ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সূচিতে (ক্যালেন্ডার) ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে এখন থেকে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেখতে হবে। গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘ডাকসু সংলাপ: সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে শিক্ষক, ডাকসুর সাবেক নেতা ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের আলোচনায় এ প্রস্তাব এসেছে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস) ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) যৌথভাবে এ গোলটেবিলের আয়োজন করে।

এবারের ডাকসু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডাকসুতে যারাই জয়ী হবে, দেশের মানুষ ভাববে, আগামী নির্বাচনে তারা বিজয়ী হবে। মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক ভিপি, ডাকসু

আলোচনায় ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এবারের ডাকসু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডাকসুতে যারাই জয়ী হবে, দেশের মানুষ ভাববে, আগামী নির্বাচনে তারা বিজয়ী হবে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না বলেন, এত বড় অভ্যুত্থান একটা চোরাবালির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, অথচ কেউ কিছু করতে পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি বাঁচানো যায়, তাহলেই বাংলাদেশকে বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতিচর্চার প্রকৃতি ও ধরন বিষয়ে গঠিত কমিটির সদস্য অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ছাত্র সংসদকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডাকসুকে একাডেমিক পার্ট (অংশ) এবং বছরব্যাপী কাজের অংশ হিসেবে বিষয়টি দেখতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতে যা-ই হোক, এর প্রভাব যেন ডাকসুর ওপর না পড়ে। ডাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারভুক্ত করতে হবে, যেন প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট তারিখে এই নির্বাচন আয়োজন করা যায়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরও স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে হবে।

ডাকসুর সংস্কার প্রসঙ্গে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, একবার সংস্কার করে রেখে পরে আর সংস্কার করা লাগবে না, বিষয়টি এমন নয়; বরং প্রতি পাঁচ বছর পরপরই এটা পর্যালোচনা করতে হবে। এটিকে সব সময় যুগোপযোগী রাখতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরি করে। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া দরকার।

ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন বা পরিমার্জন করার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ছাত্রনেতারা যা বললেন

আলোচনায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা সবাই দ্রুত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দাবি করেন। তবে কেউ কেউ নির্বাচনের আগে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান বলেন, তাঁরা একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ চান। সে জন্য ফৌজদারি অপরাধে জড়িত ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন) নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা কেউ জানে না।

ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, ‘অনেকে দাবি করেন, ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচন দেরিতে চায়। এটি সত্য নয়। আমরা ডাকসু গঠনতন্ত্রের যৌক্তিক সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চাই।’

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলোর সংস্কার প্রস্তাবের জন্য নির্বাচন দিতে দেরি হচ্ছে, এমনটি বলার সুযোগ নেই। এতটুকু সংস্কারে এত সময়ক্ষেপণ হওয়ার কথা নয়।

ডাকসু নির্বাচন আয়োজনটাই ছাত্ররাজনীতির জন্য সবচেয়ে বড় সংস্কার বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী। তিনি দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দাবি করেন।

১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানান ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘এত ফর্মালিটিজের (আনুষ্ঠানিকতা) দরকার নেই। ডাকসুর মৌলিক সংস্কারটুকু করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হোক।’

আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।

গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক ছিলেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি ডিরেক্টর আরাফাত আলী সিদ্দিকী। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ, ডিইউডিএসের সভাপতি অর্পিতা গোলদারসহ শিক্ষার্থীদের অনেকে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতা রফিকুল হত্যাকাণ্ডে দলের তিন নেতাকে বহিষ্কার

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম (মল্লিক) খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দলের তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলীর যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বহিষ্কৃত তিন নেতা হলেন তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন (টোটন) ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক।

দর্শনা থানা বিএনপির প্যাডে লেখা বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, ‘আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা গেছে, আপনি দলীয় গঠনতন্ত্র ও আদর্শের পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়েছে এবং দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনতন্ত্রের আলোকে এবং দলের স্বার্থ রক্ষার্থে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে দলীয় পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হলো।’

আরও পড়ুনচুয়াডাঙ্গায় টিসিবির পণ্য নিয়ে বিরোধে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১০৮ মার্চ ২০২৫

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, তিতুদহে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খুনের পরিপ্রেক্ষিতে এই তিন নেতার নাম প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তৃণমূলের নেতাদের সম্মতিক্রমে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও যাঁদের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাঁদের বিষয়েও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

রফিকুল ইসলাম মল্লিককে ৮ মার্চ বেলা ১১টায় প্রকাশ্য কুপিয়ে খুন করা হয়। টিসিবি ও ভিজিএফের কার্ড নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে এ খুনের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুনচুয়াডাঙ্গায় রফিকুলকে হত্যা করতে গোপন বৈঠক করেন বিএনপির দুই নেতা১৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতা রফিকুল হত্যাকাণ্ডে দলের তিন নেতাকে বহিষ্কার