Samakal:
2025-02-10@14:20:55 GMT

হ্যাক!

Published: 9th, February 2025 GMT

হ্যাক!

ইসরায়েলি দাপুটে আর গোপন প্রযুক্তিবিদ্যার কাছে পুরো বিশ্বই যেন নিশানা হয়ে পড়েছে। নতুন করে স্পাইওয়্যার ছড়ানোর অভিযোগে আবারও সামনে আসছে পেগাসাস বিতর্ক। লক্ষ্য এবার জনপ্রিয় সোশ্যাল অ্যাপ। হ্যাঁ, নতুন শঙ্কা ছড়িয়েছে, কোনো রকম লিঙ্ক ছাড়াই ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। আর কাজটি করছে হ্যাকার চক্র। লিখেছেন সাব্বিন হাসান

নিজের স্মার্টফোনে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার প্রয়োজন নেই। শুধু টার্গেট করে হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করা সম্ভব। হ্যাঁ, সত্যিই এমনই ঘটছে। করতে হবে না কোনো কোড স্ক্যান, তাও হ্যাক হবে; হ্যাঁ ঠিকই জেনেছেন। উল্লিখিত দুটি কারণ না ঘটা সত্ত্বেও নিজের ব্যবহৃত ফোন চলে যেতে পারে হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে।

বিশ্বের অনেক দেশেই এমন অত্যাধুনিক হ্যাকিং সফটওয়্যারের খোঁজ মিলেছে। আর এমন বিষয়ে সতর্কবার্তা শুনিয়েছে খোদ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ নিজেই। এই মেসেজ সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে সংস্থাটি।

ইতোমধ্যে ২৪টি দেশের শতাধিক গ্রাহক এমন হ্যাকিং ঘটনার তথ্য-প্রমাণ দিয়েছে বলে অ্যাপ উন্নয়ক সংস্থার কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে।
খবরে প্রকাশ, এমন হ্যাকিং ঘটনার পেছনে দায়ী ইসরায়েলের সংস্থা ‘প্যারাগন’ সল্যুশনের নির্মিত বিশেষায়িত স্পাইওয়্যার। সংবাদমাধ্যম দাবি করে, মূলত সাংবাদিক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের চূড়ান্ত লক্ষ্য করে তাদের ফোনে অবিরাম স্পাইওয়্যার ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকারি কোনো বিশেষ সংস্থার নিয়ন্ত্রণে ও নির্দেশনায় এ স্পাইওয়্যার পরিচালিত হচ্ছে।

নব্য ধারার এমন হ্যাকিং পদ্ধতিকে ‘জিরো ক্লিক হ্যাক’ বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা। স্মার্ট ডিভাইসে কোনো রকম লিঙ্ক বা সংযুক্তি (অ্যাটাচমেন্ট) দৃশ্যমান হলে তাতে ক্লিক করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্পাইওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায়। ওই মুহূর্তেই আক্রান্ত ডিভাইসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে হ্যাকাররা। ঠিক এসব কারণেই কোনো রকম সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন যে পদ্ধতির কথা হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাতে কোনো রকম লিঙ্কে ক্লিকই করেই বিপদে পড়েছেন অনেকে। ক্লিক ছাড়াই এনক্রিপটেড মেসেজ থেকে ডিভাইসের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বসে হ্যাকার চক্র।

নিজস্ব বার্তায় হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছেন এমন সংখ্যা প্রায় শতক ছুঁয়েছে। যদিও অভিযোগের সদুত্তরে এখনও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি অ্যাপ উন্নয়ন বিভাগ। এমনকি কারও পরিচয়ও উপস্থাপন করেনি হোয়াটসঅ্যাপ। প্রথম ঘটনাটি সামনে আসে গত ডিসেম্বরে। তখন থেকেই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন বিভাগের সঙ্গে কাজ করছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হ্যাকিং ঘটনার সূত্র ধরে কীভাবে ইসরায়েলি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে হোয়াটসঅ্যাপ, সে বিষয়ে সরাসরি কিছুই বলেনি ভুক্তভোগী সংস্থা।
রিপোর্টের সূত্র ধরে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের গোপনীয়তার সুরক্ষায় সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ইসরায়েলি ওই সংস্থাকে দাপ্তরিক নিয়মে সতর্ক করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এমন বিষয়ে এখনও সামনাসামনি কথা বলার সময় হয়নি বলে মন্তব্য করেছে কর্তৃপক্ষ।
কয়েক বছর আগে সারাবিশ্বে পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তখনই ইসরায়েলের নাম সামনে আসে। নির্দিষ্ট (টার্গেট) ডিভাইসে অবৈধ নজরদারি করার জন্যই সিস্টেমটির ডেভেলপ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। নতুন করে আবার পুরোনো সমালোচনার মুখে পড়েছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার। এখন দেখার বিষয়, হোয়াটসঅ্যাপ কীভাবে এমন পরিস্থিতি সামলে গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কারণ, অ্যাপটি তুমুল জনপ্রিয়তার পেছনে মূল কারণই হচ্ছে ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ য় টসঅ য প ক স প ইওয় য র ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

এনআইডিতে বয়স ১১৬ বছর, ইনি কি হচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী?

মৌলভীবাজারে সন্ধান মিলেছে ১১৬ বয়সী রুখমিনিয়া পাশী নামে এক নারীর। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তার বয়স এখন ১১৬ বছর ৪ মাস ১ দিন। তবে তার থেকে বেশি বয়স্ক নারীর নাম সিসটার ইনা ক্যানাবারো লুকাস। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলের এই নারীর বয়স ১১৬ বছর ২১০ দিন।  

জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্ষেপে এনআইডি কার্ড হলো বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক নথি, যা বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া যেকোনো মানুষ পাওয়ার অধিকারী। তবে এই পরিচয়পত্রে অনেকসময় বড় ধরনের ভুল ধরা পড়ে। বয়স ও নামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুল পাওয়া যায়। বিশেষ করে অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে যার বয়স ৩০ তাকে ৬০ বছর বয়সী হিসেবে দেখানো হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে মায়ের চেয়ে সন্তানের বয়স বেশি দেখা গেছে জাতীয় পরিচয়পত্রে। স্বজনদের দাবি, রুখমিনিয়ার বয়স জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকই আছে।   

রুখমিনিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকায়। 

রাউবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে রুখমিনিয়া পাশীর পূর্ব পুরুষ ভারতের উত্তর প্রদেশের বিহার থেকে মৌলভীবাজার সদর ইউনিয়নের গিয়াসনগর চা বাগানে আসেন। তারা সেখানে চা শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। রুখমিনিয়ার বাবা হরিদেও সেখানেই থাকতেন। রাজনগর উপজেলার একটি চা বাগানের শ্রমিক ভগবান দাস পাশীর সঙ্গে রুখমিনিয়ার বিয়ে হয়। এরপর তারা রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।

জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায়, রুখমিনিয়ার জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ৯ অক্টোবর ১৯০৮। স্বামীর নাম ভগবান পাশী। মায়ের নাম ধনেশ্বরী পাশী। ভোটার আইডি নম্বর ৫৮১৮০৭৩৪০৩৮৬৩। জাতীয় পরিচয়পত্রের হিসেবে তার বয়স এখন ১১৬ বছর ৪ মাস ১ দিন।

রুখমিনিয়া বাংলা ভাষায় ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। বয়সের ভাড়ে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন। কানেও কম শোনেন। কথা হলে, তিনি নিজস্ব ভাষায় জানান, ব্রিটিশ আমলে চা চাষের জন্য তার বাপ-দাদারা এখানে আসেন। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে তার। বিয়ের পর সোনাতুলা (রাজনগরের সাবেক নাম) চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খবরও শুনেছেন তিনি।

রুখমিনিয়ার ছেলে হেমন্ত পাশীর বয়স এখন ৬২ বছর। তিনি বলেন, ‍“আমার মার অনেক বয়স হয়েছে। তিনি এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। বার্ধক‍্যজনিত কারণে অনেক ভেঙে পড়েছেন। আমরা ঠিকমতো তার সেবা যত্ন করি। আমার মায়ের বয়স ১১৬ বছর এখন।”

রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উমেষ যাদব বলেন, “ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে গিয়ে আমি প্রথমে কর্তন ফরম বের করি তার নাম কাটার জন্য। পরে দেখলাম বেঁচে আছেন তিনি। বয়স্ক এই নারীকে দেখে আমি অবাক হয়েছি। দেখেই অনুমান করা যায় রুখমিনিয়া অতি প্রবীণ একজন মানুষ। গিনেস বুকে তার নাম (রুখমিনিয়া পাশী) পাঠানো উচিত। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি চা বাগান কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসতে পারেন।”

রাজনগর চা বাগানের রাউবাড়ি এলাকার ৭৫ বছর বয়সী কপিল পাশি বলেন, “আমরা ছোট থেকেই রুখমিনিয়াকে বয়স্ক নারী হিসেবে দেখছি। তার বয়স কম হলেও ১১২ বছর হবে। অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ও নাম ভুল থাকে। যাছাই করলে বিষয়টি জানা যাবে।”

একই এলাকার ৭০ বয়সী নারী শ্রীপাতি পাশি বলেন, “ব্রিটিশ আমলে রুখমিনিয়ার বিয়ে হয়েছে। শারীরিক গঠন ভালো থাকায় তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তার অসংখ্য নাতি-নাতনীও আছে।”

টেংরা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাম দুলারী নুনিয়া বলেন, “রুখমিনিয়াকে দেখতে অনেক বয়স্ক মনে হয়। এলাকার সবাই তাকে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হিসেবেই জানেন।”

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, “আমরা তদন্ত করে বিষয়টি দেখব। তার (রুখমিনিয়া) কাছে ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া আর কোনো ডকুমেন্ট (নথি) নেই। কোনো শিক্ষাগত সনদ না থাকায় বিষয়টি যাচাই বাচাই করে দেখতে হবে। যদি তার স্বজনরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে সঠিক বয়স নির্ণয় করেন, তাহলে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানাব।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ