জাহিদ মালেক ও নাইমুল ইসলামসহ ৬ জনের আয়কর নথি জব্দ
Published: 9th, February 2025 GMT
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তার ছেলে রাহাত মালেক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, তার স্ত্রী নাসিমা খান মন্টিসহ ছয়জনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন।
আজ রোববার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক ছয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
আয়কর নথি জব্দ হওয়া অন্যরা হলেন- কোয়ালিটি মিল্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম এবং সাবেক কানুগগো আবুল হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় তাদের আয়কর নথি জব্দের আদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভোক্তার ওপর আর বোঝা নয়
সোমবার প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। অন্যান্য সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে।
দুটো খবরের মর্মার্থে খুব ফারাক নেই। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা বাড়াতে চেয়ে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেয়। ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ মার্চ। দাম বাড়াতে চাওয়ার কারণ এটাই।
বিষয়টি নিয়ে ৬ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পরিশোধন কারখানার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। পরবর্তী বৈঠক আজ হওয়ার কথা।
৮ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ছয় মাস ধরে ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। লম্বা সময় এ ধরনের সুযোগ বজায় রাখার বাস্তবতা এনবিআরের নেই।
এই পটভূমিতে ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রোববার ট্যারিফ কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে নতুন দর নির্ধারণের কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে ১৮৯ টাকা হচ্ছে, যা এত দিন ১৭৫ টাকা ছিল। আর পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম হচ্ছে ৯২২ টাকা, যা আগে ছিল ৮৫২ টাকা ছিল। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম ১৬৯ টাকা, যা ছিল ১৫৭ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল আছে। মার্চ মাসে সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমেছে। এমন সময়ে দেশীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে শুল্কছাড় প্রত্যাহারের কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে এনবিআরের দাবি, অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর রেয়াত দেওয়ার সুযোগ নেই। অবস্থা দাঁড়িয়েছে, এনবিআর আমদানি কর বাড়াবে আর ব্যবসায়ীরা সেই কর বৃদ্ধির বোঝা চাপাবেন ভোক্তাদের ওপর।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে রোজার আগে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৬–১৭ টাকা বাড়িয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বোতলের তেলও নির্ধারিত দামে পাওয়া যায়নি।
চাল, ডাল, আটার মতো ভোজ্যতেল ও চিনি অপরিহার্য খাদ্যপণ্য। এ ধরনের পণ্যকে রাজস্ব আদায়ের হাতিয়ার করা সমীচীন নয়। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর প্রয়োজন হলে বিত্তবানদের কাছ থেকে আরও বেশি বেশি আয়কর নিতে পারে। বিভিন্ন মহল থেকে আয়করের সীমা বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছিল। এনবিআর সেদিকে না গিয়ে আমদানি পণ্যের ওপর কর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে।
রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক–করের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। প্রত্যক্ষ কর, অর্থাৎ আয়কর বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক–করের হার বেশি। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত শুল্ক ও করনীতির পুনর্মূল্যায়ন করা। যেসব পণ্যের দাম বাড়ালে গরিব ভোক্তাসাধারণের ওপর বেশি চাপ পড়ে, সেসব পণ্য শুল্ক–করমুক্ত রাখতে হবে। কারণ, এখনো মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধির হার কম এবং কর্মসংস্থান যথেষ্ট তৈরি হচ্ছে না। মানুষের আয়রোজগার পরিস্থিতি ভালো নয়।
সিদ্ধান্তের আগে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর আগাম ঘোষণা দেওয়া ঠিক হয়নি বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা যে মন্তব্য করেছেন, (প্রথম আলোর প্রতিবেদনে), আমরা তার সঙ্গে পুরোপুরি একমত। এ ধরনের আগাম ঘোষণা বাজারকে কেবল অস্থিতিশীলই করবে না, কৃত্রিম সংকটও তৈরি করতে পারে।
আমরা আশা করব, আজকের বৈঠকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হবে না, যাতে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। আশা করি, এনবিআর তথা সরকার ভোক্তাসাধারণের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেবে।