কর অব্যাহতি কমানোর কথা আবার বললেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। করনীতি ও কর প্রশাসন আলাদা করার কথাও জানান তিনি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ কথা বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারকে জানানো হয়েছে।

 সচিবালয়ে আজ রোববার সফররত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারের নেতৃত্বাধীন দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। চার দিনের সফরে গত শনিবার ঢাকায় আসে দলটি।

 মার্টিন রেইজারের নেতৃত্বাধীন দলটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা এম ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে।

 দেশে বছরে প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকার শুল্ক-কর ছাড় দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও শুল্কের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে করছাড় দেওয়া হয়।

 আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকও দীর্ঘদিন ধরে করছাড় প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিয়ে আসছে। উভয় সংস্থা চায়, বিদ্যমান সব ধরনের করছাড় ২০২৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তিন ধাপে প্রত্যাহার করা হোক।

 আজকের বৈঠক নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চলমান অগ্রাধিকারভুক্ত কাজগুলোর প্রায় সবই পূর্ণ করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, আমরা আরও বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করব, কর অব্যাহতিও কমাব। আগামী জুনের আগে নতুন অর্থ আইনও করা হবে।’

গত ডিসেম্বরে এনবিআরের ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘গত ৫০ বছর আমরা করছাড় দিয়ে শিশু লালনপালন করছি। আর কতকাল লালন করব? যে শিশুদের এত দিন লালনপালন করা হয়েছে, তারা এখন শারীরিকভাবে বড় হয়ে গেছে। তারা এখনো বলে, ‘‘আমাদের সুরক্ষা দিন’’, কিন্তু সুরক্ষার দিন তো চলে গেছে।’

 আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার সময় পিছিয়েছে কি না, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা আমাকে কেউ জানায়নি। তবে আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক রয়েছে মার্চে।’ এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা ওই অর্থের জন্য মরিয়া হয়ে উঠিনি। কারণ, লেনদেনের ভারসাম্য ও আর্থিক হিসাব এখন মোটামুটি ভালো।’

 বৈঠক শেষে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা জানতে চেয়েছি, এগুলো নিয়ে সরকার কতটুকু কী করছে? আর এনবিআরের করনীতি ও কর প্রশাসন আলাদা করার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

 আগামী কয়েক মাসের মধ্যে করনীতি ও কর প্রশাসনের আলাদা হওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে বলে আশাবাদী মার্টিন রেইজার। তিনি বলেন, আগামী বাজেটের আগে নতুন কোনো কর আরোপ করা হবে না বলে তাঁকে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ট ন র ইজ র করছ ড় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের ঋণ পেতে সরকার মরিয়া নয়: অর্থ উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তিসহ কোনো দাতা সংস্থার ঋণের জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ভালো।

আজ রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্তের প্রায় সবগুলো পুরণ করেছে সরকার। নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ে আলাদা বিভাগ হবে, রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, করছাড়ও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী জুনের আগে আরও কিছু শর্ত বাস্তবায়ন হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি কি পিছিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী মার্চে তাদের বোর্ড মিটিং হবে। এটা জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত উনারা এ বিষয়ে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে সরকারের অবস্থান হচ্ছে– বর্তমানে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ভালো। তাই আমরা একেবারে মরিয়া হয়ে উঠিনি। শুধু আইএমএফের চতুর্থ কিস্তিই নয় যেকোনো ঋণের বিষয়েই একই কথা। আইএমএফের সঙ্গে মার্চের আগে সরকারের আলাপ হবে।

প্রসঙ্গত, চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় মুদ্রবিনিময়হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়া এবং কর–রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় ইতোমধ্যেই পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে আরও এক মাস পিছিয়েছে আইএমএফ। এটি আরও পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা, অভ্যান্তরিণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোসহ অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ে দুটি বিভাগকে আলাদা করার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা তাদেরকে জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। এটি তারা বাস্তবায়ন করতে চান।

বাস্তবায়নে সুনিদির্ষ্ট কোনো দিনক্ষণ দেওয়া হয়েছে কিনা–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখতে চায়। তবে তারা এ–ও জানেন যে, সরকারের একটি নিদির্ষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। তিনি বলেন, আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যেকোনো করছাড় বা নতুন করে করারোপ আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেটের মাধ্যমে হওয়া দরকার হয়। অপার এক প্রশ্নের জবাবে মার্টিন রাইজার আরও বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাবে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইএমএফের চতুর্থ কিস্তির জন্য সরকার মরিয়া নয়
  • আইএমএফের ঋণ পেতে সরকার মরিয়া নয়: অর্থ উপদেষ্টা