অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার আইএমএফ ঋণের চতুর্থ কিস্তির জন্য মরিয়া নয়। শুধু আইএমএফের চতুর্থ কিস্তিই নয়, যে কোনো ঋণের বিষয়েই একই কথা। আইএমএফের সঙ্গে মার্চের আগে সরকারের আলাপ হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি পিছিয়ে যাচ্ছে কিনা– গতকাল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি ওই উত্তর দেন। এর আগে তিনি বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

আগামী মার্চে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হবে। চতুর্থ কিস্তি ছাড় জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে এবং তা ঠিক কিনা– এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত আইএমএফের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে বর্তমানে দেশের চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাবের ভারসাম্য পরিস্থিতি ভালো। 
জানা গেছে, মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়া এবং কর-রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় বাংলাদেশের চলমান ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের জন্য পর্ষদের বৈঠক গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে আরও এক মাস পিছিয়েছে আইএমএফ। বৈঠক আরও পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক
বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোসহ অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ে বিভাগ আলাদা করার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা তাদের জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। তারা এর বাস্তবায়ন করতে চান। 
বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ দেওয়া হয়েছে কি–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে অগ্রগতি আশা করছে। তবে তারা এও জানেন, সরকারের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মার্টিন রাইজার আরও বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। তিনি বলেন, তারা এটি বোঝেন, নতুন করে করারোপ এবং কর ছাড়ের বিষয়টিতে আইনি অনুমোদনের দরকার হয়।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। অবশ্য নানা সমালোচনার পর প্রায় ১০টি পণ্য বাড়তি শুল্ক-কর কমানো হয়। এখনও বিভিন্ন সংগঠন থেকে সরকারের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। 
অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণের বিভিন্ন শর্তের প্রায় সবগুলো পূরণ করেছে সরকার। নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ে আলাদা বিভাগ হবে। রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর ছাড়ও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী জুনের আগে আরও কিছু শর্ত বাস্তবায়ন হবে। 

বিএসআরএফের সঙ্গে বৈঠক
এদিকে গতকাল বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টর্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ভ্যাট বাড়ানো নিয়ে কথা কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ভ্যাটের ব্যাপারে চাপ আছে। ভ্যাট কমাতে বলা হয়। সব ভ্যাট যদি কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সরকারের আয় আসবে কোথা থেকে। আবার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বলছে– কোনোক্রমেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ কমানো যাবে না। 
আরেক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ আনতে কিছু শর্ত মানতে হবে। বাংলাদেশ শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়নি। ঋণদাতারা ভ্যাট বাড়াতে বলে। আবার ভ্যাট বাড়িয়ে নানা রকম বিপত্তি হয়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সব সময় জনপ্রিয় দাবির ভিত্তিতে করা যায় না।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইএমএফ র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ছেলেসহ সালমান এফ রহমানের নামে দুদকের মামলা

লন্ডনে পাচার ও ব্যাংক ঋণসহ ১০৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান ও তার ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা ১০৯ কোটি টাকার মধ্যে লন্ডনে পাচার করেছেন সা‌ড়ে ৭৬ কোটি টাকা এবং ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার বিষয়ে রাইজিংবিডি ডটকমকে তথ্য দিয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

যুবলীগ নেতার ১৩ বছরের কারাদণ্ড

সাইফুজ্জামানের ১০২ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ, ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দ

আক্তার হোসেন বলেন, আসামিরা পারস্পারিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি লিমিটেডের নামে ঋণ মঞ্জুর করেন। মঞ্জুরিপত্রের এলসি শর্তাবলি ভঙ্গ করে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের নামসর্বস্ব কাওয়েজ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৯৮ লাখ ৮২ হাজার ইউএস ডলারের বা ৭৬ কোটি ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জির (ইউনিট-২) জন্য ড্রইং ও ডিজাইন আনতে এলসি খোলা হয়। ড্রইং-ডিজাইনের বদলে কাগজ নিয়ে এসে ওই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তারা।

এদিকে, এলসির টাকা ফোর্স লোন হিসেবে ক্রিয়েট করে এরইমধ্যে ৮ বছর পার হয়ে গেলেও ব্যাংকের বকেয়া ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা এবং এই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, জানান আক্তার হোসেন। 

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি লিমিটেডের সাবেক এমডি জাকিয়া তাজিন, বেক্সিমকো এলজিপি লিমিটেডের পরিচালক শায়ান ফজলুর রহমান, এসকর্প হোল্ডিংস লিমিটেডের পরিচালক আহমেদ শাহরীয়ার রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এক্সিকিউটিভ দীপংকর বড়ুয়া, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনসী ছরোয়ার জান, দিলীপ কুমার দাস, চন্দন কুমার দাস, এসভিপি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ।

১০ মার্চ সালমান এফ রহমান, তার স্ত্রী সৈয়দা রুবাবা রহমান, ভাই আহমেদ সোহাইল ফসিহুর রহমান, ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং আহমেদ সোহাইলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এই পরিবারের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলাচ চলমান রয়েছে। সালমান এফ রহমান গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে দায়ের করা মামলার আসামি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ