বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খুলনায় দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। খুলনা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি গঠন করার পাশাপাশি আবারও চালু করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। সেই সঙ্গে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য খুলনার ছয়টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি।

আজ রোববার নগরের আল ফারুক সোসাইটিতে এক সমাবেশে খুলনার তিনটি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। এর আগে আরও তিনটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়।

সমাবেশে আব্দুল খালেক বলেন, ‘বহু রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা নিশ্বাস ফেলে কথা বলার বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন আবার বাংলাদেশকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে যে গণবিপ্লব, নতুন স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে বিপর্যস্ত করার জন্য নতুন কোনো চক্রান্ত করা হলে তা প্রতিহত করা হবে।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা-১ আসনে (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির শেখ আবু ইউসুফ, খুলনা-২ আসনে (সদর-সোনাডাঙ্গা ১৬-৩১ নম্বর ওয়ার্ড) কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন এবং খুলনা-৩ আসনে (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী ১-১৫ নম্বর ওয়ার্ড আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন) কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মহানগর আমির মাহফুজুর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। খুলনা-২ ও খুলনা-৩ আসনে এর আগে জামায়াত কখনো প্রার্থী দেয়নি।

এর আগে খুলনা-৪ আসনে (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) খুলনা জেলা নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং খুলনা-৬ আসনে (কয়রা-পাইকগাছা) কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী খুলনা ছয়টি আসনের সব কটিতে প্রার্থী ঘোষণা করল। এ ছাড়া সাতক্ষীরার চারটি ও বাগেরহাটের চারটি আসনেও জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

প্রার্থী ঘোষণা করার বিষয়ে খুলনা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কোনো নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয় নয়। আমাদের দলের পদ্ধতিগুলো একটু আলাদা, অন্যদের সঙ্গে মেলে না। প্রথমত, এখানে কেউ নিজে প্রার্থী হন না, নির্বাচনী কাজও করেন না। কোনো আসনে ভবিষ্যতে নির্বাচনে প্রার্থী কে হবেন, সেই নির্বাচন ৫ বছর পর হতে পারে, ১০ বছর পরে হতে পারে, কোনো নির্বাচনে যদি ওই আসনে আমাদের দল থেকে অংশ নেন, তাহলে কে প্রার্থী হবেন—সেটা কেন্দ্র বাছাই করে। আমাদের যেসব জনশক্তি আছে, দায়িত্বশীলরা আছেন এবং জনগণেরও কিছু ক্যাটাগরি আছে। এর ওপরে একটা মতামত নিয়ে আলাপ–আলোচনার পর উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর এটা ঘোষণা দেওয়া হয়।’

শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন আরও বলেন, এটা কোনো নির্বাচনের কার্যক্রম এগিয়ে রাখার কোনো বিষয় না। আসনগুলোতে প্রার্থী ঘোষণা হয়ে থাকছে। এসব আসনে জামায়াত থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হলে ঘোষিত প্রার্থীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির এমরান হুসাইন, নায়েবে আমির কবিরুল ইসলাম, মহানগর নায়েবে আমির নজিবুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগর সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর আলম, আজিজুল ইসলাম ফারাজী, আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস, আবু বকর সিদ্দিক, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন, সেক্রেটারি রাকিব হাসান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম সদস য ও ইসল ম র সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে সেই  অহিদের বাড়িতে আমন্ত্রিত বিএনপির শীর্ষ নেতারা, ক্ষোভ  

বন্দরের মদনপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী  যুবলীগ নেতা অহিদুজ্জামান অহিদের মালিকানাধীন নবনির্মিত বহুতল ভবন উদ্বোধন করতে আমন্ত্রিত অতিথি  নারায়ণগঞ্জ  জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ তিন নেতা। 

ওসমান পরিবারের সহচর  ও ছাত্র-জনতা  হত্যা সহ  একাধিক মামলার  আসামি অহিদের বাড়িতে  নারায়ণগঞ্জের বিএনপির  শীর্ষ  তিন নেতার আগমনের  এ খবরটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে  তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

আমন্ত্রিত অতিথিরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ,  মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড, সাখাওয়াত হোসেন খান  ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু,  বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ।

মাজহারুল ইসলাম হিরণ  অর্থের বিনিময়ে অহিদকে পূর্নবাসনে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রভাবে  মাদক ব্যবসা ,  দখল, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণসহ  অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থে অহিদের মালিকানাধীন স্পেশালাইজড হসপিটালের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রিত অতিথি হচ্ছেন  বলে ক্ষোভ প্রকাশ  করছেন  মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ সহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। 

উত্তরাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী, যুবলীগ নেতা অহিদের অবৈধ টাকায় মদনপুর ফুলহর এলাকায় গড়ে তোলা  বহুতল বভনেই  হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হবে  আগামী ১৪ এপ্রিল  আগামীকাল সোমবার বিকালে। 

উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে আয়োজিত আমন্ত্রণ পত্রে আমন্ত্রিত অতিথিরা হলেন, উদ্বোধী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল খানের সভাপতি, প্রধান অতিথি, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। উদ্বোধক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান|

বিশেষ অতিথি, সোনারগাঁও উপজেলার বিএনপির সভাপতি আজাহারুল ইসলাম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক  মোশাররফ হোসেন  ও কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম হক রুমী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব  আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ,  শিল্পপতি আনোয়ার হোসেন।

স্থানীয়রা  জানান, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় ক্ষমতাবলে  অহিদুজ্জামান অহিদ  মদনপুর এলাকায় গড়ে তোলে সন্ত্রাসী বাহিনী। অহিদের নেতৃত্বে  এ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে ছিলো মদনপুর এলাকা সহ উত্তরাঞ্চলের  মদক, চাঁদাবাজি,  দখল, ছিনতাই সহ নানা অপকর্ম।

এছাড়াও ক্ষমতার দাপটে অহিদ একই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী আমির হোসেনের পৈত্রিক  জমি দখল করে অবৈধ  ইটভাটা গড়ে তুলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে হামলার  ভিডিও ফেসবুক জুড়ে  ছড়িয়ে পড়েছে।

৫ আগস্ট  হাসিনা দেশ ছাড়ার পর অহিদ পালিয়ে যায়।  তার পর অদৃশ্য ইশারায়  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে অহিদ।

মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,  অহিদ আগামীর পথ চলা বিএনপির ছায়াতলে।  উপজেলা বিএনপির সভাপতি  হিরণের নিয়ন্ত্রণে পূর্নবাসনের পায়তারা করছে আসছে। আওয়ামী লীগের আমলে  বিএনপি কর্মীদের দাস বানিয়ে ব্যবহার করতেন।

তার  নিয়ন্ত্রণে না  থাকলেই যে কাউকে  ইয়াবা সহ  পুলিশে সোপর্দ করতো।  অদৃশ্য ইশারায় অহিদের  বহুতল বভন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন  জেলার শীর্ষ বিএনপি নেতারা। তাদের উপস্থিতি, আগমন নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ দেখা দিয়েছে   বিএনপি  নেতাকর্মীদের মধ্যে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ