শান্তদের জন্যচ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালের পথ কঠিন
Published: 9th, February 2025 GMT
দুয়ারে কড়া নাড়ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এই আসরে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশও। পাকিস্তান-দুবাইয়ের মাটিতে হাইব্রিড মডেলে অনুষ্ঠেয় এই আসরে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। ভারত পাকিস্তানের মতো দুই দলের বিপক্ষে খেলতে হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। গ্রুপপর্ব পেরিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছানোর পথটা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন সাবেক ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমন।
পাকিস্তানের চেয়ে ভারতকেই কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করছেন হাবিবুল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এক জায়গায় এগিয়ে রাখছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। তার মতে ভারত চাপ সামলাতে পারে না। চাপের মুহূর্তে তারা ভেঙে পড়ে। তবে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
হাবিবুল বলেন, ‘‘ভারত খুব ভালো দল। কিন্তু চাপে পড়তে পছন্দ করে না। আমরা কিন্তু দেখেছি কয়েকবার চাপে ভেঙে পড়তে। তারা আসলে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে খেলে, তখন একটু বাড়তি চাপেই থাকে। দল হিসেবে ভারতকে মানতেই হবে অনেক এগিয়ে আছে, তাদের দলে অনেক চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়ও অনেক বেশি।’’
আরো পড়ুন:
ধূসর অতীত পেরিয়ে আলোর অপেক্ষা
রোহিতের ৪৯তম সেঞ্চুরি
ভারতকে হারানো অসম্ভব কিছু না, সেটাও মানছেন হাবিবুল। তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘আমার মনে হয় প্রথম বল থেকে যদি আমরা ওদের চাপে রাখতে পারি, তাহলে ভারতকে হারানো সম্ভব। এমন না যে আমরা ভারতকে কখনো হারাইনি। ভারত এখন ভালো দল এবং যখন হারিয়েছিলাম তখনও ভালো দলই ছিল। তবে আমরাও এখন আরো ভালো দলে পরিণত হয়েছি।’’
তবে জয় পেতে হলে বাংলাদেশকে সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। পুরো দলকে এক হয়ে খেলতে হবে বলে মনে করছেন সাবেক এই অধিনায়ক, ‘‘যখন আমরা বড় টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, আমার মনে হয় টিম গেমটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দলটা তখনই ভালো খেলে যখন আমরা দল হিসেবে খেলতে পারি। বড় টুর্নামেন্টে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি অনুশীলনে রান করলেও সেটা কাজে দেয়, আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকেই মনে করি।’’
প্রতিটি বৈশ্বিক আসরের পূর্বেই ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। এবারও তেমন কিছুই করতে চায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এর আগেও অবশ্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। এবার অবশ্য ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখা উচিত বলেই মনে করেন সাবেক এই নির্বাচক।
হাবিবুল বলেন, ‘‘স্বপ্ন দেখলে তো ফাইনাল পর্যন্ত দেখা উচিত। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আমাদের রেকর্ড খুব একটা ভালো না। বিশ্বকাপে আমরা ভালো করিনি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আমাদের রেকর্ড খুব ভালো। এর আগে সেমিফাইনাল খেলেছি, সুতরাং এবার যে পারব না তা না। আর যখন কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে যাই, আমার মনে হয় মনের মধ্যে, বুকের মধ্যে ওটা নিয়েই যাওয়া উচিত।’’
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঈশ্বরদীর অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি লিচুর মুকুল
লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।
সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।