বাইক্কা বিল ঘুরে পর্যটক নিরুৎসাহিত করার কথা বললেন মৎস্য উপদেষ্টা
Published: 9th, February 2025 GMT
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল ঘুরে বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম–সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সভায় মাছের আসা–যাওয়া বন্ধে বিলের যত্রতত্র দেওয়া জালের ব্যবহার বন্ধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিলে পর্যটক নিরুৎসাহিত করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
রোববার সকালে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশগ্রহণের আগে মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বাইক্কা বিলের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
মতবিনিময় সভায় ফরিদা আখতার বলেন, ‘এখানে এসে একটা কথা শুনে কষ্ট লাগল, হাওরে নেট (জাল) দিয়ে মাছের আসা-যাওয়া বন্ধ করা হয়। আপনারা মাছকে বাইক্কা বিল থেকে যেতে দিচ্ছেন না, ফিরতে দিচ্ছেন না; এটা অন্যায়। বাইক্কা বিলে সব ধরনের নেটের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বাইক্কা বিলে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হবে।’
বাইক্কা বিলকে মাছের বীজতলা উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বাইক্কা বিলে যে পানি থাকে, সেখানে মাছের প্রজনন ঘটে। বর্ষায় সেই মাছ বাইক্কা বিল হয়ে ১৩২টি বিলে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় মৎসজীবীরা বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের কারণে যত্রতত্র বাঁধ ও জালের ব্যবহার করায় বিলের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটছে। বিলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী ছাড়া কাউকে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে না। তিনি বাইক্কা বিলে মাছের প্রজনন বাড়াতে চিহ্নিত এলাকায় খননকাজ চালানোর আশ্বাস দেন।
ফরিদা আখতার আরও বলেন, বাইক্কা বিলের আশপাশে জলা-জঙ্গলে বৈচিত্র্যময় পাখির বসবাস। পর্যটকদের পদচারণে বিলের মাছ, পাখি ও জীব–প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পর্যটকদের চলাফেরা, হইচই পাখিদের আতঙ্কিত করে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাঁরা সেখানে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন।
মৎস্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বিদেশি অর্থায়নে প্রকল্প করার চিন্তা করবেন না। কারণ, বিদেশি অর্থ একপর্যায়ে শেষ হবেই। তারা সারা বছর অর্থ দিক, এটাও তাঁরা চাইতে পারেন না। এ জন্য নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। হাওরের বিভিন্ন কাজে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ নিজেরাই রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, ‘একটি ছোট দাবি থেকে তরুণেরা দেশের বৈষম্য দূর করতে চলে গেছে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা প্রাণ দিয়েছে, হাজার হাজার তরুণ আহত হয়েছে। তাদের কথা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দেশের তরুণদের জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে।’
মতবিনিময় সভায় মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মৎস য উপদ ষ ট আখত র
এছাড়াও পড়ুন:
সাজেকে হোটেলের কক্ষ না পেয়ে বারান্দা-ক্লাবঘরে রাত কাটালেন ৪০০ পর্যটক
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই ভ্যালিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। গতকাল শুক্রবার সাজেক ভ্রমণে গিয়ে হোটেলের কক্ষ না পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে দুই শতাধিক পর্যটককে। অন্তত ৪০০ পর্যটককে রাত কাটাতে হয়েছে সাজেকের বিভিন্ন হোটেলের বারান্দা, স্থানীয় ক্লাবঘর ও বাড়িঘরে। সাজেকের মতো গতকাল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল রাঙামাটি শহর, কাপ্তাইসহ জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রেও।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা ও বেলা সাড়ে তিনটা—এই দুই দফায় চার শতাধিক জিপ ও পিকআপ ভ্যান নিয়ে পর্যটকেরা সাজেক ভ্রমণে যান। এর বাইরে পাঁচ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পর্যটকেরা সাজেক ভ্রমণে গিয়েছেন। এসব যানবাহনে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ছয় হাজারের মতো। সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে ১১৫টি হোটেল-রিসোর্ট-কটেজে পর্যটকের ধারণক্ষমতা চার থেকে সাড়ে চার হাজার। ফলে হোটেলের কক্ষ না পেয়ে অনেক পর্যটককে ফিরতে হয়েছে। কিছু পর্যটক স্থানীয় হোটেল-রিসোর্টের বারান্দা, ক্লাবঘর, বাসিন্দাদের বাড়িঘরসহ যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন, সেখানেই রাত কাটিয়েছেন।
সাজেকে রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির হয়ে পর্যটকদের হিসাব রাখেন মতিজয় ত্রিপুরা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যটকদের প্রায় ৯০ শতাংশই আগেই হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন। অন্যরা সাজেকে আসার পর কক্ষ ভাড়া নিতে শুরু করেন। তবে গতকাল সন্ধ্যায় কক্ষ না পেয়ে পর্যটকদের হইচই শুরু হয়। একপর্যায়ে আমরা তাঁদের বলি নাম জমা দিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ১৫০ জনের নাম জমা পড়ে। এরপর আমরা আর নাম তালিকাভুক্ত করিনি। ওই ১৫০ জনকে বিভিন্ন ক্লাব ও স্থানীয়দের বাড়িঘরে তুলে দিয়েছি।’ মতিজয় আরও বলেন, রুইলুই পাড়া ও কংলাক পাড়ার অনেক বাসিন্দা নিজ উদ্যোগে পর্যটকদের নিজেদের বাড়িঘরে নিয়ে গেছেন। সব মিলিয়ে চার শতাধিক পর্যটক হোটেলের কক্ষ না পেয়ে গতকাল বাইরে রাত কাটিয়েছেন।
সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুর্পণ দেব বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সাজেক ভ্রমণে এসেছেন। আমরা কয়েক শ পর্যটককে কক্ষ ভাড়া দিতে পারিনি। অনেক পর্যটক বারান্দায়, মানুষের বাড়িঘরে, যে যেভাবে পারেন রাত কাটিয়েছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে দুই শতাধিক পর্যটককে।’
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাঙামাটি শহর, পলওয়েল পার্ক, কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রেও পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। পর্যটকদের পদচারণে মুখর ছিল রাঙামাটি শহর। পর্যটকবাহী যানবাহন বাড়ার কারণে রাঙামাটি শহরের বনরূপা-রিজার্ভ বাজার, রিজার্ভ বাজার-তবলছড়ি ও আসামবস্তি-রাঙাপানি সড়কে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট দেখা দেয়। শহর ও এর আশপাশের সব হোটেল-রিসোর্টের কক্ষ খালি ছিল না।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যান্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনের তুলনায় গতকাল পর্যটকের আনাগোনা অনেক বেশি ছিল। আমাদের কমপ্লেক্স ও কটেজগুলোতে কোনো কক্ষ খালি নেই। গতকাল ছয় হাজারের বেশি মানুষ ঝুলন্ত সেতু দেখতে গিয়েছেন। অন্যান্য ছুটির দিনে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক যেতেন।’