যবিপ্রবি অধ্যাপক গালিবের বরখাস্ত নিয়ে যা জানা গেল
Published: 9th, February 2025 GMT
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিবকে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রাথমিক তদন্তে বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের ১০৪তম সভায় তাকে এ বরখাস্ত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে যবিপ্রবিতে আওয়ামীপন্থি সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ড.
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হওয়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অমান্য করে নিজের স্ত্রী ডা. নুসরত জাহানকে ৩৫ বছর ১১ মাস বয়সে বিধি বর্হিভুতভাবে নিয়োগ দেন। বিষয়টি সবাই জানলেও তৎকালীন উপাচার্য ও তার ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি কেউ। বিষয়টি ইউজিসিতে তদন্তধীন রয়েছে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ১৪টি লিফট ক্রয় প্রকল্পে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে নিম্নমানের লিফট স্থাপন। এ প্রকল্পে কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। দরপত্রের একাধিক শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪টি লিফটের এ মালামাল সরবরাহ করা হয় বলে জানা যায়।
সূত্র জানায়, ‘মেশিনরুম টাইপ’ এর পরিবর্তে ‘মেশিনরুম-লেস টাইপ’ লিফট সরবরাহ করা হয়। ‘মেশিনরুম টাইপ’ লিফটের দাম ৭০ লাখ টাকার বেশি। এর বিপরীতে ‘মেশিনরুম-লেস টাইপ’ লিফটের দাম প্রায় অর্ধেক। এ ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব। লিফটগুলো স্থাপনের ১ বছরের মধ্যে ১০টি অচল হয়ে পড়ে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এ কাজে কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকদের একটি অংশ।
করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে সহজতর করার লক্ষ্যে যবিপ্রবি প্রশাসন ২০২০ সালের অক্টোবরে নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) চালু করে। প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি এ সফটওয়্যারটি শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি, ক্লাসের রেকর্ডিং ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোডের সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের কোন কাজে আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা এ প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান। এর পেছনে যাবতীয় ব্যায়ের হিসাব পাওয়া যায়নি। যার দায়িত্বেও ছিলেন এ অধ্যাপক। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব বলেন, “শিক্ষার্থীরা অনেকেই ভুল বুঝছে অথবা এর পিছনে ভিন্ন কোন কারণ থাকতে পারে। তবে আমার বিরুদ্ধে যে ডকুমেন্টগুলো রয়েছে, তা বানোয়াট। আমি মনে করি, আমার বিরুদ্ধে কারও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আজকাল তো এআই দিয়ে কত কিছু করা যায় “
স্ত্রীর নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি ও আমার স্ত্রী এখনো নিরপরাধ। সরকার তদন্ত করছে, অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে অপরাধী বলা ঠিক না। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ দিয়েছে। তাহলে আমি অপরাধী হই কীভাবে?”
কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সসীমা ৩০ বছর উল্লেখ থাকলেও তার স্ত্রী ৩৫ বছর ১১ মাস বয়সে যবিপ্রবিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বয়সের শর্ত নিয়ে তিনি বলেন, “এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। সে আবেদন করেছে এবং পরীক্ষা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নিয়েছে।”
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, “সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তাদের নামে দুদকে একাধিক মামলাও চলমান।”
তিনি বলেন, “ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ও যোগসূত্র থাকার প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সম্পূর্ণ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আমরা সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র উপ চ র য বরখ স ত এক ধ ক তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে।
আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।
গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি
বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান
মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।
সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।”
বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ