দুয়ারে কড়া নাড়ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এই আসরে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশও। পাকিস্তান-দুবাইয়ের মাটিতে হাইব্রিড মডেলে অনুষ্ঠেয় এই আসরে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। ভারত পাকিস্তানের মতো দুই দলের বিপক্ষে খেলতে হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। গ্রুপপর্ব পেরিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছানোর পথটা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন সাবেক ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমন।

পাকিস্তানের চেয়ে ভারতকেই কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করছেন হাবিবুল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এক জায়গায় এগিয়ে রাখছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। তার মতে ভারত চাপ সামলাতে পারে না। চাপের মুহূর্তে তারা ভেঙে পড়ে। তবে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

হাবিবুল বলেন, ‘‘ভারত খুব ভালো দল। কিন্তু চাপে পড়তে পছন্দ করে না। আমরা কিন্তু দেখেছি কয়েকবার চাপে ভেঙে পড়তে। তারা আসলে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে খেলে, তখন একটু বাড়তি চাপেই থাকে। দল হিসেবে ভারতকে মানতেই হবে অনেক এগিয়ে আছে, তাদের দলে অনেক চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়ও অনেক বেশি।’’

আরো পড়ুন:

ধূসর অতীত পেরিয়ে আলোর অপেক্ষা

রোহিতের ৪৯তম সেঞ্চুরি

ভারতকে হারানো অসম্ভব কিছু না, সেটাও মানছেন হাবিবুল। তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘আমার মনে হয় প্রথম বল থেকে যদি আমরা ওদের চাপে রাখতে পারি, তাহলে ভারতকে হারানো সম্ভব। এমন না যে আমরা ভারতকে কখনো হারাইনি। ভারত এখন ভালো দল এবং যখন হারিয়েছিলাম তখনও ভালো দলই ছিল। তবে আমরাও এখন আরো ভালো দলে পরিণত হয়েছি।’’

তবে জয় পেতে হলে বাংলাদেশকে সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। পুরো দলকে এক হয়ে খেলতে হবে বলে মনে করছেন সাবেক এই অধিনায়ক, ‘‘যখন আমরা বড় টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, আমার মনে হয় টিম গেমটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দলটা তখনই ভালো খেলে যখন আমরা দল হিসেবে খেলতে পারি। বড় টুর্নামেন্টে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি অনুশীলনে রান করলেও সেটা কাজে দেয়, আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকেই মনে করি।’’

প্রতিটি বৈশ্বিক আসরের পূর্বেই ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। এবারও তেমন কিছুই করতে চায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এর আগেও অবশ্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। এবার অবশ্য ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখা উচিত বলেই মনে করেন সাবেক এই নির্বাচক।

হাবিবুল বলেন, ‘‘স্বপ্ন দেখলে তো ফাইনাল পর্যন্ত দেখা উচিত। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আমাদের রেকর্ড খুব একটা ভালো না। বিশ্বকাপে আমরা ভালো করিনি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আমাদের রেকর্ড খুব ভালো। এর আগে সেমিফাইনাল খেলেছি, সুতরাং এবার যে পারব না তা না। আর যখন কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে যাই, আমার মনে হয় মনের মধ্যে, বুকের মধ্যে ওটা নিয়েই যাওয়া উচিত।’’ 

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ রতক

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী

পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।

তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’  নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।

তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।

নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।

শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।

পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।

শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ