অভয়নগরে ভৈরব নদে আবারও জাহাজডুবি, এবার ৮৫০ টন ইউরিয়াসহ
Published: 9th, February 2025 GMT
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভৈরব নদে ইউরিয়া সারবোঝাই একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। আজ রোববার ভোরে উপজেলার শুভরাড়া এলাকায় ভৈরব নদে এমভি সেভেন সিজ-৪ কার্গো জাহাজটির তলা ফেটে পানিতে ডুবে যায়। এ সময় জাহাজে প্রায় ৮৫০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ছিল।
ডুবে যাওয়া ইউরিয়া সারগুলো বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) আমদানি করেছে। ঢাকার পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সামিট অ্যাসোসিয়েটস সারগুলোর পরিবহন ঠিকাদার।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা এলাকায় ভৈরব নদে গমবোঝাই এমভি ওয়েস্টার্ন-২ কার্গো জাহাজটি কাত হয়ে পানি ঢুকে নদের পানিতে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় জাহাজে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন গম ছিল।
বিসিআইসি সূত্র জানায়, সাধারণত বিদেশ থেকে বড় জাহাজে করে আমদানি করা ইউরিয়া সার চট্টগ্রাম বন্দরে এবং মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়ায় আনা হয়। সেখানে বড় জাহাজ থেকে ইউরিয়া সার ছোট জাহাজে (কার্গো জাহাজ) করে অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় আনা হয়। নওয়াপাড়ায় কার্গো জাহাজ থেকে নামিয়ে ওই সার ট্রাকে করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বাফার গুদামে নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়া থেকে কার্গো জাহাজ এমভি সেভেন সিজ-৪ ইউরিয়া সার বোঝাই করে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া খেয়াঘাট এলাকায় ভৈরব নদের ঘাটে নোঙর করে। গতকাল শনিবার রাতে শক্ত কোনো কিছুর সঙ্গে তলদেশের আঘাত লেগে কার্গো জাহাজটির তলা ফেটে যায়। এতে জাহাজে পানি উঠতে থাকে। এরপর নদে জোয়ার শুরু হয়। এ সময় জাহাজটি ধীরে ধীরে নদের পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে। আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে জাহাজটি নদের পানিতে তলিয়ে যায়।
এমভি সেভেন সিজ-৪–এর মাস্টার জুয়েল হোসেন বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউরিয়া সারবোঝাই করে রওনা দিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া খেয়াঘাট এলাকায় পৌঁছান তাঁরা। এর পর থেকে থেকে কার্গো জাহাজটি শুভরাড়া খেয়াঘাটের পাশে ভৈরব নদে নোঙর করা ছিল। গতকাল শনিবার জাহাজ থেকে ইউরিয়া নামানোর কাজ শুরু হয়। ৯০০ বস্তা সার নামানো হয়। গতকাল রাত আটটার দিকে নদে ভাটা ছিল। এ সময় নদে পানি একেবারেই কমে যায়। জাহাজের তলদেশ নদের মাটির সঙ্গে ঠেকে ছিল। মাটিতে পাথর কিংবা শক্ত কোনো বস্তু ছিল। জাহাজের তলদেশের সঙ্গে ওই পাথর কিংবা শক্ত কোনো বস্তুর সজোরে আঘাত লাগে। এতে কার্গো জাহাজটির তলদেশ ফেটে যায়। রাত ১২টার দিকে নদে জোয়ার আসতে শুরু করে। এতে জোয়ারের সময় জাহাজে পানি উঠতে থাকে এবং জাহাজটি ধীরে ধীরে নদের পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে। আজ ভোর পাঁচটার দিকে জাহাজটি নদের পানিতে ডুবে যায়। তিনি আরও বলেন, কার্গো জাহাজে পানি ঢুকে অনেক সার ভিজে গেছে। আজ রোববার জাহাজ থেকে প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার নামানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অভয়নগর উপজ ল র র উপজ ল র সময় জ হ জ এল ক য় ইউর য়
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে নারী খুন : পাঁচ মাস পর ভিসেরা প্রতিবেদন থেকে জানা গেল ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা
বাড়ির পাশের বাঁশবাগানের গরুর খাদ্য হিসেবে বাঁশের পাতা সংগ্রহ করতে বেরিয়েছিলেন পঞ্চাশোর্ধ এক গৃহবধূ। এরপর তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকজন। এক দিন পর সন্ধ্যায় বাগানের পাশের একটি বাড়ির শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংক থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
লাশ উদ্ধারের প্রায় পাঁচ মাস পর লাশের ভিসেরা প্রতিবেদন এসেছে পুলিশের কাছে। তাতে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন থেকে গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারীর (৫২) লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ যশোরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে লাশের নমুনা সংগ্রহ করে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সিআইডির খুলনা বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। সম্প্রতি ভিসেরা প্রতিবেদন এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) তৈরির কাজ চলছে।
এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর অভয়নগর থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাঁরা হলেন অভয়নগর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের নিয়ামুল শেখ (২৫), তাঁর বাবা রমজান শেখ (৪৮) ও চাচা ইউনুস শেখ (৪১)। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে নিয়ামুল শেখ কারাগারে আছেন। রমজান শেখ ও ইউনুস শেখ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
আরও পড়ুনসকালে নিখোঁজ, পরের দিন প্রতিবেশীর সেপটিক ট্যাংকে গৃহবধূর লাশ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর স্বামী পেশায় চা বিক্রেতা। এ ছাড়া তিনি শিঙাড়া ও পুরি ভেজে বিক্রি করেন। স্থানীয় বাজারে তাঁর একটি চা এবং সিঙ্গাড়া ও পুরি বিক্রির দোকান আছে। ওই নারী স্বামীর কাজে সহায়তা করতেন। তাঁদের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে বাড়িতে থাকতেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে স্বামী-স্ত্রী দুজনে বাড়িতে সকালের নাশতা খান। দুপুরের খাবার নিয়ে স্বামী দোকানে চলে যান। সকাল নয়টার দিকে ঘরে তালা দিয়ে ওই নারী একটি ঝুড়ি নিয়ে গরু দুটির খাদ্য বাঁশের পাতা সংগ্রহ করতে পাশের বাঁশবাগানে যান। এর পর থেকে তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাঁশবাগানের এক পাশে নিয়ামুল শেখের শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা কিছুটা উঁচু দেখতে পাওয়া যায়। এলাকার কয়েকজন সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা উঁচু করতেই একটি হাত বেরিয়ে আসে। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এরপর উপজেলার ভাটপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে পুলিশ গিয়ে সেপটিক ট্যাংক থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই নারীর লাশের ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর শরীরে ধর্ষণের চিহ্ন রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলার ভাটপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, ওই নারীর লাশের ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এতে ওই নারীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হবে।