অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহাসিক সময়ের সংবাদ, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা নিয়ে বই ‘সন্ধিক্ষণের সংবাদ’। ২০টি অধ্যায় ও চারটি পরিশিষ্ট নিয়ে রচিত ১৯২ পৃষ্ঠার এ বইয়ে দুষ্প্রাপ্য সংবাদ, সংবাদপত্র ও ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ফলে বইটি সাংবাদিকতার ইতিহাস অধ্যয়নের আকর গ্রন্থ হয়ে উঠেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মো.

মিনহাজ উদ্দীন ও সাংবাদিক সাইফুল সামিন যৌথভাবে বইটি রচনা করেছেন। প্রকাশ করেছে পলল প্রকাশনী।

বইয়ের অধ্যায়গুলো সাজানো হয়েছে সংবাদপত্রে ব্রিটিশবিরোধিতা, ভাষা আন্দোলন, ৭ মার্চ, ২৫ মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তরের চিত্র সাংবাদিকতার মতো বিষয়গুলো দিয়ে। এ ছাড়া ১৯৭৫ সালের ঘটনা প্রবাহের সংবাদ ও সাংবাদিকতা নিয়ে আছে একাধিক অধ্যায়। এর মধ্যে আছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা, ৩ ও ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান।

আরো পড়ুন:

বইমেলায় ইশরাত জাহান ঊর্মির ‘অন্যপক্ষ’

বইমেলার ৮ম দিনে ১০২ নতুন বই প্রকাশিত

অধ্যায়গুলোতে যুক্ত করা হয়েছে ঐতিহাসিক ছবি, যা বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে। চারটি পরিশিষ্টে ভারতবর্ষের সাংবাদিকতার জনক জেসম অগাস্টাস হিকি ছাড়াও আবুল মনসুর আহমদ, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও কুলদীপ নায়ারকে নিয়ে বিষদ আলোচনা আছে। 

গ্রন্থটি বিভিন্ন সময়ের সংবাদ ও সাংবাদিকতার চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি ঐতিহাসিক রিপোর্ট পাঠকের জন্য তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকার বুকের সংঘঠিত জেনোসাইড নিয়ে বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক সায়মন জন ড্রিং এর প্রতিবেদন, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ নিয়ে দ্য নিউইউর্ক এর প্রতিবেদন।

বইটির লেখক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দীন বলেন, “বাংলাদেশের সংবাদপত্র নামে অসাধারণ একটি বই আছে সুব্রত সংকর ধরের। কিন্তু বইটির পরিসর ছোট, মাত্র ১১৪ পৃষ্ঠা। তা ছাড়া ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশিত এ বইয়ে কোন ছবি নেই।”

তিনি বলেন, “সংবাদপত্রের ইতিহাস পাঠের সঙ্গে যদি প্রাসঙ্গিক ছবি থাকে, তা শিক্ষণ প্রক্রিয়ার জন্য ভালো। সেই ধারণা থেকে এই বইয়ে দুষ্প্রাপ্য অনেক ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে সুব্রত সংকর ধরের গ্রন্থটিতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আলোচিত হয়েছে। সেখানে এ গ্রন্থে আমরা ১৯৭১ সাল-পরবর্তী বেশ কয়েকটি অধ্যায় যুক্ত করেছি।”

গ্রন্থটির অপর লেখক সাইফুল সামিন বলেন, “মো. মিনহাজ উদ্দীন ও আমি একসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়েছি। মিনহাজের ইতিহাসের প্রতি ঝোঁক প্রবল। আমারও আগ্রহ আছে। সেই ভালোলাগা থেকেই দুজন মিলে এ গ্রন্থের পরিকল্পনা করি।”

তিনি বলেন, “বইটির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি এমন একটা গ্রন্থ রচনা করতে, যাতে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হন। তারা যাতে একটি গ্রন্থের মধ্যে অনেক কিছু পেয়ে যান। ভবিষ্যতে গ্রন্থটিতে আরও কয়েকটি অধ্যায় যুক্ত করে বড় পরিসরে প্রকাশ করার ইচ্ছে আমাদের রয়েছে। আমরা এটিকে সাংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ইতিহাস নিয়ে একটি পরিপূর্ণ বই হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।”

পলল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির দাম রাখা হয়েছে ৫৪০ টাকা। ২৫ শতাংশ ছাড়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে আগ্রহীরা বইটি কিনতে পারবেন। গ্রন্থ মেলায় পলল প্রকাশনীর স্টল নম্বর ১২৬ -১২৭।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব দপত র ব দ কত র য ক ত কর বইট র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউএপিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মরণে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিযোগিতা

প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মরণে প্রথমবারের মতো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-বিষয়ক প্রতিযোগিতা─‘জেআরসি মেমোরিয়াল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনটেস্ট: CENOVUS 1.0’ গত শনিবার (১২ এপ্রিল ২০২৫) অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) পুরকৌশল বিভাগের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস ফোরাম (সিইএসএফ) এ আয়োজন করেছিল। আয়েোজনে অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে ছিল প্রথম আলো। দিনব্যাপী এই আয়োজনে সারা দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ধাপ ও পর্বে নিজেদের নিবন্ধন অনুযায়ী অংশগ্রহণ করেছেন। এই আয়োজনে দেশব্যাপী পুরকৌশল শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় মুখর ছিল ইউএপির নিজস্ব ক্যাম্পাস।

শনিবার সকাল ৯টায় এই চমৎকার আয়োজনের পর্দা ওঠে এবং বিকেলে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের স্বনামধন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যক্তিত্ব ও ইউএপির ইমেরিটাস অধ্যাপক এম শামীম জামান বসুনিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান স্থপতি মাহবুবা হক, উপাচার্য কামরুল আহসান, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন জি আর আহমেদ জামাল, পুরকৌশল বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নেহরীন মাজেদসহ অন্য সম্মানিত ফ্যাকাল্টি সদস্যরা। পুরো অনুষ্ঠানের থিমজুড়ে এবং আলোচনা সভায় প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্মরণে বিশেষ আলোকপাত করা হয়।

CENOVUS 1.0 পুরকৌশল দক্ষতাবিষয়ক মোট সাতটি পর্ব—ট্রাসেল ম্যানিয়া, গণিত অলিম্পিয়াড, পোস্টার বোর্ড, মেকানিকস মাস্টার, ক্যাড সুপারিয়র, ফটোনোভাস ও কুইক বাজ আয়োজিত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন পর্ব মিলিয়ে সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতার মোট প্রাইজমানি নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই আয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন পর্বে অসামান্য দক্ষতা দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন যথাক্রমে ডুয়েটের মো. জামিল মাহমুদ আবদুল্লাহ (মেকানিকস মাস্টার-সিনিয়র) ও টিম ট্রাফিক ট্রেকটিসিয়ানস মো. জাকির হোসেন (পোস্টার বোর্ড), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইফতেখারুল ইসলাম মুন্না (ফটোনোভাস), কুয়েটের আবিদ হাসান (গণিত অলিম্পিয়াড), সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের টিম ব্রিজ ব্লিন্ডার্স মো. এহসানুল হক, মো. হৃদয় হোসেন ও মো. শাফিউল আলম শুভ (ট্রাসেল ম্যানিয়া) এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের সাইদুর রহমান (অটোক্যাড), সাইমুম হাসান (মেকানিকস মাস্টার-জুনিয়র), টিম নো ব্রেইনারসের মো. কামরুল হাসান হৃদয় ও মো. মিজানুর রহমান (কুইজ)। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও প্রাইজমানি তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বিশেষ আলোচনা সভা ও শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারকে স্মরণে রেখে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধান অতিথি ও দেশবরেণ্য পুরকৌশল ব্যক্তিত্ব, ইউএপি সিভিলের ইমেরিটাস অধ্যাপক শামীম জামান বসুনিয়া বলেন, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পুরকৌশল প্রতিযোগিতার চিন্তাভাবনা জে আর সি স্যার দেন আরও ৮-১০ বছর আগে। সেই অনুসারেই তাঁর স্মরণে ইউএপিতে এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। জে আর সি স্যার বলে গেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কেউ নোবেল পুরস্কার পাবেন গবেষণালব্ধ কাজের জন্য। CENOVUS-এর মতো প্রতিযোগিতার কোনো এক বিজয়ীই হয়তো দেখা গেল সেই সম্মানের অধিকারী হতে পেরেছেন। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিযোগিতা খুবই প্রয়োজনীয়তা বহন করে।

অনুষ্ঠানটির বিশেষ অতিথি প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, ‘জে আর সি স্যার যখন বুয়েট কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক, তখন থেকেই স্যারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। স্যার বলে গিয়েছেন, “If you have integrity, nothing else matters.” প্রতিযোগিতাও একই অর্থ বহন করে। যত বেশি নিজেকে এগিয়ে রাখা যায়, ভবিষ্যতের জন্য তত তৈরি হওয়া যায়।’

ইউএপির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন জি আর আহমেদ জামাল বলেন, জে আর সি স্যার মারা যাওয়ার পাঁচ বছর পর এসেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট তাঁর রেখে যাওয়া ঐতিহ্য ও পদচিহ্নকে ধারণ করেছে। গুরুকে অনুসরণ করার এই দৃষ্টান্ত বর্তমান সময়ে নজিরবিহীন বটে। Cenovus নামের সঙ্গে 1.0 সংখ্যাটি একটা লক্ষ্য প্রকাশ করছে, যা আগামী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে এই আয়োজনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় বহন করে।

CENOVUS 1.0-এর আয়োজন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করেছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক কর্তৃপক্ষ ও ইউএপি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস ফোরাম (সিইএসএফ) এবং সহযোগী হিসেবে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের সহশিক্ষা কার্যক্রমের সহায়ক ৯টি ক্লাব, যথাক্রমে ACI-UAP স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার, এনভায়রনমেন্ট ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ক্লাব, জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, সিই ম্যাথ ক্লাব, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব, আর্ট ও ফটোগ্রাফি ক্লাব, সিই কালচারাল ক্লাব-চিহ্ন, সিই স্পোর্টস ক্লাব।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও পুরকৌশল বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান ভাগাভাগি করে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো আয়োজনটি সফল হয়েছে, যা আগামী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ