গাইবান্ধা শহরের হকার্স মার্কেটে মুরগি কাটেন সাজু মিয়া (৬২)। প্রায় দুই দশক ধরে ক্রেতাদের কেনা মুরগি জবাই করে টুকরা করে কেটে দেন তিনি। এ জন্য মুরগিপ্রতি পারিশ্রমিক পান ২০ টাকা। সারা দিনে মুরগি কেটে তাঁর দৈনিক ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সেই আয় দিয়ে নিজে মাংস কিনে খেতে পারেন না তিনি।

সাজু মিয়া বললেন, ‘পোত্তেক দিন খরোচ বাদে যেকনা ট্যাকা থাকে, তাক দিয়া সোংসার চলব্যার পাচ্চিনে। অসুখ-বিসুখ হলে বিপদোত পড়া নাগে। বাজারোত জিনিসপাতির দাম বাড়ি গ্যাচে। ভাগ্যো ভালো একন সবজির দাম কমি গ্যাচে।’ আক্ষেপ করে বলেন, ‘সারা দিন মানষের কেনা মুরগি কাটি, কিন্তু হামাগরে ভাগ্যোত মুরগির গোশত জোটে না। মাঝেমধ্যে ছোলপোলগুলে মুরগির গোশত খাবার চায়, কিন্তু কিনি খাবার পারিনে।’

সাজু মিয়ার বাড়ি হকার্স মার্কেট-সংলগ্ন শহরের সরকারপাড়া এলাকায়। তিন শতক বসতবাড়ি ছাড়া কোনো সহায়সম্পত্তি নেই। টিনশেড ঘরে বসবাস করেন। বিকেলে হকার্স মার্কেটের মুরগির বাজারে গিয়ে সাজু মিয়াকে মুরগি কাটতে দেখা যায়। মুরগি বিক্রির দোকানে রাখা বঁটি দিয়ে মুরগি কাটছেন। প্রতিদিন সকাল ৭টায় দোকানে আসেন, রাত ১০টা পর্যন্ত চলে কাজকর্ম।

হকার্স মার্কেটে বাজার করতে আসা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘আগে দেখতাম, অন্য জেলার যারা গাইবান্ধায় চাকরি করতেন, তাঁরা সাজু মিয়ার কাছ থেকে মুরগি কেটে নিতেন। এখন স্থানীয়সহ সবাই মুরগি কেনার পর কেটে নিয়ে যান। সাজুর দেখাদেখি মার্কেটে আরও দুই-একজন মুরগি কেটে দিচ্ছেন।

শহরের পলাশপাড়ার চাকরিজীবী বিপাশা খাতুন জানান, প্রায় সাত-আট বছর ধরে সাজু মিয়ার কাছ থেকে মুরগি কেটে নিচ্ছেন। বাসায় গিয়ে পরিষ্কারের পর শুধু রান্না করা। এতে তাঁদের মতো কর্মজীবী নারীদের একটু সুবিধা হয়।

সাজু মিয়ার পাঁচ সদস্যের সংসার। তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে শারমিন খাতুনের বিয়ে হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে আদরি খাতুন চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে সানজিদা খাতুন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সবার বড় ছেলে। তাঁর নাম সাহিদুল ইসলাম (২০)। তিনিও সামান্য বেতনে অন্যের মুরগির দোকানে মুরগি কেনাবেচার কাজ করেন।

সাজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাটা যেকনা কামাই করে, তাক দিয়া ছোট ব্যাটি দুইটের নেকাপড়ার খরোচ চলে। সোংসারোত দিব্যার পায় না। কামাইয়ের চাইতে খরচ বেশি। পোত্তেক দিন বাকিতে খরচ করা নাগে। ছয় মাসোত ম্যালা ট্যাকা দেনা হচে। একন দেনা শোদ করমু, নাকি সোংসারের খরচ করমু চিন্তাত আচি। সরকারি কোনো ভাতা পাইনে।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন শাহ বলেন, ইউনিয়ন বা পৌরসভার মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা প্রদানের জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে তালিকা পাঠানো হয়। সেই তালিকা পাওয়ার পর ভাতা পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। ওই ব্যক্তির ভাতা না পাওয়ার কারণ খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হক র স ম র ক ট

এছাড়াও পড়ুন:

দোল পূর্ণিমায় লালন মাজারে বসছে সাধুসঙ্গ

দোল পূর্ণিমায় লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষ্যে এবারে পবিত্র রমজানের কারণে একদিনের উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে লালন একাডেমি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। 

তবে প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা থাকবে না। শুধু সাধু সঙ্গের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দোল পূর্ণিমায় লালন মাজারের আয়োজন।

রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমির পক্ষ্য থেকে একদিনের লালন স্মরণোৎসব উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান।

বুধবার (১২ মার্চ) দুপুর থেকে একে একে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধু-ভক্ত ও লালন অনুসারীরা এসে জড় হয়েছে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন আঁখড়াবাড়িতে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে সাধুদের নিয়মেই চলবে সাধু সঙ্গ।

এদিন সন্ধ্যা এবং রাতে বাউল ভক্ত ফকিরদের বাল্যসেবা প্রদান করা হবে। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে সাধুদের বৃহস্পতিবার রাতেই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে বলে জানা গেছে।

তিনদিনের পরিবর্তে এবার একদিনের অনুষ্ঠান হলেও সেটাতে সাধুদের নিয়মনীতিতে কোন প্রভাব নেই বলে জানান সাধুরা। তারা তাদের নিজস্ব নিয়ম মেনেই চলে।

এবারে তাদের অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- সন্ধ্যায় বাল্যসেবা, রাখাল সেবা ও পূণ্যসেবা। এছাড়া সাধু-গুরুর ভক্তি ও ভাবের আদান প্রদান।

উল্লেখ্য, বাউল সম্রাট লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতিবছর ভক্ত ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে স্মরণোৎসব পালন করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর দোল পূর্ণিমায় লালন ভক্ত, অনুসারী ও বাউলরা অনুষ্ঠান উদযাপন করে আসছেন।

লালন মাজারে থাকা খোদা বক্স ফকির বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমরা গুরু কার্যে বসব। ভোরে সেহরির পূর্বেই আমরা বাল্য সেবার মধ্য দিয়ে আমাদের কার্যক্রম শেষ করব। তবে যদি কেউ দুপুরে থাকে, তাহলে তারা নিজেদের কাফেলায় নিজেদের উদ্যোগে পূণ্য সেবা নিবে। তবে আমরা সকালেই সবাইকে বিদায় দিয়ে দেব।”

তিনি বলেন, “পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সত্যের বাণি প্রচারের মাধ্যমে আমরা আমাদের মানবতার ধর্ম প্রচার করি। এজন্য কোনো ধর্মের মানুষ কষ্ট পাক এটা আমরা চাই না।”

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জানান, রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমির পক্ষ্য থেকে একদিনের লালন স্মরণোৎসব উদযাপন করা হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ-র‌্যাব এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ