Samakal:
2025-04-14@05:08:58 GMT

প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ কাম্য

Published: 9th, February 2025 GMT

প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ কাম্য

আলু লইয়া কৃষক এইবারও দুর্দশায় নিপতিত হইল। রবিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন বলিতেছে, এক কেজি আলুর উৎপাদন ব্যয় ১৪ হইতে ১৬ টাকা হইলেও কৃষককে উহা বিক্রয় করিতে হইতেছে মাত্র ১০-১২ টাকায়। ফলে প্রতি কেজি আলুতে কৃষককে লোকসান গুনিতে হইতেছে ৫ টাকা অবধি। শুধু উহাই নহে, লোকসান হইতে বাঁচিতে বর্তমানে বিভিন্ন এলাকার কৃষকের হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও নূতন সংকট সৃষ্টি হইয়াছে। প্রথমত, দেশে চলতি বৎসর আলু উৎপাদন ১ কোটি ২০ লক্ষ টন হইবে বলিয়া ধারণা করা হইতেছে। কিন্তু বিদ্যমান হিমাগারসমূহের মোট ধারণক্ষমতা মাত্র ৪৫ লক্ষ টন। সেই হিসাবে বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারের বাহিরে থাকিবে। দ্বিতীয়ত, গত বৎসর অপেক্ষা এইবার কেজিতে ১ টাকা বৃদ্ধি করিয়া হিমাগার ভাড়া ৮ টাকা করা হইয়াছে, যাহা বহন করা বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের পক্ষে কঠিন। উপরন্তু, পূর্বে এক বস্তায় ৭০-৮০ কেজি আলু রাখা গেলেও এইবার ৫০ কেজির অধিক রাখা যাইবে না বলিয়া হিমাগার মালিক সমিতি জানাইয়া দিয়াছে। এইদিক হইতেও আলু সংরক্ষণে কৃষকের ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাইবে। মোদ্দা কথা, আলু লইয়া কৃষকদের উভয় সংকটে পড়িতে হইতেছে। হিমাগারে না রাখিতে পাইলে উহা একেবারে জলমূল্যে বিক্রয় করিতে হইবে; আর হিমাগারে রাখিলেও উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যয় মিলাইয়া প্রতি কেজিতে কৃষকের ব্যয় এতই বৃদ্ধি পাইতে পারে, যাহা উসুল করা ভীষণ ত্রুটিযুক্ত বিদ্যমান বিপণন ব্যবস্থায় অসম্ভব হইতে পারে।

দেশে বাৎসরিক আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লক্ষ টন। সেই হিসাবে এইবার আলুর বাম্পার ফলন হইয়াছে, বলা যায়। দেশের প্রধান সবজির বাম্পার ফলন নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ। কিন্তু পরিস্থিতি বলিতেছে, আলুর এই বাম্পার ফলন কৃষকের জন্য তো বটেই, ভোক্তাদের জন্যও এক দুঃস্বপ্ন হইতে চলিয়াছে। এই কথা বলিবার কারণ, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একদিকে কৃষককে সস্তা দরে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফল বিক্রয় করিয়া দিতে হইবে, অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগীরা সমুদয় আলু ক্রয় করিয়া মৌসুম অন্তে বাজারে তাহাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করিতে পারে। ফলে বর্তমানে সাময়িক সময়ের জন্য ভোক্তারা স্বল্প দরে আলু ক্রয় করিতে পারিলেও মৌসুম অন্তে অতি উচ্চমূল্যে তাহাদের অপরিহার্য এই সবজিটি ক্রয় করিতে হইবে, যেই পরিস্থিতি সাম্প্রতিক অতীতেও দেখা গিয়াছে।   যাহা অধিকতর আশঙ্কার, অমানুষিক পরিশ্রমের সহিত রীতিমতো ধারকর্জ করিয়া এহেন বাম্পার ফলনের পর কৃষকদের যদি লোকসান গুনিতে হয়, তাহা হইলে একসময়ে হতাশ হইয়া কৃষক আলু চাষই বন্ধ করিয়া দিতে পারে, যাহা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করিবে।

বাম্পার ফলনের কারণে আলুচাষির দুর্দশা এই বৎসরই নূতন নহে। আলু, তৎসহিত ধান এবং অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও প্রায়শ সমপরিস্থিতি দৃশ্যমান। কিন্তু দুঃখজনক, অতীতের কোনো সরকার বিষয়টি লইয়া গভীর কোনো ভাবনা ভাবে নাই। বিশেষজ্ঞরা বহু বৎসর যাবৎ উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্ব দিলেও খুব একটা পাত্তা পায় নাই। বিশেষত রপ্তানিযোগ্য আলু উৎপাদন ও বিপণনের পথে যেই সকল বাধা ইতোমধ্যে চিহ্নিত, সেইগুলি দূরীকরণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় নাই। তবে ইচ্ছা করিলে সরকার আলু সংরক্ষণ প্রশ্নে কৃষকের পার্শ্বে সহজেই দাঁড়াইতে পারে বলিয়া আমরা মনে করি। এই লক্ষ্যে সরকার বিশেষত প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণ ব্যয় লইয়া হিমাগার মালিকদের সমিতির সহিত আলোচনায় বসিতে পারে। প্রয়োজনে গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল, বর্ধিত ব্যাংক ঋণের সুদ, বীমা ব্যয় ইত্যাদি বিষয়ে তাহাদের উদ্বেগ হ্রাসে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে। জাতীয় স্বার্থেই দ্রুত এই সকল পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ম প র ফলন পর স থ ত র জন য সরক র হইত ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বৎসরের আবর্জনা দূরীভূত হউক

আজি হইতে নূতন বঙ্গাব্দ ১৪৩২-এর শুভ সূচনা হইল। একই সময়ে চলিতেছে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ দেশের পার্বত্য জেলাগুলিতে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বৈসাবি তথা বৈসু, সাংগ্রাই ও বিজু উৎসব। বাংলা বর্ষকে বিদায় জ্ঞাপনের এই উৎসবটি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হইয়াছে শনিবার। আজিকে উহা সমাপ্ত হইবে। বাঙালিদের বর্ষবরণ এবং পাহাড়িদের বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে আমরা সমকালের সকল গ্রাহক, পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা জানাই।

বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে আদিতে হালখাতারূপী ফসলের খাজনা আদায় প্রাধান্যে থাকিলেও সময়ের পরিক্রমায় তাহা হইয়া উঠে ব্যবসায়ীদের বকেয়া আদায়ের হালখাতা উৎসব, যাহা গ্রাম-গঞ্জ-শহর সর্বত্র এখনও দৃশ্যমান। পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে বৈশাখী মেলা বসিবার রীতিও চালু আছে সমানতালে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবিধ অনুষ্ঠানও বাঙালির প্রাণের এই উৎসবের অন্যতম অংশ। আমাদের বিশ্বাস, এই সকল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়া বৈশাখ বরণে নূতন প্রাণের উচ্ছ্বাস আজিকেও দৃশ্যমান। বৈসাবিতেও আবালবৃদ্ধবনিতা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করিয়া নদীতে ফুল ভাসাইয়া বিগত বৎসরের গ্লানি দূর করিয়া নূতন বৎসরকে আবাহন করেন। নূতন পোশাক পরিধান দুই উৎসবেরই রীতি। প্রতিবেশীগৃহে পদার্পণ, তৎসহিত ঐতিহ্যবাহী খাদ্যদ্রব্য দিয়া অতিথি আপ্যায়নও সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ফলে পহেলা বৈশাখ ও বৈসাবি কেবল সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব নহে; ইহাদের সহিত অর্থনীতিরও নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। যদি বলা হয়, বর্ষবরণকে কেন্দ্র করিয়া শহর তো বটেই, পল্লী অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বিচিত্র-বহুমুখী ধারায় প্রবাহিত, তাহা হইলে অতিকথন হইবে না। নূতন পোশাকের সহিত বসতঘর ও কর্মক্ষেত্রের নববিন্যাসের আয়োজন এই সময়ে সমতল এবং পাহাড়েও পরিলক্ষিত হয়। এইবার পহেলা বৈশাখ আসিয়াছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের পর। তজ্জন্য এইবার হয়তো পহেলা বৈশাখের বিকিকিনি পৃথকভাবে দৃশ্যমান নহে। তবে বর্ষবরণে বাহারি পোশাকের প্রদর্শনী কম হইবে না– এই কথা হলফ করিয়া বলা যায়।

বরাবরের ন্যায় বাংলা বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান এইবারও হইতেছে। বৈশাখের প্রথম সূর্যোদয়কালের এই আয়োজন সূচিত হইয়াছিল ১৯৬৭ সালে, যাহা অদ্যাবধি চলমান। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদারকবলিত বিরূপ পরিস্থিতির কারণে তাহা অনুষ্ঠিত না হইবার ঘটনা বাদ দিলে বলা যায়, এই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় কস্মিনকালেও ছেদ পড়ে নাই। তৎসহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রাও চলিতেছে; যদিও দুঃখজনক বিতর্ক তুলিয়া একেবারে ঠুনকো কারণে উহার নাম বদলাইয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিবর্তে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে। রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলা বর্ষবরণের সনাতন রীতির অংশ নহে, সত্য। তবে যেই প্রেক্ষাপটে এই দুই অনুষ্ঠান বিশেষত শহুরে বর্ষবরণ উৎসবের সহিত যুক্ত হইয়াছে, উহাও স্মরণে রাখিতে হইবে। সর্বোপরি, যে কোনো জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিই এক প্রবহমান ধারা। কালে কালে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীরই প্রয়োজনে উহার রূপ পাল্টায়। এই ক্ষেত্রে শাসক বা কোনো কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চলে না। সমাজে তাহা কীভাবে গৃহীত হইয়াছে, উহাই প্রধান বিবেচ্য। সেই হিসাবে রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান ও মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্তমানে বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের অপরিহার্য অংশ।
প্রতিটি পহেলা বৈশাখেই আমাদের সংকল্প থাকে, সমৃদ্ধ-উন্নত-গর্বিত বাংলাদেশ গঠনের পথ নির্বিঘ্নকরণ এবং সমাজের ঐক্যসূত্র ধরিয়া রাখা। তাই আমাদের প্রত্যাশা, এইবারের পহেলা বৈশাখও আমাদের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতির চেতনা জাগ্রত রাখিবে; ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র, জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের অন্তরে নূতন স্পন্দন সৃষ্টি করিবে। সকল ধর্মের মানুষের মিলনের উৎসব বাংলা নববর্ষ। এইবারও তাহা অক্ষুণ্ন থাকিবে। ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িকতার ভ্রুকুটি উপেক্ষা করিয়া সকলে উৎসবের আনন্দে মাতিবে। নূতন বৎসরের নূতন সূর্যোদয় বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজের জন্যও নূতন সম্ভাবনা লইয়া আসিবে। সকল অন্ধকার পশ্চাতে ফেলিয়া নূতন বৎসরের আলো সর্বত্র ব্যাপ্ত হইবে। স্বাগত ১৪৩২– এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৎসরের আবর্জনা দূরীভূত হউক
  • শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করুন