দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ব্লেড দিয়ে শ্বশুরের গোপনাঙ্গ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুত্রবধূ ফাতেমা বেগমের বিরুদ্ধে। 

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বিহারিমপুর গুচ্ছগ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় রাতেই ওই গৃহবধূকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ।

গুরুতর আহত শাহ জামাল প্রামাণিক (৬৫) বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাড়ি উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহীমপুর গুচ্ছ গ্রাম এলাকায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হক।

ছেলের বউ ফাতেমা বেগম বলেন, “১৫ বছর আগে মনির প্রামাণিকের সাথে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে একই ইউনিয়নের বারোপাইকার গড় এলাকায় তিন সন্তান নিয়ে স্বামীর বসতবাড়িতে বসবাস করছিলাম। আমার স্বামী পেশায় একজন শ্রমিক। সেখানে থাকা অবস্থায় স্বামী প্রায় দুই-তিন লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দুই মাস আগে আমার স্বামী সেই বাড়ি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেন। পরে থাকার জায়গা না থাকায় শ্বশুর তার নিজের বাড়িতে আমাদের নিয়ে আসেন এবং রান্না ঘরের এক পাশে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।”

তিনি আরো বলেন, “সে সময় থেকে আমার স্বামী তিন সন্তানসহ আমাকে রেখে কাজের জন্য অন্য জেলায় চলে যান। তার কিছুদিন পর থেকে শ্বশুর- শাশুড়ির সাথে থাকার জায়গা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতো এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলতেন। প্রায়ই আমার সাথে অনৈতিক কাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতো। সাত দিন আগে আমার স্বামী মনির বাড়ি ফিরে আসেন। এ নিয়ে গত তিনদিন ধরে অশান্তি চরম আকার ধারণ করে। গতকাল শনিবার রাতে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ঝগড়ার এক পর্যায়ে শ্বশুর শাহজামাল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এরপর আমাকে টেনে শোবার ঘরে নিয়ে যায় এবং অনৈতিক কাজ করার চেষ্টা করে। সেসময় আগে থেকে নিজের কাছে রাখা ব্লেড দিয়ে শ্বশুর শাহজামালের পুরুষাঙ্গ কেটে দিই।”

ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আহসান হাবীব বলেন, “শনিবার রাত পৌনে ১০টায় আহত শাহজামাল প্রামাণিককে তার পরিবারের লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তার পুরুষাঙ্গের গোড়ার দিকের প্রায় ৪ সেন্টিমিটার অংশ কেটে গেছে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। পুরুষাঙ্গে আটটি সেলাই দেয়া হয়েছে। তিনি এখন পর্যবেক্ষণে আছেন।”

এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, “ঘোড়াঘাট উপজেলার বিরাহিমপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় শাহজামাল প্রামাণিক নামের এক ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ কেটে দেয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আহত শাহজামাল প্রামাণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহজামাল প্রামাণিকের ছেলের স্ত্রীকে থানায় নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত থানা কোন অভিযোগ হয়নি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।”

ঢাকা/মোসলেম/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ য কমপ ল ক স আম র স ব ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩৪, ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বললেন ট্রাম্প

ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৪ জন নিহত এবং ১১৭ জন আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা। রাশিয়ার প্রাণঘাতী এই হামলার সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার মধ্যরাতে সুমি শহরের কেন্দ্রস্থলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং কংগ্রেস সেন্টারের কাছে বিস্ফোরিত হয়। রক্তাক্ত মৃতদেহ রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদাম ধ্বংস

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূতের ৪ ঘণ্টা বৈঠক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন, অন্যদিকে জার্মানির সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছেন।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রুশ বাহিনী কাছাকাছি সীমান্তের ওপারে একটি বড় হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই হামলাটি এমন এক সময় ঘটল, যখন ইউক্রেনের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের নেতৃত্বে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চতুর্থ বছর চলছে।

ট্রাম্প ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকরা রাশিয়ার হামলা সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটি ভয়াবহ ঘটনা এবং আমাকে বলা হয়েছে যে তারা ভুল করেছে।” কিন্তু ট্রাম্প এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

রোববার জেলেনস্কি রাশিয়ার আক্রমণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তার দেশ সফর করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেনীয় নেতা মার্কিন টেলিভিশন সিবিএসে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দয়া করে, যেকোনো ধরনের আলোচনার আগে, যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সামরিক ও বেসামরিক মানুষের ওপর রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ এবং হাসপাতাল ও গির্জায় ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে আসুন।”

ফ্রিডরিখ মের্জ, যিনি আগামী মাসে জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি জার্মানির সরকারি টেলিভিশন এআরডিকে বলেছেন, ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়া যে ধরণের হামলা চালিয়েছে তা একটি ‘গুরুতর যুদ্ধাপরাধ’।

জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেছেন, এই হামলাটি ‘শান্তির জন্য রাশিয়ার কথিত প্রস্তুতির আসল রূপ উন্মোচন করেছে’।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাশিয়াকে ‘মানবজীবন, আন্তর্জাতিক আইন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, “রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ফ্রান্স তার অংশীদারদের সঙ্গে এই লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।”

আক্রমণটিকে ‘বর্বর’ বলে বর্ণনা করে ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, “আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন করে রাশিয়া আগ্রাসী ছিল এবং এখনও আছে।”

তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। হামলা বন্ধ না হওয়া এবং ইউক্রেনের শর্তাবলী অনুসারে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপ অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে এবং রাশিয়ার ওপর শক্তিশালী চাপ বজায় রাখবে।”

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পেয়ে জাতিসংঘ প্রধান ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং হতবাক’।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক বস্তুর ওপর আক্রমণ নিষিদ্ধ।” তিনি আরো বলেন, “এই ধরনের যেকোনো আক্রমণ, যেখানেই ঘটুক না কেন, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”

রবিবারের জোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল চলতি বছরে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ।

চলতি মাসের শুরুতে ৪ এপ্রিল ইউক্রেনের ক্রিভি রিহ শহরে আরেকটি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২০ জন নিহত এবং ৬১ জন আহত হন। সেসময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল যে, তারা একটি রেস্তোরাঁয় ‘ইউনিট কমান্ডার এবং পশ্চিমা প্রশিক্ষকদের’ একটি সভা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

তবে এর স্বপক্ষে রাশিয়া কোনো প্রমাণ সরবরাহ করেনি ।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ