জামায়াত এখনো অফিশিয়ালি প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এটা প্রাথমিক সিলেকশন: আমির
Published: 9th, February 2025 GMT
মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটা ‘নির্বাচনের জেনোসাইড’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া হলে এটা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচন গণহত্যা। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।’
জামায়াত এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত এখনো অফিশিয়ালি প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এটা প্রাথমিক সিলেকশন। ইলেকশন এখনো অনেক দূর। ইলেকশন কাছে এলে দল ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে। তখন যাঁদের নমিনেশন দেবে, তাঁরাই প্রার্থী হবেন।’
আজ রোববার বিকেলে সিলেট নগরের দরগাগেট এলাকার কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে আয়োজিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির এ কথাগুলো বলেন। সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে এই শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়।
অপারেশন ডেভিল হান্ট প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘ডেভিল আছে এই সমাজে। সেই ডেভিল হান্ট যদি হয়, তবে দেশের ১৮ কোটি মানুষ যৌথ বাহিনীর যাঁরা অভিযান পরিচালনা করবেন, তাঁদের জন্য দোয়া করবেন এবং তাঁদের সঙ্গে থাকবেন।
শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশ স্বাধীনের পর থেকে কখনো একটু ভালো হয়েছে, কখনো খারাপ হয়েছে; কিন্তু খুব ভালো কখনো ছিল না। খুব ভালো কখনো হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত সঠিক না হবে। ওই সিদ্ধান্ত যখন সঠিক হবে, সততা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হবে, তখন শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, সবকিছুর উন্নতি সাধিত হবে।
নির্বাচিত সরকার সব সময় ভালো হয় না বলে মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার দাবি করে ১৫ বছর ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল। তারাই তো দেশের এই অবস্থা করে গেছে। সরকার নির্বাচিত হলেই যে ভালো হবে, তা বলা যাবে না। ভালো সরকার হতে হলে ভালো মানুষের দ্বারা সরকার গঠিত হবে। যাঁদের অতীত ভালো, বর্তমান ভালো, তাঁদের দিয়েই ভবিষ্যৎ ভালো হবে, এটা আশা করা যায়।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের আগে সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৮০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ ও নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। মহানগর জামায়াতের আমির মো.
অনুষ্ঠানে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির নুরুল ইসলাম (বাবুল), সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবদুর রব, জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও ইসলাম উদ্দিন, শিক্ষাবিদ আবদুস সালাম আল মাদানী, জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার, এ এইচ এম সোলায়মান, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহীন আহমদ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মাজেদ মাহফুজ ও রাশেদুল হাসান।
এর আগে দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সোনারগাঁওয়ে জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে জামায়াতের আমির প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় এ সম্মেলন হয়।
রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান। অন্যদের মধ্যে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল হান্নান ও আনওয়ার হোসাইন খান, মহানগরের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী, জেলার সাবেক নায়েবে আমির মতিউর রহমান, জেলার সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফের। যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে তার মতপ্রকাশের অধিকার পাবে। শহীদদের রক্তের ফোঁটা ও মজলুমের চোখের জলের বিনিময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারমুক্ত হয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দেশকে এখন সবাই মিলে গড়তে হবে। কোনো বিভেদ-বিভাজন তৈরি করে এই অগ্রযাত্রাকে থামতে দেওয়া যাবে না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র ল ইসল ম ল কশন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সাবেক এমপিসহ আটক ১০০
গাজীপুরে ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে সাবেক এক সংসদ সদস্য (এমপি), আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১০০ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতের অভিযানে জেলা পুলিশ ২১ জন ও মহানগর পুলিশ ৭৯ জনকে আটক করে।
গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আটক হয়েছেন আত্মগোপনে থাকা সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম ও কাশিমপুর থানার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম গায়েন। এ ছাড়া গতকাল রাতে গাজীপুর মহানগর যুব মহিলা লীগের সভাপতি আনোয়ারা সরকারকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) চৌধুরী যাবের সাদেক আজ সোমবার সকালে জানান, রাতভর অভিযানে গাজীপুর জেলা পুলিশ ২১ জনকে আটক করে। তাঁদের সবাই বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপপুলিশ কমিশনার আলমগীর হোসেন বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত মহানগরীর ৮টি থানার পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭৯ জনকে আটক করেছে।
সারা দেশে গত শনিবার বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করে যৌথ বাহিনী। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযানের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে পরদিন গত শনিবার গাজীপুরে দিনভর বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। বিক্ষোভের মুখে দায়িত্বে অবহেলার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চান মহানগর পুলিশ কমিশনার। প্রত্যাহার করা হয় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।