যুবদল নেতা শামীম মোল্লা হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক যুগ্ম কমিশনার মো. শহীদুল্লাহকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ রোববার সন্ধ্যার দিকে এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। এর আগে সন্ধ্যার পর শহীদুল্লাহকে আদালতে হাজির করে পল্টন থানায় দায়ের করা শামীম মোল্লা হত্যা মামলায় ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ।

রাষ্ট্রপক্ষে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম সহযোগী এই পুলিশ কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ নস্যাৎ করেন আসামি শহীদুল্লাহ।

পরে পুলিশ কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি সেদিন পল্টন এলাকায় দায়িত্বে ছিলেন না। এ ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনোভাবে জড়িত নন।

উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত শহীদুল্লাহকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

যুবদল নেতা শামীম মোল্লাকে হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৭০৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ছাত্রদলের সাবেক সদস্য মো.

আব্বাস আলী বাদী হয়ে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এ হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ১১ সদস্য রয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৬১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে ছাত্রলীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির ৩২ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকসহ বাহিনীর ৪৬ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাত থানায় সাত মামলা, আসামি ৩৩৬ জন

সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামলার জালে জড়িয়ে পড়েছেন। জেলার ১২ উপজেলায় প্রতিদিনই তাদের কেউ না কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত জেলার সাতটি থানায় দায়ের করা সাতটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ওই সংগঠনের ৩৩৬ জন নেতাকর্মীকে। 

সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এই সংগঠনের অনেকেই ৫ আগস্টের পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ছেড়েছেন। এখন কেবল দেশের বাইরে থেকে ফেসবুকে মন্তব্য ছুড়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর জেলার ১২ উপজেলার সাতটিতে দায়ের করা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ১৫১ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলা দায়েরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কম সক্রিয় এ সংগঠনের কর্মীরা। এ সংগঠনকে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। 

এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং এই আইনের তপশিল-২ এ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামের ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।’

এ ঘোষণার পর সুনামগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালান সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী। তাহিরপুর উপজেলাসহ কিছু উপজেলায় বিজয় দিবসের কর্মসূচি উদযাপনের নামে তৎপর হন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এরপরই তাদের দমনে অধিক সক্রিয় হয় পুলিশ। মামলায় জড়িয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

সর্বশেষ তথ্য মতে, সুনামগঞ্জ সদর থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী পুলিশ। মামলা দায়েরের দিনই পুলিশ শহরতলির মাইজবাড়ির আতাহার সুমন নয়ন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

এ মামলায় ওই সংগঠনের জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি জিসান এনায়েত রাজা চৌধুরী, আজিজ পাঠান ও জ্যোতির্ময় বণিক দীপ্তসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে নভেম্বরের ২ তারিখ দোয়ারাবাজার থানায় এ সংগঠনের উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জনের নামোল্লেখ করে ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ মামলার আসামি। এ মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে জগন্নাথপুর থানায় ৫২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা নাশকতা মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্মপাশায় গেল মাসের ৫ তারিখে দায়ের করা নাশকতার মামলায় আসামি করা হয় ১৮ জনকে। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি ১৫ থেকে ২০ জন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬ জন।

শান্তিগঞ্জে গেল ৪ ডিসেম্বর মামলা হয়। এ মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এপিএস জুয়েল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে মামলার অজ্ঞাতপরিচয় আসামি উল্লেখ করা হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের ৫ নেতার নাম উল্লেখসহ ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় এ মামলায়। এখানে গ্রেপ্তার আছেন ৪ জন।

তাহিরপুরে ১৭ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আছেন ৭ থেকে ৮০ জন। তাদের মধ্যে আশরাফুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মধ্যনগর থানায় ১৫ জনের নামোল্লেখসহ ২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা হয়। এ উপজেলায় গ্রেপ্তার তিনজন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেশ সরব দেখা যায়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝেরেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক সহসভাপতি জানান, সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ও এভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। ছাত্রদলের ওপর নাশকতার মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। এখন সেটি তাদের ছেলেরা ভোগ করছে। এক সময় তাদের ছাত্র সংগঠনও নিষিদ্ধ থাকবে না– বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাত থানায় সাত মামলা, আসামি ৩৩৬ জন