ফতুল্লার ভুইগড় রূপায়ন টাউন আবাসন এলাকার বাসিন্দা এম এ হোসাইন রাজ নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার চাঁদাদাবিসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তোফায়েল হোসেন লিটন গংদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এম এ হোসাইন রাজ শনিবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত তোফায়েল হোসেন লিটন ভূইগড় এলাকার  মৃত.

 আলী হোসেন এর ছেলে। 

এদিকে থানায় অভিযোগ করার পর থেকে লিটন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। সে উল্টো ব্যবসায়ী এম এ হোসাইন রাজকে থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে হুমকি দিচ্ছে। 

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারের পতনের পর নাজিমুদ্দিন চেয়ারম্যান পলাতক হবার পর বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে ও কুতুবপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতার ভাগিনা পরিচয় বহন করে ক্ষমতার দাপটে লিটন তার সঙ্গীয় লোকজন নিয়ে রূপায়ন টাউন এলাকা নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এম এ হোসাইন রাজ অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি ভূইগড় রূপায়ণ টাউনের একজন স্থায়ী বাসিন্দা এবং সেখানে কয়েকটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে ১০ বৎসর যাবৎ ভোগ দখলে রয়েছেন। তোফায়েল হোসেন লিটন অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন লোকজন নিয়ে তার নিকট বিভিন্ন সময় অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করে এবং তাদের কথা মতো চলতে বলে।

ভুক্তভোগী রাজ তাদের দাবি মেনে না নেয়ায় তারা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের হুমকি প্রদানসহ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। 

এর সূত্রধরে গত শুক্রবার সকালের দিকে লিটন তার দলবল নিয়ে ভূইগড় রূপায়ন টাউনের ২৩নং বিল্ডিংয়ের নিচে রাজ এর নিকট অযৌক্তিক ভাবে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না নিলে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে যায়।

পরদিন শনিবার বেলা ১২ টার দিকে পুণরায় পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় এম এ হোসাইন রাজ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে লিটন ও তার সহযোগীরা মারধর করতে উদ্যত হয়। 

একপর্যায়ে লিটন গং হুমকি দেয় চাঁদা না নিলে তারা রাজকে প্রাণনাশের হুমকিসহ তার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতি করবে যাতে রূপায়ন টাউন ছাড়তে বাধ্য করবে। 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এম এ হোসাইন রাজ জানান, লিটন ও তার সহযোগীদের হুমকিতে তিনি ও  তার পরিবারের লোকজন এখন ভয়ে  নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন। তিনি লিটন গংদের হাত থেকে রক্ষা পেতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছেন। 

স্থানীয়রা জানান, লিটন একজন একরোখা বেপরোয়া ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। সে তার নিজের প্রভাব খাটাতে এলাকায় মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। তার গতিপথ রোধ  করতে না পারলে ভূইগড় ও রূপায়ন টাউন  এলাকায় অনেক ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে সেই সাথে সন্ত্রাসের নগরীতে পরিনত হতে পারে। 

সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় লিটনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে জোড়ালো ভাবে আইনী পদক্ষেপ জরুরি বলে দাবি জানান রুপায়ন টাউনের বসবাসকারীরা।

এ বিষয়ে অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল বলেন, প্রথমে যে অফিসারকে তদন্তের দায়িত্বে দেয়া হয়েছিলো তিনি অন্য একটি সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় কিছুক্ষন আগে আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করবো। 
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ন র য়ণগঞ জ ব যবস য় তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

হালাল-হারাম বুঝেশুনে ইবাদত করতে হবে

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালোবেসে কুল মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। জিন ও ইনসান বানিয়েছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ৫৬) মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩০) যাঁরা সে দায়িত্ব সঠিকভাবে প্রতিপালন করবেন, তাঁদের সম্মানিত করা হবে বেলায়াত বা বন্ধুত্বের মর্যাদায়। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫৭)

এ কারণে সব কাজে আল্লাহর নির্দেশ তথা মাকাসিদুশ শরিয়াহ ও নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ তথা আদর্শ বা দর্শন অনুসরণ করতে হবে। তাই আমরা সব কাজের শুরুতে বলি, ‘পরম করুণাময় অতীব দয়ালু আল্লাহর নামে।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৩০)

আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন, প্রতিটি আহ্বানে সাড়া দেন, সব আবেদন মঞ্জুর করেন, সব দোয়া কবুল করেন। (মিশকাত শরিফ)

আমরা সুরা ফাতিহায় যখন বলি, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য)। তখন আল্লাহ তাআলা জবাব দেন, ‘হামিদানি আবদি’ (আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল)। আমরা যখন বলি, ‘আর রাহমানির রাহিম’ (তিনি পরম করুণাময় অসীম দয়ালু), তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আছনা আলাইয়া আবদি’ (আমার বান্দা আমার বিশেষ প্রশংসা করল)। আমরা যখন বলি, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন’ (তিনি বিচারদিনের মালিক)। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মাজ্জাদানি আবদি’ (আমার বান্দা আমাকে সম্মানিত করল)। যখন আমরা বলি, ‘ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তাইন’ (শুধু আপনারই ইবাদত করি আর শুধু আপনার কাছেই সাহায্য চাই)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হাজা বাইনি ওয়া বাইনা আবদি’ (এই সিদ্ধান্তই ফয়সালা হলো আমার ও আমার বান্দার মাঝে—বান্দা আমার ইবাদত ও আনুগত্য করবে, আমি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করব)। আমরা যখন বলি, ‘ইহদিনাস সিরাতল মুস্তাকিম, সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদ-দললিন!’ (আমাদের সঠিক পথ দেখান, তাদের পথ, যাদের আপনি নিয়ামত দিয়েছেন, তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত [ইহুদি]; আর যারা পথভ্রষ্ট [খ্রিষ্টান])। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লিআবদি মা ছাআল’ (আমার বান্দা যা চায়, তার জন্য তা-ই)। (মুসলিম শরিফ: ৭৬৪ [আ. ন. ৩৯৫]) 

আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য ইবাদত ও সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। কোরআন মজিদের ঘোষণা, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।’ (সুরা-৪৭ মুহাম্মদ, আয়াত: ৭) 

‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে, তবে আল্লাহ এমন নন যে তিনি তাদের পরিবর্তন করবেন; এবং নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৫৩) ‘এবং আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।’ (সুরা-১৩ রাআদ, আয়াত: ১১)

‘হালাল’ অর্থ বৈধ, ‘হারাম’ অর্থ অবৈধ। যা নিষিদ্ধ, তা হারাম, যা নিষিদ্ধ নয়, তা হালাল। সুতরাং কোনো কিছু হালাল বা বৈধ হওয়ার জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা প্রয়োজন নেই; কিন্তু হারাম বা অবৈধ হওয়ার জন্য সুস্পষ্ট বিবরণ থাকতে হবে। 

কোরআন কারিমে আদেশ ও নিষেধসংক্রান্ত পাঁচ শ আয়াত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট।’ (বুখারি: ১৪৭) তবে উপকারী, কল্যাণমূলক ও ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিকারী কাজ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যারা ইসলামে কোনো উত্তম প্রথার প্রচলন বা প্রবর্তন করল, তাদের জন্য তার সওয়াব রয়েছে এবং যারা পরবর্তীকালে এর ওপর আমল করবে তার সওয়াবও পাবে; কিন্তু আমলকারীর সওয়াব কমানো হবে না। আর যারা ইসলামে কোনো মন্দ বিষয় প্রচলন বা প্রবর্তন করবে, তারা তার বিনিময় পাবে পরবর্তীকালে যারা এই পথে চলবে, তার বিনিময়ও পাবে; কিন্তু আমলকারীর প্রতিদান কমানো হবে না।’ (সহিহ্ মুসলিম)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ