Samakal:
2025-03-13@00:47:38 GMT

উদীচীতে সংকট আরও বেড়েছে

Published: 9th, February 2025 GMT

উদীচীতে সংকট আরও বেড়েছে

জাতীয় সম্মেলনে হট্টগোল, হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করার অভিযোগ ও পাল্টাপাল্টি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীতে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। দু’পক্ষ এবার পাল্টাপাল্টি দোষারোপে নেমেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে ভাঙন ধরিয়ে সংগঠনটি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগও উঠেছে।    

এদিকে উদীচীতে ভাঙনের এমন শঙ্কা তৈরির পেছনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কোনো কোনো প্রভাবশালী নেতাকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও ক্ষুদ্র স্বার্থে সিপিবি নেতারা উদীচীতে ভাঙন ধরাতে চাইছেন। সিপিবির সর্বশেষ কংগ্রেসে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। যার প্রভাব এখন দলের অন্যান্য গণসংগঠনেও পড়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। 
উদীচীর তিন দিনব্যাপী ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন গত শনিবার বিকেলে ঢাকার শিশু একাডেমি মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে হট্টগোলের ঘটনাটি ঘটে। পরে কাউন্সিল অধিবেশনের সভাপতি হাবিবুল আলম সংগঠনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জামশেদ আনোয়ার তপনের নাম ঘোষণা করেন। সম্মেলন মঞ্চে এ কমিটির শপথবাক্য পাঠ করান হাবিবুল। এ নিয়ে আরেক পক্ষ তুমুল প্রতিবাদ জানালে উত্তেজনা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। সাত কর্মীর আহত হওয়ার খবরও চাউর হয়। পরে অন্য পক্ষ বদিউর রহমানকে সভাপতি পদে রেখে অমিত রঞ্জন দে’কে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। এই পক্ষও পরে শপথ নেয়। 

এর পর জাতীয় সম্মেলন ‘সফল’ হওয়ার দাবি করে শনিবার রাতেই তপনের নেতৃত্বাধীন অংশটি মিছিল বের করে। সংগঠনের সভাপতি বদিউর রহমানকেও মিছিলে যুক্ত করা নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হয়। এতে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনে ভাঙনের শঙ্কা দেখা দেয়।  
এ অবস্থায় উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান গতকাল রোববার বিবৃতি দিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। উদীচীর প্যাডে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, উদীচীর সম্মেলন ঘিরে আগে থেকেই ষড়যন্ত্র ছিল। কাউন্সিলে হট্টগোল থামাতে দেওয়া হয়নি তাঁকে।  

বিবৃতিতে প্রবীণ এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, সম্মেলন-পরবর্তী মিছিলেও স্বেচ্ছায় যাননি তিনি। হাবিবুল আলম ও জামশেদ আনোয়ার তপনের নেতৃত্বাধীন পক্ষটি ভুল বুঝিয়ে ও জোর করে মিছিলে নিয়ে গিয়েছিল তাঁকে। তাঁর (বদিউর) অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া ও পরে উদীচী অফিসে নেওয়ার কথা বলে জোর করে রিকশায় ওঠানো হয়। এর পর মিছিল শুরু করে একজন কর্মীসহ তাঁকে বহনকারী রিকশাকে ওই মিছিলের সামনে চলতে বাধ্য করা হয়। এক পর্যায়ে রাতেই তাঁকে উদীচী অফিসে নিয়ে ‘নতুন কমিটির প্রথম সভা’ করানোর চেষ্টাও করা হয়।  
হাবিবুল-তপনের নেতৃত্বাধীন এ পক্ষটি গতকাল বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ‘সংগঠন ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের’ পাল্টা অভিযোগ এনেছেন। এতে তপন বলেন, উদীচীর কাউন্সিলে প্রতিনিধিদের মতামতের বিপরীতে গিয়ে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা দুঃখজনক ও স্পষ্টত ষড়যন্ত্র।  
এ কমিটির সহসভাপতি হাবিবুল আলম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সর্বব্যাপী নতুন চিন্তার সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার ঐতিহাসিক দায় বর্তেছে উদীচীর ওপর। যারা বিভক্তি ডেকে আনছে, তারা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্য শুভশক্তি নয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এ অংশের কমিটির সহসভাপতি ইকরামুল কবীর ইল্টু, জহিরুল ইসলাম স্বপন, সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আরিফ নূর, বিজন রায়, সদস্য রুমি দে, শিল্পী আক্তার, তাহমিনা আক্তার নীলা প্রমুখ। রাতে অন্য অংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত  রঞ্জন দে সমকালকে বলেন, হাবিবুল-তপনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং তারাই অগঠনতান্ত্রিকভাবে উদীচী নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।  

অন্যদিকে উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব ঘিরে ফেসবুকেও পাল্টাপাল্টি পোস্ট এবং ছবি-ভিডিও শেয়ার অব্যাহত রয়েছে। সিপিবির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম একাই গত দু’দিনে আটটি পোস্ট ও ভিডিও শেয়ার দিয়ে তপনের কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সিপিবি ও উদীচীর অন্য নেতারাও কেউ তপন আবার কেউ অমিতকে বৈধ সাধারণ সম্পাদক দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কমেন্টে অনেকেই উদীচী ভেঙে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 
জানতে চাইলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সমকালকে বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে কোনো পোস্ট দিইনি। কেবল আমার কাছে আসা পোস্ট ও ভিডিও শেয়ার করেছি। আর উদীচীতে সৃষ্ট সংকটের জন্য সিপিবির কাউকে দায়ী করার বিষয়টি অপপ্রচার। বরং  গণসংগঠন হিসেবে উদীচী এই সংকট কাটিয়ে উঠবে এবং সিপিবি সবসময়ই পাশে থাকবে।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, উদীচী গঠনতান্ত্রিক বিধিবিধান মেনে চালিত হবে– এটাই প্রত্যাশা। তবে উদীচীর বিষয়ে সিপিবির কেউ যদি অনৈতিক ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেন, সে ক্ষেত্রে আমরা নিয়মানুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় কম ট ষড়যন ত র তপন র ন কম ট র স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামীর গুমের তদন্তে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান দেখছেন না, অভিযোগ ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুম কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেও স্বামীর গুমের বিষয়ে তদন্ত বা অনুসন্ধান চালানোর স্পষ্ট কিছু দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর (লুনা)। বিএনপির চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রথম প্রত্যাশা ছিল ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া সবাইকে ফেরত পাওয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাদের কোনো স্পষ্ট অবস্থান দেখতে বা জানতে পারিনি।’

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর পিরেরবাজার এলাকায় গতকাল রোববার বিকেলে দশঘর ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাহসিনা রুশদীর এ কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ইলিয়াস আলীকে ফেরত পাওয়ার জন্য এ দোয়ার আয়োজন করা হয়।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, তাঁকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন গুম করেছিল। ওই সময় ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয় বিশ্বনাথ উপজেলায়, যে হরতালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন।

সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময় ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বন্ধের দাবিতে সিলেটে জোরালো আন্দোলন দানা বাঁধে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে। আঞ্চলিক ইস্যুতে সেই আন্দোলন অতীতে কমই দেখা গেছে। সিলেট-২ আসনে টানা তিনবার নির্বাচন করে ইলিয়াস আলী দুবার বিজয়ী হন।

জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে বলে বক্তৃতায় অভিযোগ করেন তাহসিনা রুশদীর। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সংস্কার করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন উপহারের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।’

তাহসিনা রুশদীর আরও বলেন, ‘কেউ বলছেন আগে স্থানীয় নির্বাচন। আবার ছাত্ররা নতুন দল করে বলছেন হাসিনার বিচার হওয়ার পর নির্বাচন হবে। বিচার একটি আইনি প্রক্রিয়া, তার গতিতেই চলবে। বিচার শেষ হতে যদি সাত থেকে আট বছর লেগে যায়, তাতে কি মানুষ অপেক্ষা করবে? আমরা চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার প্রয়োজন, তা করে দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবেন।’

ইফতার মাহফিল–পূর্ব সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মতিন। উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম ও যুবদল নেতা আরিফ মিয়া কর্মসূচি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌছ আলী, সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, জেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ময়নুল হক, দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমাদ উদ্দিন খান ও জেলা যুবদলের সদস্য ইমাম উদ্দিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেরোবিতে পুলিশের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি
  • কলাপাড়ায় কোস্টগার্ড সদস্যকে মারধরের ঘটনায় বিএনপির ৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা
  • ফ্যাসিবাদের দোসররা বিএনপিতে ঢুকে বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে: শামা ওবায়েদ
  • সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতা বাবুকে নিয়ে ষড়যন্ত্র, ক্ষোভ
  • আমাকে নিয়ে বলিউডে ষড়যন্ত্র হয়েছে: গোবিন্দ
  • স্বামীর গুমের তদন্তে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান দেখছেন না, অভিযোগ ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর