২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ: স্ত্রী-সন্তানসহ বাচ্চুর বিরুদ্ধে ৪ মামলা
Published: 9th, February 2025 GMT
২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার স্ত্রী সন্তানদের বিরুদ্ধে ৪টি পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এসব মামলা করা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি জানিয়েছেন।
মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৫৮ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। চার মামলার মধ্যে তিন মামলায় বাচ্চুকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে হামলার ঘটনায় ২৩৯ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ৩৪
কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন কারাগারে
আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাগুলো করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রথম মামলায় আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার ১৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন এবং ৫৬ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার ২০৭ টাকা কানাডায় পাচারসহ মোট ১২৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার ২৭৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী মিসেস শিরিন আকতার ও শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তৃতীয় মামলায় ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও বাবা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ ৬০৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তার বাবার কাছ থেকে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ২ কাঠা জমি হেবা দলিল থেকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত ৮৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৮ টাকা কানাডায় পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চতুর্থ মামলায় তার মেয়ে শেখ রাফা হাই ও তার বাবা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় শেখ রাফা হাইয়ের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ১৬৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৩ টাকা কানাডায় পাচার ও সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, বাবার কাছ থেকে ৮৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার ৬ কাঠা জমি হেবা দলিল থেকে প্রাপ্ত হয়েও গোপন করেছেন তিনি।
২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক।
সংস্থাটির দায়ের করা মোট ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টি মামলার তদন্তে নতুন আসামি হিসাবে আবদুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালে দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। মামলার দীর্ঘ ৮ বছর পর চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়।
এছাড়া গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেল শুধু আশ্বাসেই
ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রীনিবাস। নানা সময় উচ্চারিত হয়েছে উন্নয়নের বুলি, সভা-সেমিনারে এসেছে প্রতিশ্রুতির পাহাড়—কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ কিংবা নির্ধারিত সময়সীমা। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর জন্য একটি বিকল্প ধারার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ফলশ্রুতিতে গবি গড়ে উঠলেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রী অধ্যয়নরত, যাদের অধিকাংশ সবাই বাসা ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। আবাসন না থাকায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকতে গেলে এসব শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারে শিক্ষার্থীদের উপর আলাদাই চাপ তৈরি হচ্ছে, যা বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার।
পাশাপাশি রাতে চলাচলের ঝুঁকি, স্থানীয় বাড়িওয়ালা কর্তৃক হেনস্তার শিকার, ইভটিজিংসহ নানা অপ্রিতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিকবার আবাসন ব্যবস্থা ‘প্রক্রিয়াধীন’ বললেও তা নিয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।
পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অভাবেই হল নির্মাণে নীতিনির্ধারকেরা কালক্ষেপণ করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আমিন বলেন, “আমার প্রতিদিনের যাত্রাটা যুদ্ধের মতো। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ কিমি দূরে। প্রতিদিন লোকাল বাসে চেপে আসতে হয়। কখনো বাসে উঠতে দেয় না, কখনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কখনো বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। নতুন এলাকায় বাসা খুঁজে থাকা কষ্টকর, পরিবারও চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। ক্লাসে মন দিতে পারি না। এ বয়সে বাসা ভাড়া, রান্নাবান্না, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে জীবনটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা ছাত্রী হল থাকলে অন্তত এ লড়াইটুকু করতে হতো না।”
ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ তন্বী বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কিন্তু এর আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রী ছিলাম। জানি, মেয়েদের জন্য এখানে পড়তে আসা মানে প্রতিনিয়ত এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ। একটা সময় পরে মেয়েরা ক্লাস বাদ দেয়, টিউশন নেওয়া বাদ দেয়—শুধু নিরাপত্তার জন্য।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল ক্যাম্পাসে জায়গার অভাব নেই, ইচ্ছার অভাবটাই বড়। ছাত্রীনিবাস শুধু দরকার নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। এতে ছাত্রীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে, দূর থেকে আরও শিক্ষার্থীরা আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “হলের জন্য স্থান সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।”
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী