‘আমাদের টিমওয়ার্কটাও উদাহরণ হিসেবে থাকুক’
Published: 9th, February 2025 GMT
চলতি বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন মেহেদী হাসান খান। তিনি অভ্র কি–বোর্ডের কারিগর হিসেবে পরিচিত। এই কি–বোর্ড তৈরি করতে গিয়ে তাঁর ও সহযোগীদের পথচলা তুলে ধরেছেন মেহেদী হাসান। বলেছেন, এই পথচলায় স্বার্থহীন মানুষ যুক্ত ছিলেন বলে স্বার্থপর লোকজন তাঁদের আটকাতে পারেননি।
আজ রোববার অভ্র কি–বোর্ডের ফেসবুক পেজে এ কথা বলেছেন মেহেদী হাসান। এর আগে আজ সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে জানান, অভ্র তৈরিতে ভূমিকা রাখা তিন বন্ধু রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম ও শাবাব মুস্তাফাকে ছাড়া পুরস্কার নিতে চাননি মেহেদী হাসান। তাই চারজনকেই দলগতভাবে একুশে পদকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অভ্র কি–বোর্ডের শুরুর দিকের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ফেসবুকে মেহেদী হাসান খান লেখেন, ‘২০০৩ সালে যখন অভ্রর কাজ শুরু করলাম, তখন অভ্র বা আমাকে কেউই চিনত না। একটা ফোরাম বানালাম মানুষের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান দেওয়ার জন্য। ইউনিকোডের ব্যবহার তখনো নতুন, হাজারটা সমস্যা। ধীরে ধীরে মানুষ জমতে শুরু করল অনলাইন ফোরামে। তাঁরা সমস্যা নিয়ে আসেন, আমি সমাধান বের করার চেষ্টা করি অথবা বাগ (ত্রুটি) থাকলে ঠিক করে নতুন রিলিজ দিই। কিছু মানুষ, আমি যাদের চিনি না, তারাও আমাকে চেনে না, এরা শুধু সমস্যা নিয়ে আসার বদলে ধীরে ধীরে বাকিদের সমস্যা সমাধানে আমার সঙ্গে যোগ দেওয়া শুরু করল। একসময় অনলাইন ফোরামের বাইরে এদের সঙ্গে দেখা করলাম। সবাই ছাত্র তখন আমরা। কোনো কারণে অভ্রর মিশনটায় তারা বিশ্বাস করেছে, এর বাইরে আর কোনো চাওয়া–পাওয়া নেই তাদের।’
মেহেদী হাসান লেখেন, ‘ফোরাম থেকে শুরু হয়ে বাংলা ফন্ট বানানো, সফটওয়্যার বানানো, সবকিছু একসঙ্গে করলাম আমরা। বিভিন্ন সময়ে এ রকম অবদান রাখা অনেকে এসেছেন, চলেও গিয়েছেন নানা কারণে। কিন্তু কোনো কারণে হাতে গোনা কয়েকজন লেগে থাকলাম আমরা বছর দশকের ওপর। স্বার্থহীন এমন মানুষজন একসঙ্গে ছিল দেখে স্বার্থপর লোকজন চেষ্টা করেও আমাদের আটকাতে পারেনি।’
আরও পড়ুনএকুশে পদক পাচ্ছেন ১৪ বিশিষ্টজন ও জাতীয় নারী ফুটবল দল০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫একুশে পদক প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘আমি সবাইকে খুশি করতে পারব না। কিন্তু দলের কাজের কৃতিত্ব একক ব্যক্তি না পাক, আমার সামর্থ্য দিয়ে এটুকু চেষ্টা করতে পারি। একুশে পদক ঘোষণার পরে অ্যাডভাইজার (উপদেষ্টা) ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। ওনাকে ব্যাপারটা বোঝাতে খুব বেশি চেষ্টা করতে হয়নি, সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ২০০৩ সাল থেকে অনেকে অভ্র কাজে সাহায্য করেছেন, এদের সবার অবদান আছে। কিন্তু শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমরা যারা একসঙ্গে কাজ করেছি—রিফাত, সিয়াম, শাবাব, এদের ছাড়া আমি অভ্রর নামে একুশে পদক গ্রহণ করতে পারব না। উনি মেনে নিয়েছেন, বাকিদেরও রাজি করিয়েছেন। ওনাদের কথা ছিল, পদক গ্রহণ করা বা না করার কথা পরে, রাষ্ট্রের কাজ জানানো যে আপনাদের কাজের জন্য রাষ্ট্র কৃতজ্ঞ। তাঁরা তাই করেছেন। আমিও মেনে নিয়েছি। পরের প্রজন্মের জন্য অভ্রর মিশনটা যদি রেখে যেতে হয়, সঙ্গে আমাদের টিমওয়ার্কটাও উদাহরণ হিসেবে থাকুক। একা একা তো বেশি দূর যাওয়া যায় না।’
আরও পড়ুনমেহেদী হাসানের সঙ্গে অভ্রর জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন আরও ৩ জন২ ঘণ্টা আগেএবার বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান বলেন, ‘ভালো হলো শেষমেশ। ওনারা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও পদক দিচ্ছেন। দলকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই সংস্কৃতি চালু থাকুক। অভ্রর জন্য একুশে পদকের দাবি নিয়ে অনেকে অনেক বছর ধরে অনলাইনে ক্যাম্পেইন (প্রচার) করছেন, আপনাদের দাবি পূরণ হলো।’
আরও পড়ুননারী ফুটবলের টালমাটাল সময়ে এল একুশে পদক০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তে বিএসএফের সিসি ক্যামেরা স্থাপন, বিজিবির প্রতিবাদ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দক্ষিণ বাঁশজানী সীমান্তের শূন্য রেখায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। রোববার রাতে তারা এই সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী। এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
জানা যায়, উপজেলার পাথরডুবী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশজানি সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ৯ এস এর ৯৭৮ নম্বর সীমানা পিলারের পাশে শূন্য রেখার একটি ইউক্লিপটাস গাছে রোববার রাতে বাংলাদেশের দিকে তাক করে একটি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে বিএসএফের ছোট গাড়ল ঝড়া ক্যাম্পের সদস্যরা। সোমবার সকালে স্থানীয়রা বিষয়টি বিজিবিকে জানায়। পরে বিজিবি বিএসএফকে ডেকে এর কড়া প্রতিবাদ জানায় এবং সিসি ক্যামেরা অপসারণ করতে বলেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ নিয়ে বিজিবি–বিএসএফের মধ্যে একাধিক আলোচনা হলেও ক্যামেরা খুলে নিয়ে যায়নি বিএসএফ।
স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ বাঁশজানি ঝাকুয়াটারী সীমান্তে স্থাপিত আলোচিত দুই দেশের একটি মসজিদ পুনর্নির্মাণ চলছে। এর সন্নিকটে বিএসএফ রাতের অন্ধকারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় আমরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি।
মসজিদের মোয়াজ্জিন আলমগীর হোসেন জানান, আমাদের পূর্বপুরুষদের স্থাপিত এই মসজিদটিতে ভারত–বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়ি। দেশভাগের সময় গ্রামের মাঝ দিয়ে সীমান্ত রেখা টানা হলেও একে ঘিরে আমাদের সম্পর্ক আজও ভাগ হয়নি। তখন থেকে আমরা এখনও একসঙ্গে এ মসজিদে নামাজ পড়ি। এটি পুরাতন হলে নতুন করে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে বিএসএফ বাধা দেয়। তাদের বাধায় দুই বছর ধরে মসজিদের কাজ বন্ধ রয়েছে। এবার রাতের অন্ধকারে তারা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে গেছে। এতে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিজিবিকে ক্যামেরা খুলে নিয়ে যেতে বললেও তারা তা করেনি।
কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মাসুদুর রহমান জানান, শূন্য রেখায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে বিএসএফকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা ক্যামেরা অপসারণের আশ্বাস দিয়েছেন।