কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন কারাগারে
Published: 9th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে জমি অধিগ্রহণের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আবদুল মজিদের আদালত এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কক্সবাজার জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো.
পিপি সিরাজ উল্লাহ বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি বিকেলে সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার, আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল ও স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন সাবেক ডিসি রুহুল আমিন। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপর চার আসামি পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতি করে নিজের নাম কেটে দেন প্রধান আসামি মো. রুহুল আমিন। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন অপর চার আসামি। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। মামলার পরপরই রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার।
দুদকের কক্সবাজার আদালতের আইনজীবীরা জানান, মামলা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। গত জুলাই মাসে তদন্ত শেষে আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। জালিয়াতির ঘটনায় সহযোগিতা করায় আসামি করা হয় বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং স্টেনোগ্রাফার মো. জাফর আহমদকে। মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় দুদকের কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমানের নামে।
মাতারবাড়ীতে তাপভিত্তিক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। চিংড়িঘেরের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি টাকা, যা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ নিয়ে ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘শুরুতে লুট ২২ কোটি টাকা’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় পরের দিন মামলা হয়।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীর আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব কাগজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। ওই দিন আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রুহুল আমিনসহ ২৮ জনের নামে আবেদনটি দুদকের প্রধান কার্যালয়ের (অনুসন্ধান ও তদন্ত) পরিচালক বরাবর পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধের সময় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ মোট আসামি ছিলেন ২৮ জন। পরে প্রধান আসামি রুহুল আমিনকে বাদ দিয়ে ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমকে প্রধান আসামি করা হয়। আসামি ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জন করা হয়। বাদীর জাল স্বাক্ষর দেওয়া হয়। পুরো নথিতে কাটাছেঁড়া ও লেখায় ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়। বাদীর জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগের একটি দুর্নীতির মামলায় ২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠান আদালত। এরপর তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র হ ল আম ন ল ইসল ম আইনজ ব তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘এনআইডিসহ নাগরিকের ডাটা নিয়ন্ত্রণে গঠিত হচ্ছে জাতীয় ডাটা কর্তৃপক্ষ’
জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (এনআইডি) নাগরিকের সব ধরনের ডাটা ব্যবস্থাপনায় আসছে ন্যাশনাল ডাটা অথরিটি। এজন্য প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অংশীজন এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত এর কার্যক্রম শুরু হবে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে ‘এনআইডির ওনারশিপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। অনুষ্ঠানে তিনি এ সম্পর্কিত ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে ফয়েজ আহমদ বলেন, নাগরিকের ডাটা ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক যে প্র্যাকটিস রয়েছে সেটি অনুসরণ করা হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এনআইডির রক্ষণাবেক্ষণ তাদের কাজ নয়। এনআইডিতে এমন অনেক তথ্য রয়েছে যা নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজে লাগে না, কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। এটা অপ্রয়োজনীয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে নাগরিকের ডাটা ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে কোনো সমন্বয় নেই। যে যার মতো করে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে কাজটি করছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জন্ম-মৃত্যু সনদ দেওয়া হচ্ছে। বিয়ে–তালাক নিবন্ধন দিচ্ছে আরেকটি সংস্থা। পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও নাগরিকের নতুন তথ্য তৈরি হচ্ছে। এতে করে একই ব্যক্তির বর্তমান ঠিকানা এক এক জায়গা এক এক রকম হচ্ছে। ভুলভাল তথ্য তৈরি হচ্ছে। ডাটা ‘হ্যাক’ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। আমাদের ৫ কোটি নাগরিকের ডাটা হ্যাক হয়েছে। আমাদের নাগরিকের ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ‘ডার্ক ওয়েবে’ বেচাবিক্রি হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না। আমরা এই জায়গাটায় পরিবর্তন আনতে চাই। এজন্য আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে জাতীয় ডাটা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ডাটা ব্যবস্থাপনায় আমরা একটি মহাসড়ক তৈরি করতে চাই, যারাই নাগরিকের এসব ডাটা ব্যবহার করবেন, তারা যেন একটা চেইনে যুক্ত থাকেন। জাতীয় ডাটা অথরিটি যে সংস্থার যতটুকু প্রয়োজন তাকে ওই পরিমাণ ডাটার প্রবেশাধিকার দেবে। তবে ডাটার মূল নিয়ন্ত্রণ থাকবে অথরিটির হাতে। এতে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষিত হবে, ডাটা বেহাত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, এ উদ্যোগের ফলে নির্বাচন কমিশনসহ এ কাজের সঙ্গে যুক্ত যেসব আইসিটি কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের চাকরি হারানোর ভয় নেই। বরং এসব জায়গায় আরও জনবল প্রয়োজন হবে।
অনুষ্ঠানে আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।