ভাঙা পড়েছে কৃষক ও শিশুদের ভাস্কর্য, স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ
Published: 9th, February 2025 GMT
তিন রাস্তার মোড়ে একটি ভাস্কর্য, তাতে একজন কৃষক হাতে কাস্তে ও কাঁধে লাঙল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। নাম ‘কৃষাণ চত্বর’। তিন বছর আগে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন্দ পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছিল এটি। এ ছাড়া উপজেলা সদরের প্রবেশমুখের সড়ক ঘেঁষে নির্মিত শিশু পার্কের বাইরে শিশুদের বিনোদনের জন্য ঘোড়া, জেব্রা, হরিণ, জিরাফ, টম অ্যান্ড জেরি ও মিকি মাউস ছিল। একই স্থানে ছিল নাটাই হাতে দুই শিশুর দৌড়ানোর ভাস্কর্য।
চলতি পথে মানুষ সেখানে বিশ্রাম নিতেন, ভাস্কর্য দেখতেন, দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেন।
৭ ফেব্রুয়ারি রাতে এই ভাস্কর্যগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত শুক্রবার রাতে একদল লোক কৃষাণ চত্বরে থাকা কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙার সময় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তাদের কণ্ঠে ‘শাহজালালের তলোয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগানও শোনা যায়।
চালবন্দ পয়েন্টের মোটরসাইকেল মেকানিক মো.
ভাঙার সময় শখানেক মানুষ ছিল বলে জানান আনোয়ার। চালবন্দ গ্রামের রিকশাচালক জাহের মিয়া বললেন, ভাঙার সময় আমাদের খারাপ লেগেছে। এটা তো দলের কিছু নয়।
একই গ্রামের মদন মিয়াও একইভাবে বললেন, এটা ভাঙা ঠিক হয়নি। আমাদের এলাকার মানুষ দেখেনি, তারা রাত ১টা-দেড়টার দিকে ভেঙেছে।
গ্রামের মো. নুরুজ্জামান বলেন, এই চত্বরটা বানানো হয়েছিল কৃষক অধ্যুষিত এলাকায়। এটা দেখলেই বোঝা যেত এটি কৃষিপ্রধান এলাকা। এটা তো কোনো দোষ করেনি। হঠাৎ করে রাতে কিছু মানুষ এসে ভেঙেছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির নেতা রমিজ উদ্দিন বললেন, পেশাজীবীদের উজ্জীবিত করা এবং পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য কিছু স্থাপনা করা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা পর্যটকরা এখানেও কিছু সময় কাটাতেন, ছবি তুলতেন। কৃষকরা এই পথ দিয়ে যেতে উৎসাহিত হতেন, নিজেদের সম্মানিত বোধ করতেন। এগুলোর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সূত্র আছে বলে মনে করছি না আমি। এগুলো ভাঙা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বললেন, কৃষাণ চত্বর ভাঙার সংবাদ দেখে আমার খারাপ লেগেছে। বিশ্বম্ভরপুরের ৯০ ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। কৃষাণ চত্বরের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছিল।
স্থানীয় এক তরুণ বললেন, এর আগে ৭ আগস্ট ভেঙে দেওয়া হয় পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য গড়ে ওঠা স্থাপনা হাওর বিলাসও।
কারা এসব ভেঙেছে, তাদের পরিচয় নিয়ে কেউ মুখ খুলছে না। তবে ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির পাশাপাশি দেশের ৩৫ জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের স্থাপনা, ভাস্কর্য, ম্যুরাল ভাঙা হয়। এ সময় অন্য ধরনের বেশ কিছু ভাস্কর্যও ভাঙার ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমনুদ্দোজা গতকাল বিকেলে সমকালকে বলেন, শিশু পার্কের প্রাণীগুলোর ভাস্কর্য ভাঙা ঠিক হয়নি। কৃষাণ চত্বরের ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ যুক্ত নয়।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বললেন, উপজেলা পরিষদের সভায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। যেগুলো মেরামত সম্ভব, সেগুলো মেরামত করতে কীভাবে অর্থ পাওয়া যায়, তার চেষ্টাও করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ স কর য র ভ স কর য হয় ছ ল বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
৭ বছর পর চুয়েট ছাত্রলীগের ছয় নেতার নামে মামলা
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ২০১৮ সালে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর, চাঁদাবাজি এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের চুয়েট শাখার সাবেক ৬ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সাত বছর পর মামলা দুটি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম ও জামিল আহসান।
রাউজান থানায় ওই মামলায় আসামিরা হলেন– চুয়েটের তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ ইমাম বাকের, সাখাওয়াত হোসেন, অতনু মুখার্জি, নিলয় দে, মেহেদী হাসান ফরহাদ ও মোহাম্মদ ফখরুল হাসান ফাহাদ। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জামিল সমকালকে বলেন, নির্যাতন শেষে বাকের বলেছিল, হাসিনা আরও ১০ বছর ক্ষমতায় থাকবে। অর্থাৎ তারা ভেবে নিয়েছিল ওই নির্যাতনের জন্য তাদের কখনও জবাবদিহি করতে হবে না। এজন্যই মামলাটি করেছি।
মামলায় কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি মাহমুদুল। তিনি বলেন, ওই ঘটনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে আমার জীবনে।