নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদরের প্রসাদপুর বাজারে নির্ধারিত স্থানে দোকান বসাতে না পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে দোকান বসিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কৃষকেরা। আজ রোববার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষকেরা নিজেদের খেতে উৎপাদিত সবজি নিয়ে এই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এদিকে প্রসাদপুর বাজারে কৃষকদের দোকান উচ্ছেদের ঘটনায় কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এক কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবাদ জানানো কৃষকদের অভিযোগ, প্রসাদপুর বাজারে সবজি বিক্রির জন্য নির্ধারিত স্থান দখল করে রেখেছে একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ‘প্রসাদপুর তরকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। সমিতির সদস্যরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে প্রতিটি পণ্যের অভিন্ন দাম নির্ধারণ করে ভোক্তাদের কাছে চড়া দামে বিক্রয় করেন। এতে জিম্মি হয়ে পড়েন ভোক্তারা।

কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিভিন্ন ধরনের সবজি খেত থেকে তুলে এনে প্রসাদপুর হাটে নিয়ে এসে কৃষকেরা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে খুচরা বিক্রি করতেন। ব্যবসায়ীদের চেয়ে অনেক কম দামে ক্রেতাদের কাছে সবজি বিক্রি করা হতো। কৃষকের সবজি হাটে থাকায় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা কমে যায়। এ কারণে তরকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে তাঁদের হাটের নির্ধারিত স্থানে দোকান করতে দীর্ঘদিন ধরে বাধা দিয়ে আসছেন। আজ বিকেলে কৃষকেরা হাটে দোকান বসাতে চাইলে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়।

কৃষক মাজেদ আলী মোল্লা বলেন, ‘তরকারি বাজার থেকে দফায় দফায় আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় এত দিন দোকান করে আসছি। আজ সেই জায়গা আর নেই। খেতের পণ্য বিক্রি করার জন্য প্রশাসনের কাছে আমরা স্থায়ী জায়গার দাবি করছি।’

প্রসাদপুর বাজার বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আখতারুজ্জামান আল মনসুর বলেন, ‘প্রসাদপুর হাটে সিন্ডিকেট করে সবজি বিক্রি করেন কিছু ব্যবসায়ী। প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় হাটে দোকান বসানোর জায়গা বন্দোবস্তের জন্য উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা করছি।’

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে প্রসাদপুর তরকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ‘তরকারি বাজারে জায়গার সংকট রয়েছে। সবাইকে দোকান বসানোর জায়গা করে দেওয়া সম্ভব হয় না। কৃষকদের উচ্ছেদ করার অভিযোগ সঠিক নয়।’

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া বলেন, কৃষকদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এক কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের দোকান বসাতে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ক ষকদ র র জন য উপজ ল তরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইনে বেতন-ফি দেবে শিক্ষার্থীরা

কুলাউড়ায় মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা পদ্ধতি চালু করেছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই মাসিক বেতন, ভর্তি, সেশন ও পরীক্ষা ফিসহ চার্জ জমা দিতে পারবে। 

সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন উপজেলার সবকয়টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের প্রধানদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করেন। বৈঠকে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে সোনালী ব্যাংকের অনলাইন ‘সোনালী সেবা’ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও পরীক্ষা ফ্রি আদায়ের জন্য সোনালী ব্যাংক পিএলসির পক্ষ থেকে অফার লেটার উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়। পরে সোনালী ব্যাংক পিএলসি কুলাউড়া শাখায় ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকের চুক্তি হয়।

বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক বলেন, ইউএনও স্যারের এই উদ্যোগটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কুলাউড়ায় সর্বপ্রথম আমাদের প্রতিষ্ঠান এই অনলাইন সেবার আওতায় এসেছে। এই সেবার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে তাদের ইউনিক আইডি ও প্রতিষ্ঠানের ইআইএন দিয়ে ব্যাংকের সফটওয়্যারে প্রবেশ করে অনলাইনে বিকাশ, নগদ, উপায়, ডাচবাংলাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মাসিক বেতন, ভর্তি, সেশন ও পরীক্ষা ফিসহ চার্জ জমা দিতে পারবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে। গত নভেম্বর মাসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নীতিমালা অনুসারে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠকে বসি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, ফি, চার্জসহ প্রাপ্ত অর্থ সরাসরি স্কুলে জমা না দিয়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান আগ্রহী ছিল তাদেরকে সোনালী ব্যাংক অফার লেটার দিয়েছে। তারপর স্কুলগুলো সম্মতি দিলে ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানে অনলাইন সেবা চালু হয়েছে। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে সব প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতির আওতায় আসবে। এতে প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, কুলাউড়ার ইউএনওর উদ্যোগটি খুবই চমৎকার। এই উদ্যোগটি অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। জেলার সব উপজেলায়ও পদ্ধতিটি চালু করা হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টিসিবির কার্ড মিলবে ওয়ার্ড এবং ইউএনও কার্যালয়ে
  • অনলাইনে বেতন-ফি দেবে শিক্ষার্থীরা