গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আটক সিরাজগঞ্জ -৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম
Published: 10th, February 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আটক হয়েছেন সিরাজগঞ্জ -৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য মো. চয়ন ইসলাম (৬১)। রোববার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে উপজেলার মাটির মসজিদ এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে আটক করে শ্রীপুর থানা-পুলিশ।
সাবেক এই সংসদ সদস্যের আটকের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) চৌধুরী মো.
শ্রীপুর পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুন আকন প্রথম আলোকে বলেন, রোববার রাতে শ্রীপুর থানা-পুলিশ ওই এলাকার খাইরুল ইসলাম মিলনের বাড়ি থেকে মো. চয়ন ইসলামকে আটক করে। তিনি ওই বাড়িতে প্রায় দুই মাস ধরে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।
মামুন আকন আরও বলেন, চয়ন ইসলাম শ্রীপুরের ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন, এমন তথ্য পান স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ও ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা। বিষয়টি শ্রীপুর থানায় জানানো হয়। এর পর সেই বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ তাকে ওই বাড়ি থেকে আটক করে শ্রীপুর থানায় নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. চয়ন ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চর নবীপুর গ্রামের মাযহারুল ইসলামের ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জ -৬ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে চয়ন ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
ঈশ্বরদীর অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি লিচুর মুকুল
লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।
সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।