বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
Published: 9th, February 2025 GMT
দিল্লিতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ঘিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে গুঁড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা। ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো উচিত বলে মন্তব্য করে ভারত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভারতের এমন প্রতিক্রিয়া ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ রোববার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন।
রফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এ বিষয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি মন্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য করা অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা প্রতিবেশী দেশটিতে নানা ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি হতে দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয় না। অন্যদের কাছ থেকেও বাংলাদেশ একই বিষয় প্রত্যাশা প্রকাশ করে।’
দিল্লিতে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রমাগত মিথ্যা, বানোয়াট মন্তব্য ও বিবৃতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তাঁর হাতে একটি প্রতিবাদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলবের এক দিন পর শুক্রবার দিল্লিতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে দিল্লি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ নমন
এছাড়াও পড়ুন:
ঈশ্বরদীর অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি লিচুর মুকুল
লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।
সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।