বিভক্তির করিডোর ছাড়ল ইসরায়েলি বাহিনী
Published: 10th, February 2025 GMT
গাজার দুই অংশকে বিভক্ত করা নেটজারিম করিডোর থেকে অবশেষে সেনাসদস্যদের প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। এর মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজা থেকে তাদের অবস্থান সরিয়ে নিল। করিডোরটি উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই করিডোরটি দখলে নেয় ইসরায়েল।
গত ১৫ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এ সেনা প্রত্যাহারকে বিজয় হিসেবে দেখছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। রয়টার্সের ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সামরিক যানবাহন উপকূল থেকে ইসরায়েলি সীমান্তের দিকে সরে যাচ্ছে।
এদিকে এক বছরেরও বেশি সময় গাজায় আটক থাকার পর থাইল্যান্ডের পাঁচ নাগরিক দেশে ফিরেছেন। গত মাসে তাদের মুক্তি দেয় হামাস। তারা হলেন– ওয়াচারা শ্রীয়াউন, পংসাক থায়েনা, সাথিয়ান সুওয়ান্নাখাম, সারুসাক রুমনাও ও বান্নাওয়াত সায়েথাও। গতকাল রোববার সকালে তারা ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে অবতরণ করলে পরিবারের সদস্যরা বুকে জড়িয়ে নেন। এ সময় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। পাঁচজনই শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া সাত ফিলিস্তিনিকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইসরায়েলি কারাগারে এসব ফিলিস্তিনির ওপর নির্মম নির্যাতন চলে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ হাজার ১৮৯ জন নিহত ও ১ লাখ ১১ হাজার ৬৪০ জন আহত হন। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক লাশ থাকায় মোট মৃত্যু ৬২ হাজারের বেশি বলে ধরা করা হয়।
লেবাননে বিমান হামলায় নিহত ছয়
হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মধ্যেই পূর্ব লেবাননে বিমান হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আহত হন দু’জন। গত শনিবার দেশটির পূর্ব বেকা অঞ্চলের জেন্নাতা শহরের কাছে শারা এলাকায় ড্রোন হামলা চালানো হয়। গত ২৭ নভেম্বর দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সূত্র: রয়টার্স ও আলজাজিরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল কর ড র
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রীকে বিয়ে না করায় নোবিপ্রবি শিক্ষককে বরখাস্ত
ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে অন্যত্র বিয়ে করায় প্রতারণার অভিযোগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন শাখার এক নোটিসে এ তথ্য জানা গেছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বিয়ের প্রলোভনে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ করেন। নোবিপ্রবির যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটি অভিযোগের তদন্ত শেষে প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সুপারিশ এবং ‘উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা, ২০০৮’ অনুযায়ী বিভিন্ন আইনি পর্যায় চলমান থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তাফিজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী লিখেছিলেন, “২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ মাস তিনি আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করেন। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না চাইলে এবং সব জায়গা থেকে ব্লক দিলে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে বলতেন আমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। পরে তিনি আমার মায়ের নম্বর জোগাড় করে ফোন দিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর সব সুখ আমি আপনার মেয়েকে দেব, কোনো স্বামী এই পৃথিবীতে দিতে পারবে কিনা আমি জানি না।’ তাও আমার মা না করে দেন।”
অভিযোগপত্রে আরো লিখেছিলেন, “এভাবে আমাকে ফাঁদে ফেলায় মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এত কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন, ‘আমার আশেপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন। আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানা বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকায় আমি তার সঙ্গে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে।”
তিনি বলেন, “এর মধ্যে কয়েক দফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন। কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানাও, তারপর বিয়ে করবো। ২০২৪ সালের কুরবানির ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এরই মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সবাই সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত তিনি আমাকে বুঝাতে থাকেন, পরিবার থেকে অন্যত্র তার জন্য পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।”
তিনি আরো বলেন, “গত ৮ ও ৯ অক্টোবর আমার খালামনিকে মোস্তাফিজ জানান, ‘তিনি তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন। আমাকে আগামী ২/৩ বছর স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায়, আমাকে আয় করে তাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন। আমাকে কাজী অফিসে যেতে হবে। আমার পরিবারের কেউ যেতে পারবে না।’ আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়।”
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, “পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে তড়িঘড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে আমার থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রবিবার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন, যার সঙ্গে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।”
ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে আরও লিখেন, “তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ অক্টোবর আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং তার স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে দেখা করি। পরদিন সকাল থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং তার স্ত্রীকে কল দিয়ে ডিভোর্স দিতে বলি। কিন্তু তারা জানান, তারা কেউ কাউকে ছাড়বে না। দুপুর দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।”
নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছর ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী