অভিবাসন একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কর্মসংস্থানের সন্ধানে মানুষ বিভাগীয় শহরগুলোয় ছুটে যান। কিন্তু ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এসব শহর ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা মানুষের বসবাসের জন্য অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্যতম দুটি বিভাগীয় শহর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কর্মসংস্থানের জন্য মানুষের প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ঢাকার জনসংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শীতকালেও মানুষ গরম অনুভব করছে। ময়লা-আবর্জনার পরিস্থিতিও ভয়াবহ; বুড়িগঙ্গা নদী তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আইকিউএয়ারের মানসূচক অনুযায়ী ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৫২, যা বিশ্বের ১২৪টি নগরীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি কারণ হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা।

অন্যদিকে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামেও ঘনবসতি ক্রমেই বাড়ছে। অনেকের ধারণা, বিভাগীয় শহরে থাকলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। তাই অনেকে গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছেন।

চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষের স্থায়ী নিবাস চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে। একজনের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যাওয়া থেকে শুরু হয়ে সেখানে কয়েকটি পরিবারের স্থায়ী বসবাস গড়ে উঠেছে। ফলে শহরের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে চট্টগ্রামে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণ করতে হচ্ছে ও পানিনিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব দেখা দিচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আইকিউএয়ারের মানসূচক অনুযায়ী চট্টগ্রামের বায়ুর মান ছিল ৯৮, যা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এসব সমস্যার মূল কারণ হলো কর্মসংস্থান প্রধানত ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা এ দুটি শহরের আশপাশে স্থাপন করা হচ্ছে। অথচ সরকার প্রতিটি বিভাগে বড় পরিসরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ফলে এসব জেলায় শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যেমন বরিশাল বিভাগ এখন শিল্পায়নের উপযোগী। এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে বরিশাল বিভাগের মানুষ নিজ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন, ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ওপর চাপ কমবে। এই দুই শহরের জনসংখ্যার চাপ কমাতে ও অভিবাসনের হার নিয়ন্ত্রণে আনতে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে—

১.

প্রতিটি বিভাগে জনসংখ্যার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
২. চাকরির ক্ষেত্রে নিজ বিভাগের আওতাভুক্ত জেলায় পোস্টিং দেওয়া (নিজ জেলা ব্যতীত)।
৩. প্রশাসনিক কার্যক্রম বিভাগীয় পর্যায়ে ভাগ করে দেওয়া, যাতে মানুষকে বারবার ঢাকায় আসতে না হয়।
৪. গ্রামেও শহরের মতো মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
৫. পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের সুযোগ রেখে স্থাপনা নির্মাণ করা।

উল্লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অভিবাসনের হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামকে বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

মুরশিদ আলম
শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনস খ য শহর র বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫ অনুষ্ঠিত

ছবি: আইএসপিআর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিচার তাৎক্ষণিক করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়: প্রধান উপদেষ্টা
  • হজে শিশু সঙ্গী নিষিদ্ধ করল সৌদি আরব
  • চলতি ডিসেম্বরেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে হবে: পানিসম্পদ উপদেষ্টা
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)
  • চট্টগ্রামে ওয়ালটন ব্যাটারির প্রোগ্রাম ‘জোন কানেক্ট ২০২৫’ অনুষ্ঠিত
  • চিকিৎসা পর্যটন সম্পর্ক জোরদারে ‘মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার বাংলাদেশ সপ্তাহ ২০২৫’ আয়োজন
  • ফিলিপস ঝড়ে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল কিউইরা
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)
  • ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫ অনুষ্ঠিত