শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হোক ডাকসু
Published: 9th, February 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সূচিতে (ক্যালেন্ডার) ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে এখন থেকে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেখতে হবে। গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘ডাকসু সংলাপ: সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে শিক্ষক, ডাকসুর সাবেক নেতা ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের আলোচনায় এ প্রস্তাব এসেছে।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস) ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) যৌথভাবে এ গোলটেবিলের আয়োজন করে।
এবারের ডাকসু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডাকসুতে যারাই জয়ী হবে, দেশের মানুষ ভাববে, আগামী নির্বাচনে তারা বিজয়ী হবে। মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক ভিপি, ডাকসুআলোচনায় ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এবারের ডাকসু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডাকসুতে যারাই জয়ী হবে, দেশের মানুষ ভাববে, আগামী নির্বাচনে তারা বিজয়ী হবে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না বলেন, এত বড় অভ্যুত্থান একটা চোরাবালির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, অথচ কেউ কিছু করতে পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি বাঁচানো যায়, তাহলেই বাংলাদেশকে বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতিচর্চার প্রকৃতি ও ধরন বিষয়ে গঠিত কমিটির সদস্য অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ছাত্র সংসদকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডাকসুকে একাডেমিক পার্ট (অংশ) এবং বছরব্যাপী কাজের অংশ হিসেবে বিষয়টি দেখতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতে যা-ই হোক, এর প্রভাব যেন ডাকসুর ওপর না পড়ে। ডাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারভুক্ত করতে হবে, যেন প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট তারিখে এই নির্বাচন আয়োজন করা যায়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরও স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে হবে।
ডাকসুর সংস্কার প্রসঙ্গে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, একবার সংস্কার করে রেখে পরে আর সংস্কার করা লাগবে না, বিষয়টি এমন নয়; বরং প্রতি পাঁচ বছর পরপরই এটা পর্যালোচনা করতে হবে। এটিকে সব সময় যুগোপযোগী রাখতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরি করে। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া দরকার।
ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন বা পরিমার্জন করার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছাত্রনেতারা যা বললেনআলোচনায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা সবাই দ্রুত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দাবি করেন। তবে কেউ কেউ নির্বাচনের আগে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান বলেন, তাঁরা একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ চান। সে জন্য ফৌজদারি অপরাধে জড়িত ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন) নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা কেউ জানে না।
ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, ‘অনেকে দাবি করেন, ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচন দেরিতে চায়। এটি সত্য নয়। আমরা ডাকসু গঠনতন্ত্রের যৌক্তিক সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চাই।’
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলোর সংস্কার প্রস্তাবের জন্য নির্বাচন দিতে দেরি হচ্ছে, এমনটি বলার সুযোগ নেই। এতটুকু সংস্কারে এত সময়ক্ষেপণ হওয়ার কথা নয়।
ডাকসু নির্বাচন আয়োজনটাই ছাত্ররাজনীতির জন্য সবচেয়ে বড় সংস্কার বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী। তিনি দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দাবি করেন।
১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানান ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘এত ফর্মালিটিজের (আনুষ্ঠানিকতা) দরকার নেই। ডাকসুর মৌলিক সংস্কারটুকু করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হোক।’
আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক ছিলেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি ডিরেক্টর আরাফাত আলী সিদ্দিকী। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ, ডিইউডিএসের সভাপতি অর্পিতা গোলদারসহ শিক্ষার্থীদের অনেকে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উদীচীর সম্মেলনে হট্টগোল, দুই কমিটি ঘোষণা
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে গোলযোগ হয়েছে। আলাদা করে দুটি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। উভয় পক্ষে অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে এক পক্ষে জামশেদ আনোয়ার তপন এবং আরেক পক্ষে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামশেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। শনিবার শিশু একাডেমি মিলনায়তনে তিন দিনের সম্মেলনের শেষ দিনে কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ ভোটে তারা নির্বাচিত হন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা তো লড়ছি সমতার মন্ত্রে, থামব না কখনো শত ষড়যন্ত্রে’ স্লোগান ধারণ করে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংগঠনটির ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। এর পরদিন থেকে শিশু একাডেমি মিলনায়তনে চলে কাউন্সিল অধিবেশন। সারা দেশ থেকে সাড়ে পাঁচ শর বেশি প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নেন। শনিবার ছিল হাবিবুল আলমের সভাপতিত্বে কাউন্সিলের শেষ দিন। কো-অপশনের জন্য চারটি সদস্য পদ শূন্য রেখে কাউন্সিলের বিষয় নির্বাচনী কমিটি ৮৭ জনের নাম ঘোষণা করলে প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে উদীচীর ৯১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদিত হয়।
জামশেদ আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ জেলার প্রতিনিধিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধির সমর্থনে তাঁদের কমিটি করা হয়েছে।
অন্যদিকে কংকন নাগ স্বাক্ষরিত অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মেলন শেষে অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও অমিত রঞ্জন দেকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্মেলনে সভাপতি হাবিবুল আলম পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক ও উদীচীর গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে নতুন কমিটি নির্বাচিত বলে ঘোষণা দেন। তাঁরা সম্মেলনে গোলযোগ সৃষ্টি করে সম্মেলনকেন্দ্র ত্যাগ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম পরে ঘোষণা করা হবে। কংকন নাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানান, তিনি সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে আছেন। তাঁর পদ পরে নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুসারেই তাঁরা কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেছেন।