স্বাস্থ্য গবেষণায় ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় কমাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন
Published: 9th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা গবেষণায় কয়েকশ কোটি ডলারের ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ অর্থ দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে দেওয়া হয়, যা নতুন নতুন ওষুধ বা প্রতিষেধক উৎপাদন ত্বরান্নিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন অব হেলথ (এনআইএইচ) বলছে, তারা পরোক্ষ স্বাস্থ্য গবেষণার ব্যয় কমাতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে বছরে ৪০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিনিরা জীবন দিয়ে এ ব্যয় সংকোচনের মূল্য দেবেন।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মানবিক সহায়তা দেওয়া ইউএসএআইডির অনুদান স্থগিতের পর এ ধরনের একটি পদক্ষেপ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত ওষুধ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
রোববার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রদত্ত অনুদানের কেবল ১৫ শতাংশ দেওয়া হবে ভবন, সরঞ্জাম ও কর্মীদের সহায়তা হিসেবে। কার্যত এটি একটি বড় ধরনের ব্যয় সংকোচন। এক বিবৃতিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার এনআইএইচ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য গবেষণা খাত বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত। এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে, অধিকাংশ তহবিল এখন সরাসরি গবেষকদের কাছে পাঠানো হবে; এটা আগের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মাধ্যমে দেওয়া হবে না। এনআইএইচের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য অনুদানের ৩৫ বিলিয়নের ৯ বিলিয়নই দেওয়া হয় পরোক্ষ অনুদান।
এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। তাঁর প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন বিভাগের প্রধান ধনকুবের ইলন মাস্ক পদক্ষেপের প্রশংসা করে সামাজিক মাধ্যম এক্সে ‘দারুণ কাজ’ বলে বর্ণনা করেছেন। হোয়াইট হাউস থেকেও দাবি করা হয়, এ পদক্ষেপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না চিকিৎসা গবেষণা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন উল্টো কথা। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে অর্থ সহায়তা বন্ধ করায় গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য গবেষণাকে বাধাগ্রস্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন গভর্নমেন্ট রিলেশন্সের সভাপতি ম্যাট ওয়েনস বলেন, এটা জীবন রক্ষাকারী গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রক্রিয়াকে নিশ্চিতভাবে পঙ্গু করে দেবে। বিশ্বমানের গবেষণা চালানোর জন্য এ খরচ অপরিহার্য। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীরা এ আত্মঘাতী পদক্ষেপে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। মার্কিনিরা এ ক্ষতি মোকাবিলার আগেই তারা এনআইএইচকে এ নীতি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান।
ট্রাম্প প্রশাসনের এ নীতির সমালোচনা করেছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরাও। ডেমোক্র্যাট সিনেটর প্যাটি মুরি বলেন, তহবিল সংকুচিত করার প্রভাব পড়বে জীবন রক্ষার গবেষণায়, যার জন্য অনেক রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ শিশুরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবে না। হঠাৎ করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বন্ধ হয়ে যাবে, যা প্রভাব হবে ভয়ংকর। এ ধরনের পরোক্ষ খরচ সম্পর্কে ইলন মাস্কের কোনো ধারণা নেই। এর মূল্য মার্কিনিরা তাদের জীবন দিয়ে দেবেন।’
শিগগিরই এ ব্যায় সংকোচনমূলক পদক্ষেপ কার্যকর হবে। বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব গবেষণা কার্যক্রম চলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে তা আটকে যেতে পারে।
জো বাইডেনের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রধান ছিলেন কিমরিন রাতমেল। তিনি বলেন, হঠাৎ করে এ ধরনের তহবিল বন্ধ করায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির এ গবেষক বলেন, অনেক মানুষ চাকরি হারাতে যাচ্ছেন; বন্ধ হয়ে যাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এতে ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগের গবেষণার গতি থমকে যাবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনার দোসররা ফ্যাসিবাদের মুখায়ব পুড়িয়ে দিয়েছে: ফেসবুকে সংস্কৃতি উপদেষ্টা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উপলক্ষে বানানো দুটি মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ‘হাসিনার দোসররা ভোররাতে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে—সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি টিম হোক—তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আসতে হবে, দ্রুত।’
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার একটু আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আজ ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। আর ‘শান্তির পায়রা’ মোটিভটি আংশিক পুড়ে গেছে।
চারুকলা অনুষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফটি কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, অনেকগুলো মোটিফের মধ্যে দুটি মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক। পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত করছে।
এই ঘটনা নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এই শোভাযাত্রা থামানোর চেষ্টায় আওয়ামী লীগের হয়ে যারা কাজ করছে, আমরা শুধু তাদের আইনের আওতায় আনব, তা না, আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এবারের শোভাযাত্রা যেন আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়।’
আরও পড়ুনশুধু দুটি মোটিফে আগুন লাগা রহস্যজনক বলছে ফায়ার সার্ভিস, তদন্তে পুলিশ২ ঘণ্টা আগেফারুকী আরও লিখেছেন, ‘কালকে রাতের ঘটনার পর হাসিনার দোসররা জানিয়ে দিয়ে গেল, বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে উৎসব করুক, তারা এটা চায় না। আমরা এখন আরও বেশি ডিটারমাইনড এবং আরও বেশি সংখ্যায় অংশ নেব।’
এই উপদেষ্টা বলেন, ‘গত কিছুদিন জুলাই আন্দোলনের পক্ষের অনেকেই বলেছিলেন, এবারের শোভাযাত্রা সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভিন্ন রকমের হচ্ছে। এখানে ফ্যাসিবাদের ওই বিকট মুখ না রাখাই ভালো। আমরাও সব রকম মত নিয়েই ভাবছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মত জানার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কালকের ঘটনার পর এই দানবের উপস্থিতি আরও অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল। জুলাই চলমান।’
আরও পড়ুনচারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ৪ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুন‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফ পুড়ে যাওয়ায় চারুকলা অনুষদ যা জানাল২ ঘণ্টা আগে