হাতিয়া থেকে অস্ত্রসহ ৫ সন্ত্রাসী আটক
Published: 9th, February 2025 GMT
অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপকূল থেকে নৌবাহিনী কর্তৃক বিশেষ অভিযান চালিয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ পাঁচ সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ যৌথভাবে এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হাতিয়া উপজেলার ৫নং চর ঈশ্বর ইউনিয়নের কুখ্যাত চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ, আব্দুল মাজেদ পলাশ, আব্দুল জাহের পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম রাফসান ও আবুল কালাম বিটুকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আটক করা হয়।
আটকের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে হাতিয়ায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তারা ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
আটকের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আটককৃত সন্ত্রাসী ও উদ্ধারকৃত অস্ত্রসমূহ পরবর্তীতে হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দায়িত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে।
ঢাকা/রেজাউল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঈশ্বরদীর অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি লিচুর মুকুল
লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।
সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।