কুমিল্লার তিতাস উপজেলার দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামের যুবক ফয়সাল আহমেদের বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রোববার বেলা দেড়টার দিকে অগ্নিকাণ্ডে টাকা, কুয়েতের পাসপোর্ট, আসবাবসহ তাঁর বসতঘর পুড়ে গেছে।

ফয়সাল তিতাস উপজেলার দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামের হেলেন মিয়ার ছেলে। ফয়সাল বলেন, তাঁকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তাঁর বাবা স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। আগুন তাঁর বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা, কুয়েতের পাসপোর্ট, আসবাবসহ তাঁর বসতঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের হোমনা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে আশপাশের বসতঘরগুলো রক্ষা পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন রোমান বলেন, আশপাশের কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখের পলকে আগুনে ফয়সালের পাঁচ লাখ টাকাসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। পরিবারের হাল ধরার জন্য ছেলেটি বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই প্রস্তুতি আর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

আগুনে একটি পরিবারের বসতঘর পুড়ে যাওয়ার খবর শুনেছেন বলে জানান তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া মমিন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফয়স ল

এছাড়াও পড়ুন:

পোড়া ভিটায় ফিরছেন ক্ষতিগ্রস্তরা, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পাড়ায় (সাজেক ভ্যালি) আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে ৩৮টি ত্রিপুরা ও লুসাই পরিবার। দুই সপ্তাহ ধরে গির্জা, মন্দির ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে দিনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। এখন পোড়া ভিটায় কেউ ঘর তৈরি করে, কেউ আবার তাঁবু টানিয়ে কোনোরকম মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাতেও রয়েছেন তাঁরা।

গতকাল সোমবার রুইলুই পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি পরিবার ঘর তৈরি আর তাঁবু টানানোর কাজ করছে। সরকারি-বেসরকারি যে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন, তা দিয়েই নিজের ভিটেমাটিকে বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন বলে জানান আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

সরেজমিন কথা হয় করুণা ত্রিপুরার সঙ্গে। জানান গতকাল সকাল থেকে পোড়া ভিটায় কাঠ, বেড়া ও টিন দিয়ে ছোট ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু সহায়তা পেয়েছেন। তা দিয়েই ঘর বানানোর চেষ্টা করছেন তিনি। বীর বসু ত্রিপুরা নামে আরেক বাসিন্দাকেও দেখা গেল দোচালা টিনের ঘর তৈরির কাজ করছেন। এরই মধ্যে ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। তবে চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়নি। কেবল সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে একপাশ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। গত রোববার থেকে ঘর নির্মাণের কাজ করছেন বলে জানান বীর বসু। সরেজমিন বেশ কয়েকটি ঘর তৈরির জন্য ভিটেতে কাঠ-বাঁশসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী জড়ো করতে দেখা যায়।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই ভ্যালিতে আগুনে পুড়ে যায় বসতঘর, কটেজ-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁসহ ১০২টি স্থাপনা। বসতঘর পুড়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা পাশের গির্জা, মন্দির ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে অনেকে বসতঘর নির্মাণের কাজ শুরু করলেও পুড়ে যাওয়া ৩৫টি রিসোর্ট-কটেজের কোনোটিরই পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির নেতারা জানান, আগুনে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আগুনের ঘটনার পর খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন, বাঘাইছড়ি সেনা জোন, উপজেলা প্রশাসন এবং বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিত্যপণ্য সহায়তা করা হয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অনিত্য ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, বাসিন্দারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন, দুই সপ্তাহে সেখানে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই তাঁরা পোড়া ভিটেতে ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনটি পরিবার এরই মধ্যে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছে। আরও কয়েকটি পরিবার ঘর নির্মাণের কাজ করছে।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেববর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থান পরিমাপ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বসতঘর নির্মাণ শুরু হলেও রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পোড়া ভিটায় ফিরছেন ক্ষতিগ্রস্তরা, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা