ফতুল্লায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা খুন : আকতার, সুমনসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা
Published: 9th, February 2025 GMT
ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছা সেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মামুন হোসেন হত্যা ঘটনায় যুবলীগ ক্যাডার আকতার ও সুমনের নাম উল্লেখ্য সহ ১৩ জনকে আসামি করে নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
নিহতের একদিন পর শনিবার রাতে নিহতের স্ত্রী ১৩ জনের নাম উল্লেখ্য সহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জন কে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- আকতার, সুমন, রতন ওরফে রাখাল রতন,শাওন হাসান, রাকিব প্রধান, রাব্বিল, নয়ন ওরফে কিলার রতন, শাহ আলম, সোলেয়মান, জয়নাল, রাসেল,গোলাম রাব্বি হৃদয় ও আরব আলী সর্দারসহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জন।
নিহতের স্ত্রী জানায়, ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেবর রেললাইন বটতলা এলাকায় তার স্বামী মামুনের নেতৃত্বে সন্ত্রাস, মাদক ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে যুবলীগ ক্যাডার আকতার-সুমন ও তার সহোযোগি সন্ত্রাসীরা গুলি করে। সে যাত্রায় মামুন বেঁচে যায়।
তখন থেকেই আক্তার ও সুমন তার স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে থাকে। সেই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তার স্বামীকে আক্তারের নাম করে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে অপর আসামিরা।
এদিকে হত্যাকান্ডের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
নিহত মামুন ফতুল্লা মডেল থানার পূর্ব লালপুর রেললাইনের মৃত সুমন ব্যাপারির প্ত্রু। নিহত মামুন তাদের পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। মামুনের ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ১০ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান আছে।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানায়, নিহতের স্ত্রী মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আক্তার- সুমন সহোদরেরা শামীম ওসমানের আর্শীবাদে বিগত ১৫ বছর কুতুবআইল এলাকায় রাজ করে বেড়িয়েছে । তারা দুই ভাই নিজেদের শিল্পপতি হিসেবে পরিচয় দিলেও স্থানীয়রা তাদের সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে চিনেন।
তাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে খুন হয় ডাইং ব্যবসায়ী সোলায়মান, বীর মুক্তিযুদ্ধা গিয়াস উদ্দিন। তাদের জমি দখল করতে গিয়ে নিজের বন্ধুকের গুলিতে মৃত্যু হয় নজরুল ইসলামের। আক্তার সুমন সহোদরের পালিত সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠে।
স্থানীয়রা জানান, ফতুল্লাবাসী সবাই জানেন আক্তার সুমন সহোদর সন্ত্রাসীদের গডফাদার। কিন্তু প্রশাসন তাদের সব বিষয়েই ছাড় দিয়ে যায়। তবে কয়েক বছর আগে র্যাবের হাতে তারা দুই সহোদর মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: য বল গ ন র য়ণগঞ জ আকত র
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় তিন দিনে তিন শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলায় আসামি স্বজনেরা
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর পাঁচ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসমানী বেগম (ছদ্মনাম)। জীবিকার তাগিদে কাজ নেন আশুলিয়ার একটি তৈরি পোশাক কারখানায়। তবে স্বামী বাসায়ই থাকেন, সঙ্গে থাকে আসমানীর আগের সংসারের দুই মেয়ে। এর মধ্যে ১৪ বছর বয়সী মেয়েটিকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আসমানীর স্বামীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী কিশোরীর মা আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় আসমানীর দ্বিতীয় স্বামীকে (৪০) গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই ব্যক্তির বাড়ি ফরিদপুরে।
আশুলিয়া থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে গত তিন দিনে তিনটি মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছর। প্রতিটি মামলায় আসামিরা ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য কিংবা নিকটাত্মীয়। তিনটি মামলায় দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যিনি ধর্ষণ করেন, তিনি একদিনে ধর্ষক হয়ে ওঠেন না বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে পরিবারের সদস্য রয়েছে। পরের পর্যায়ে রয়েছে নিকটাত্মীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে পরিচিত লোক। একদম অপরিচিত লোকের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা খুবই কম। যিনি ধর্ষণ করেন, তিনি একদিনে ধর্ষক হয়ে ওঠেন, এমন নয়। এ মনটা তাঁর তৈরি হয় ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, নারীদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে। ধর্ষণের আগে একজন ধর্ষককে নারীদের হেনস্তা বা উত্ত্যক্ত করা, যৌন নিপীড়ক ও ইভটিজার হতে হয়।
ধাপে ধাপে ধর্ষক হয়ে ওঠার এই বিষয়টির ওপর নজর দিতে হবে উল্লেখ করে রেজওয়ানা করিম আরও বলেন, ‘সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নির্লিপ্ত ভূমিকায় থাকে। সিনেমাগুলোয় দেখানো হচ্ছে চাইলেই একটা মেয়েকে শিস দেওয়া যায়, ওড়না ধরে টান দেওয়া যায়, যখন–তখন তার হাত ধরে ফেলা যায়। কিন্তু নারী বা পুরুষ কারও গায়ে স্পর্শ করার ক্ষেত্রে যে সম্মতি লাগে, এই ভাষা এখনো আমরা শিখতে শুরু করিনি। যদি এই শিখনপ্রক্রিয়ার মধ্যে না ঢুকি, তাহলে আমরা ধর্ষণ থামাতে পারব না। গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে গণসচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত কাজ করতে হবে।’
১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী ধর্ষণের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসমানী বেগম (ছদ্মনাম) দিনের বেলায় কাজে গেলে দুই মেয়েকে তাঁর দ্বিতীয় স্বামী দেখাশোনা করতেন। প্রায় এক বছর আগে বড় মেয়েকে (১৪) হত্যার হুমকি দিয়ে প্রথমবার ধর্ষণ করেন তিনি। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কৌশলে ওই কিশোরীকে আবার ধর্ষণ করেন তিনি। গতকাল বুধবার পারিবারিক বিষয়ে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদে সৎমেয়েকে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন ওই ব্যক্তি। ভুক্তভোগী কিশোরীও বিষয়টি তার মাকে জানায়। পরে প্রতিবেশীরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে আশুলিয়া থানা–পুলিশকে বিষয়টি জানান। আজ ভুক্তভোগী কিশোরীর মা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা দায়ের করলে সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে ১০ বছরের সৎমেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গতকাল দিবাগত রাতে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আরেকটি মামলা হয়। ভুক্তভোগী শিশুর মা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ১০ বছর আগে তাঁর প্রথম স্বামী ক্যানসারে মারা যান। তিন মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। একপর্যায়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে সাভারের একটি আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। গত রোববার রাতে সৎবাবা (৪০) ঘুম থেকে ডেকে তুলে মেয়েকে (১০) ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। শিশুটির চিৎকারে বাসার অন্যরা সেখানে গেলে ওই ব্যক্তি শয়নকক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। সকালে তিনি কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় গতকাল দিবাগত রাতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিশুর মা।
এদিকে আশুলিয়ার আরেকটি এলাকায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গত মঙ্গলবার মামলা হয়েছে। শিশুটির বাবার করা মামলায় আসামি হয়েছেন দূরসম্পর্কের চাচা (১৯)। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শিশুটি মা–বাবার সঙ্গে আশুলিয়ায় থাকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে আসেন শিশুটির এক চাচা (বাবার মামাতো ভাই)। গত সোমবার সকালে শিশুটির মা–বাবা দুজনই বাসা থেকে কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে বের হয়ে যান। তখন শিশুটিকে ধর্ষণের পর ওই তরুণ (১৯) পালিয়ে যান। পরে শিশুটির বাবা আশুলিয়া থানায় ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে গতকাল কেরানীগঞ্জ থানার বনগ্রাম এলাকা থেকে ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব–৪, সিপিসি–২ ও র্যাব–১০–এর সদস্যরা।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক দিনে ধর্ষণের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর মামলার আসামিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে ঘটনা ঘটলে ও সমস্যা হতে পারে মনে হলেই পুলিশকে জানাতে হবে।