বাবুল হোসেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চর-আজিমপুরের কৃষক। চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে গাজরের চাষ করেছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। বিক্রি করেছেন সাত লাখ টাকায়। প্রতি বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে তাঁর লাভ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। এ উপজেলায় আবাদ হওয়া গাজরের সুনাম দেশজুড়ে। যে কারণে বাবুলের মতো অন্য চাষিরাও প্রতি মৌসুমে বিপুল অঙ্কের টাকা মুনাফা করছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, সিংগাইরে চলতি মৌসুমে গাজর চাষ হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত গাজর বিক্রি হবে অন্তত ৫০ কোটি টাকার। তাদের দাবি, উপজেলায় উৎপাদিত গাজর দিয়ে দেশের চাহিদার ৪০ শতাংশই মেটানো যায়। এমনকি বেলে দোঁআশ মাটিতে উৎপন্ন এ সবজির কদর রয়েছে প্রবাসেও।
সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের ভাষ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সিংগাইরের জয়মন্টপ এলাকায় শুরু হয়েছিল গাজর চাষ। লাভজনক ফসল হওয়ায় দিন দিন আবাদি জমি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে জয়মন্টপ ইউনিয়নের দুর্গাপুর, চর দুর্গাপুর, ভাকুম, চর ভাকুম, পূর্ব ভাকুম, পশ্চিম ভাকুম গ্রামসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে গাজরের চাষ। এসব গ্রামের পরিচিতি এখন গাজরের গ্রাম হিসেবেই।
এসব এলাকার গাজরের সুনাম দেশের নানা প্রান্তে। নোয়াখালী থেকে আসা সিদ্দিক মিয়া বলেন, ২৫ বছর ধরে তিনি গাজরের ব্যবসা করছেন। আগের ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে গাজর কিনে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে বিক্রি করতেন। ১০ বছর ধরে তিনি সরাসরি সিংগাইরে চলে আসেন। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে গাজর কিনে নেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরি দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে সিদ্দিক মিয়া বলেন, এতে লাভের পরিমাণ কমছে। অনেকে কারওয়ান বাজার থেকে বিদেশে রপ্তানি করেন। তাদের লাভের পরিমাণ অনেক বেশি।
ভাগ্যবদলের গল্প
চরদুর্গাপুরের কৃষক রহিম মিয়া গাজর চাষ করছেন দুই যুগ ধরে। নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিও ভাড়ায় নেন। এক সময় তাঁর সংসারে অভাব থাকলেও এখন দিন ঘুরেছে। চলতি মৌসুমেই তিনি ১ একর ৮০০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন গাজরের। প্রতি বিঘায় (৩০ শতাংশ) তাঁর খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে গাজর মেলে ২৫০-৩০০ মণের মতো। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি বিঘার ফলন বিক্রি করেন ৬০-৮০ হাজার টাকা।
রহিমের ভাষ্য, এলাকার অনেক কৃষকই তাঁর মতো গাজর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই সবজি চাষে সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তাঁর চোখে এর মধ্যে অন্যতম হলো– বীজ বিপণনকারী সিন্ডিকেট। প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই এই সিন্ডিকেট বীজের দাম বাড়িয়ে দেয়। গত বছর কেজিপ্রতি বীজ কিনেছেন ১৫ হাজার ৮০০ টাকায়, এবার কিনতে হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ টাকায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গাজর পরিপক্ব হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এক মণ গাজর মাঠ থেকে বাজারজাত করতে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হয় ১৪০ টাকা। হিমাগারে রাখলে ৮০ কেজি ওজনের এক বস্তা গাজরের জন্য গুনতে হয় এক হাজার টাকা। অপরদিকে চীন থেকেও গাজর আমদানি করেন অনেকে। আমদানি বন্ধ হলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতেন।
ভাকুম এলাকার কৃষক জয়নাল হোসেন বলেন, তারা আগে গাজর নিজেরাই বাজারজাত করতেন। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে কয়েক বছর ধরে ক্ষেতেই ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। চলতি বছর তিনি সাত বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করেছেন। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো। গাজর পরিপক্ব হওয়ার আগেই ক্ষেত ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
চাষ ও পরিষ্কার পদ্ধতি
সিংগাইরের বেলে দোঁআশ মাটিতে গাজর চাষ ভালো হয়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে বীজ বপন করতে হয়। ৯০ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হতে শুরু করে গাজর। ১২০ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে না তুললে গাজর ফেটে নষ্ট হয়ে যায় বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।
মহিবুল্লা অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে ক্ষেত থেকে তোলা গাজর পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, আগে একটি খোলা তৈরি করে কয়েকজন পা দিয়ে ঘষে ঘষে গাজর পরিষ্কার করতেন। চলতি বছর মেশিন দিয়ে গাজর পরিষ্কার করা হচ্ছে। পা দিয়ে যেখানে ৮০ কেজির ১২০ বস্তা গাজর পরিষ্কার করা যেত, একই পরিমাণ শ্রমিক মেশিনের সহায়তায় ৮০ কেজির ৩০০-৪০০ বস্তা পরিষ্কার করা যায়।
সারা বছর অন্য কাজ করেন কৃষি শ্রমিক জমির উদ্দিন। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তাঁর ব্যস্ততা গাজর ঘিরে। জমি থেকে গাজর তোলা ও পরিষ্কারের কাজ করেন। তাঁর দলে আছেন ১০ জন। ৮০ কেজির এক বস্তা গাজর ধুয়ে পরিষ্কার করে বস্তাবন্দি করা পর্যন্ত তাদের মজুরি ১২০ টাকা। দিনে গড়ে ১০০-১১০ বস্তার কাজ করতে পারেন তারা। আয় রোজগার বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ভালো।
সিংগাইরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, উপজেলায় গাজর আবাদের অধিকাংশ জমিই জয়মন্টপ ইউনিয়নে। প্রতিটি জমির মালিক শীতকালে গাজর চাষ করেন; এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখেন না। যাদের জমি নেই, তারা অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন। এতে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। বিক্রি নিয়ে কৃষকদের চিন্তাও করতে হয় না। পাইকারেরা সরাসরি মাঠ থেকে কিনে নেন। কোনো কোনো কৃষক জমি থেকে না তুলেই বিক্রি করে দেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র চ ষ কর উপজ ল য় উপজ ল র ৮০ ক জ কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকায় ছিলো ছাত্রদল : আজাদ
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) নজরুল ইসলাম আজাদ বলেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন এরা কারা, এখানে কি ছাত্রদল ছিল না? সেই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকায় ছিলো ছাত্রদল। কারণ ছাত্রদল হল বিএনপির ভ্যানগার্ড।
ছাত্রদল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন। আর আপনারা জানেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা সাতগ্রাম ইউনিয়নের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ৩৯নং সাতগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময়ে নজরুল ইসলাম আজাদ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
তিনি আরও বলেন, আপনি যাবেন এই ১৭টি বছরে আমাদের গণতান্ত্রিক মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রূপকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বেই বিগত এই ১৭টি বছর এদেশে আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে।
আর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন হল তারই একটি পার্ট। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা রেজাল্টটি আমাদের ঘরে আনতে পেরেছি। কিন্তু আন্দোলনটি কিন্তু ১৭ বছর ধরেই চলছে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আজাদ বলেন, আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ছাত্রদেরকে অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে জানতে হবে। দেশের সঠিক ইতিহাসকে জানতে হবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা কিন্তু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঠিক ইতিহাসটিকে মুছে দিতে চেয়েছিল। তারা কি পেরেছে, পারেনি।
কারণ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও জিয়াউর পরিবার মানুষের মনে প্রানে রয়েছে। যতই চেষ্টা করেছিলে কিন্তু তা মুছে ফেলতে পারেনি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরী হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। আর খুনি শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। নতুন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক তারেক রহমান।
সাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান আব্দুল, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতিন, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব খোরশেদ আলম ভুইয়া, আড়াইহাজার উপজেলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মমতাজ পারভেজ, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আকরাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ রহমান আতাউর মেম্বার, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাদেকুর রহমান সাদেকসহ সাতগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।