মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটা ‘নির্বাচনের জেনোসাইড’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া হলে এটা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচন গণহত্যা। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।’

জামায়াত এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত এখনো অফিশিয়ালি প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এটা প্রাথমিক সিলেকশন। ইলেকশন এখনো অনেক দূর। ইলেকশন কাছে এলে দল ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে। তখন যাঁদের নমিনেশন দেবে, তাঁরাই প্রার্থী হবেন।’

আজ রোববার বিকেলে সিলেট নগরের দরগাগেট এলাকার কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে আয়োজিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির এ কথাগুলো বলেন। সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে এই শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়।

অপারেশন ডেভিল হান্ট প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘ডেভিল আছে এই সমাজে। সেই ডেভিল হান্ট যদি হয়, তবে দেশের ১৮ কোটি মানুষ যৌথ বাহিনীর যাঁরা অভিযান পরিচালনা করবেন, তাঁদের জন্য দোয়া করবেন এবং তাঁদের সঙ্গে থাকবেন।

শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশ স্বাধীনের পর থেকে কখনো একটু ভালো হয়েছে, কখনো খারাপ হয়েছে; কিন্তু খুব ভালো কখনো ছিল না। খুব ভালো কখনো হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত সঠিক না হবে। ওই সিদ্ধান্ত যখন সঠিক হবে, সততা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হবে, তখন শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, সবকিছুর উন্নতি সাধিত হবে।

নির্বাচিত সরকার সব সময় ভালো হয় না বলে মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার দাবি করে ১৫ বছর ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল। তারাই তো দেশের এই অবস্থা করে গেছে। সরকার নির্বাচিত হলেই যে ভালো হবে, তা বলা যাবে না। ভালো সরকার হতে হলে ভালো মানুষের দ্বারা সরকার গঠিত হবে। যাঁদের অতীত ভালো, বর্তমান ভালো, তাঁদের দিয়েই ভবিষ্যৎ ভালো হবে, এটা আশা করা যায়।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের আগে সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৮০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ ও নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। মহানগর জামায়াতের আমির মো.

ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস-উন-নূর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান আহমদ ও জামায়াতের সিলেট অঞ্চলের টিম সদস্য আবদুল হাই হারুন।

অনুষ্ঠানে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির নুরুল ইসলাম (বাবুল), সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবদুর রব, জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও ইসলাম উদ্দিন, শিক্ষাবিদ আবদুস সালাম আল মাদানী, জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার, এ এইচ এম সোলায়মান, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহীন আহমদ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মাজেদ মাহফুজ ও রাশেদুল হাসান।

এর আগে দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সোনারগাঁওয়ে জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে জামায়াতের আমির প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় এ সম্মেলন হয়।

রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান। অন্যদের মধ্যে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল হান্নান ও আনওয়ার হোসাইন খান, মহানগরের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী, জেলার সাবেক নায়েবে আমির মতিউর রহমান, জেলার সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফের। যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে তার মতপ্রকাশের অধিকার পাবে। শহীদদের রক্তের ফোঁটা ও মজলুমের চোখের জলের বিনিময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারমুক্ত হয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দেশকে এখন সবাই মিলে গড়তে হবে। কোনো বিভেদ-বিভাজন তৈরি করে এই অগ্রযাত্রাকে থামতে দেওয়া যাবে না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র ল ইসল ম ল কশন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়মিত বাহিনীকেই কার্যকর করতে হবে

অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি) যে ‘অক্সিলারি ফোর্স’ বা অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার কার্যকারিতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, পুলিশকে সহায়তাকারী হিসেবে ৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আইন মোতাবেক পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত সদস্যরা যে ক্ষমতা ভোগ ও দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরাও সেটা করবেন। আবার পুলিশ কর্মকর্তারা আইনগতভাবে যে সুরক্ষা পান, সেটাও তাঁরা পাবেন।

অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগের আগে প্রশ্ন উঠবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেসব বাহিনী আছে, তারা কতটা দায়িত্ব পালন করছেন? দেশে এখন যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি, আনসার ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। তারপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটা নাজুক কেন?  

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছেন, এমন লোকদের ‘অক্সিলারি ফোর্সে’ নেওয়া হবে। তঁাদের প্রশিক্ষণ থাকলেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘অক্সিলারি ফোর্স বলতে বোঝায় পুরো ফোর্স নয়, তবে আধা সরকারি ফোর্স, পুলিশকে সহযোগিতার জন্য এ ধরনের ফোর্স ব্যবহার করার বিষয়টি পুলিশ আইনেই আছে।’ যুক্তরাজ্যসহ অনেক
দেশে এই ব্যবস্থা আছে। সেখানে বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ করা হয়।

মেট্রোপলিটন পুলিশের অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬ ধারায় আছে, ডিএমপি কমিশনার যদি মনে করেন যেকোনো ব্যক্তিকে সহযোগী পুলিশ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে পারেন। কিন্তু নিকট অতীতে এ ধরনের নিয়োগের কোনো দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে নেই। এর ফলে এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে—তা একটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কাদের অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।

মূল কথা হলো, অতিরিক্ত বাহিনীর যে সংখ্যক সদস্য নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ২ কোটি ৩২ লাখের বেশি। আর ডিএমপির লোকবল মাত্র ৩৪ হাজার। এর সঙ্গে ৫০০ সদস্যের সংযোজন কার্যত কোনো ফল দেবে না। ঢাকা শহরে যতগুলো শপিং মল ও মার্কেট আছে, সেগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য এই সংখ্যা যথেষ্ট নয়।

ডিএমপি কমিশনার বিভিন্ন স্থানে টহল বাড়ানোর কথা বলছেন, আবার বাসায় ঈদে গ্রামের বাড়িতে গেলে অর্থ ও অলংকার নিজেদের দায়িত্বে রাখার কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ আমলে যাঁরা ডিএমপির কমিশনার ছিলেন, তাঁরাও একই রকম সদুপদেশ দিতেন। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন লক্ষণীয় নয়।

অতএব, কেবল লোকদেখানো কিংবা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ কতটা কার্যকর হবে, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলার অবনতির পেছনে মব ভায়োলেন্স অনেকটা দায়ী। অথচ এ ক্ষেত্রে ডিএমপির তেমন সক্রিয়তা দেখা যায় না। তাঁরা সক্রিয় থাকলে কতিপয় ব্যক্তি আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে থানা অবরোধ করতে পারতেন না।

রাজধানী ঢাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানি ও মব সহিংসতার মতো অপরাধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আসন্ন ঈদে এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো মূল্যে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যেটা নতুন সমস্যা তৈরি করে বা প্রশ্ন তৈরি করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরাপত্তারক্ষীদেরই জীবনের নিরাপত্তা নেই: জিএম কাদের
  • ইউনূস সরকারের রিপোর্ট কার্ড
  • ইফতারে তিন পদ
  • কৃষি বরাবরের মতোই অবহেলিত থেকে যাবে!
  • বাংলাদেশের অদূর এবং সুদূর ভবিষ্যৎ
  • নিপীড়নের ঘটনাগুলোতে সাত দিনের মধ্যে শক্ত অবস্থান নেওয়ার দাবি ঢাবি সাদা দলের
  • নিয়মিত বাহিনীকেই কার্যকর করতে হবে
  • নারী নির্যাতন, বিচারহীনতা ও সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান
  • কুমিল্লায় ৪৮ ঘণ্টায় ৩ ঘটনা, ধর্ষণের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থায় ‘ঘাটতি’
  • ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন ‘অচল’ বানাল ভৈরবের খুরশেদকে, হারিয়েছেন ভিটাবাড়িসহ সব