে পেরেছে। 

পুরো ম্যাচে ৬০ শতাংশ বল পজিশনে রেখেও গোলমুখে ‘শটস অন টার্গেট’ মাত্র চারটি। যেখানে তিন গোলের বোঝা কাঁধে নিয়ে ম্যাচে নামা ফরোয়ার্ডদের ডিবক্সের কাছাকাছি এসেই আক্রমণ শানানোর কথা, সেখানে কিনা বেলিংহাম, ভিনিরা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের চেষ্টা করে গেছেন। মিডফিল্ডে ভালভার্দে আর চুয়েমেনিকে এমন স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের জন্য অনেকটাই অপ্রস্তুত মনে হয়েছে। 

তবে গোলরক্ষক কতুর্য়া বার্নাব্যুর দুর্গ সামলানোর চেষ্টা করে গেছেন সবটুকু নিংড়ে দিয়ে। ম্যাচের ১৩ মিনিটে আর্সেনালের ইংলিশ ফরোয়ার্ড বুকাও সাকার দুর্বল পেনাল্টি রুখে দেন কর্তুয়া। কিন্তু সেই সাকারেরই চিপ শটে গোল রিয়ালের এদিন প্রথম গোল হজম করতে হয়। সাকা বক্সে ঢোকার সময় একই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিয়ালের চার ডিফেন্ডার! ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে হাল ছেড়ে দেওয়া রিয়ালের জালে দ্বিতীয় গোলটি করেন আর্সেনালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্তিনেল্লি।

এদিন ম্যাচের পর সবার শেষে মাঠ ছাড়েন কর্তুয়া। বেলজিয়ামের এই গোলরক্ষক সাত বছর ধরে আছেন দলটির সঙ্গে। তাই এদিনের হারের কারণ হিসেবে তাঁর চোখে ধরা পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের গভীর এক শূন্যতা। ‘আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। এবং সবকিছু বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আমরা কেন একটি দল হয়ে খেলতে পারছি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিত। আপনি যদি শুধু ভিনি আর এমবাপ্পের ওপরই নির্ভর করে থাকেন, তাহলে তা মাঝে মাঝে কাজে দেবে, কিন্তু সবসময় দেবে না।’ 

কর্তুয়ার ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, যে রিয়াল সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে বলে ম্যাচের আগে তাদের ভিডিও দেখানো হয়েছিল লকার রুমে, সেই মাদ্রিদ অন্তত এটা না। প্রত্যাবর্তন করার প্রত্যাশার প্রচণ্ড চাপ, মিডফিল্ডের দুর্বলতা এবং আক্রমণ ভাগে তারকাদের স্বার্থপরতা– রিয়ালের মুকুট হরণে আপাতত এই তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছে স্প্যানিশ দৈনিকগুলো। যেখানে মার্কা শিরোনাম করেছে– ‘নো মিরাকল’।

প্রথম লেগের ম্যাচেই আর্সেনালের ডেকলান রাইস গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় লেগে এসেও তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বার্নাব্যুতে সেলফি তুললেন। ম্যাচের ২৮ মিনিটে ডিবক্সের মধ্যে রাইসের বাধায় পড়ে যান এমবাপ্পে। রেফারি রাইসকে হলুদ কার্ড পেনাল্টি দিলেও রাইস জোরালো যুক্তি দেন এই বলে যে তিনি পেছন থেকে এমবাপ্পেকে হাত বাড়িয়ে ধরে রাখলেও তা মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো জোরালো ছিল না। ভিএআর রাইসের এই যুক্তি মেনে নিয়ে তা বাতিল করে দেয়। ঠিক এখানেই মাদ্রিদের যত অসহায় আফসোস জমাট বাঁধে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ